ওয়েব সিরিজ ‘লজ্জা’ (Lojja) তে প্রথম সিজনেই দর্শকের মন জয় করেছিলেন ‘প্রিয়াঙ্কা সরকার’ (Priyanka Sarkar)। ‘জয়া’ নামের এক অতিসাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির বউয়ের চরিত্রে তাঁর সংযত অভিনয় এবং নিঃশব্দ প্রতিবাদ যেন বাস্তব জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। সেই চরিত্রই এবার ফিরে এসেছেন নতুন গল্পে, নতুন দ্বন্দ্বে নিয়ে। ‘লজ্জা ২’ (Lojja 2)-এর ট্রেলারে স্পষ্ট, এবার শুধু মানসিক যন্ত্রণা নয়, লড়াইটা নিজের অস্তিত্ব বাঁচানোর।
অদিতি রায় পরিচালিত এই সিরিজের দ্বিতীয় অধ্যায়ে নতুন মোড় এনে দিয়েছেন অভিনেতা ইন্দ্রাশিস রায়। জয়ার জীবনে তিনি নতুন এক পুরুষ, কিন্তু সেই পুরুষও কি তার সম্মান ফিরিয়ে দেবে? নাকি আবারও এক অদৃশ্য দ্বন্দ্বের জন্ম নেবে? প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, এই গল্পটা শুধুই কোনও এক গৃহবধূর নয়, এটা এমন অনেক মেয়ের, যারা দিনের পর দিন মানসিক নির্যাতনের শিকার হলেও চুপ করে থাকেন, তাদের কণ্ঠ হয়ে উঠতেই জয়ার আবির্ভাব।
এদিন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের প্রিয়াঙ্কার বলেন, “সব সহ্য করতে করতে এক সময় নিজেকেই ভুলে যায় মেয়েরা।” এই ‘ভুলে যাওয়া’কে থামানোর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি নিজেই। তাঁর মতে, মনের উপর হওয়া আঘাত অনেক বেশি গভীর, অনেক বেশি নিঃশব্দ। জয়ার মধ্য দিয়ে সেই নিঃশব্দ চিৎকারকে গলা দেওয়াই ছিল তাঁর লক্ষ্য। তিনি বলেন, “গায়ে হাত না দিয়েও আঘাত করা যায়, সব ক্ষতের তো কালশিটে পড়ে না,
ফলে এগুলো বোঝা আরো কঠিন হয়ে পড়ে”। এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন এই সিরিজের মূলত ‘ভার্বাল অ্যাবিউজ’কে প্রাধান্যে দেওয়া হয়েছে। অভিনেত্রী জীবনে এমন ‘ভার্বাল অ্যাবিউজ়’ এর ঘটনা আছে কিনা সেই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, “ছোটবেলা থেকেই অনেক কথা শুনতে হয়েছে তবে মা-বাবা কোনদিনই আমাকে সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণায় বেধে দেননি। পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে অনেকবার শুনেছি,
মেয়ে হয়ে কেন ছেলেদের মতো জামা কাপড় পড়বে।” ব্যক্তি জীবনে তিনি এক পুত্র সন্তানের মা, তাকে কিভাবে সামাজিক সমতার পাঠ করাচ্ছেন জানতে চাওয়া হয়। অভিনেত্রী বলেন, “আমরা নিজেরাই ছেলেদের মেয়েদের থেকে আলাদা করে রেখেছি এসব বলে যে ‘ছেলেরা কখনো কাঁদে না’, আরো অনেক উদাহরণ আছে। তবে আমার মনে হয় এলজিবিটিকিউ এর যুগে দাঁড়িয়ে কারোর লিঙ্গ চিহ্নিত করে দেওয়া,
অথবা সামাজিক সমতার পাঠ পড়ানো একেবারে অনুচিত। সে নিজে নিজের পথটা ঠিক খুঁজে নেবে। তবে চারিদিকের পরিবেশটা যেন স্বচ্ছ হয়।অভিনেত্রী তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে মুখচোরা ছিলেন এবং অন্যায় সহ্য করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি শিখেছেন নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষায় প্রতিবাদ করতে। তিনি জানান, “যখন আমার মনে হয়েছে এরপর হয়তো আমার আত্মসম্মানে আঘাত লাগছে।
আর নিতে পারব না, তখনই আমাকে বলতে হয়েছে।” ‘লজ্জা ২’ শুধুমাত্র এক নারীর শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতনের গল্প নয়—এটা ক্ষমতার অমানবিক চেহারারও এক নগ্ন রূপ। যেখানে আবেগ, ভয়, ভালোবাসা সবকিছুর উপর দাঁড়িয়ে থাকে এক অসম সম্পর্ক। প্রিয়াঙ্কা মনে করেন, এই গল্প সমাজকে আয়নার সামনে দাঁড় করায়—যেখানে প্রশ্ন করা যায়, ‘সহ্য করাটাই কি নারীত্ব?’
আরও পড়ুনঃ শুভলক্ষ্মীর সঙ্গে বাড়ি ফিরল আদৃত! পরিবারকে পেয়েও স্মৃতি ফিরল না আয়ানের! আগামী দিনে কি হতে চলেছে গৃহপ্রবেশে?
প্রিয়াঙ্কা সরকারের ‘লজ্জা ২’ হইচই-র পর্দায় কবে আসছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কৌতূহল তুঙ্গে। কিন্তু স্পষ্ট একটাই—এই গল্প বিনোদনের বাইরেও অনেক কিছু বলার আছে। যাদের জীবন একইরকম নিঃশব্দ যন্ত্রণায় ভরা, তাদের জন্য এই জয়ার গল্প হতে পারে সাহসের আর এক নাম।