“অভিনেত্রী বলেই প্রতিমাসে পিরিয়ডস হয় না, বাইজিদের মতো নাচ!” –সফল অভিনেত্রী হয়েও ইন্ডাস্ট্রিতে কটাক্ষের শিকার অভিনেত্রী সঞ্চারী মণ্ডল!

বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ ‘সঞ্চারী মণ্ডল’ (Sanchari Mondal)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন ধারাবাহিকে কাজ করছেন, তবে শুধু পর্দার সামনেই নয়, তাঁর জীবনও যেন এক গল্পের মতো। অন্যদিকে, ‘সঙ্গীত তিওয়ারি’ (Sangit Tewari) ‘মীরাক্কেল’-এর প্রতিযোগী থেকে শুরু করে টেলিভিশনের জনপ্রিয় শো ‘দাদাগিরি’ ও ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এর মেন্টর এবং পরিচালক হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাত পাকে বাঁধা পড়েন দুজন, তারপর থেকে একসঙ্গে পথ চলছেন।

সম্পর্কের ভিত্তি যতটা প্রেম, ততটাই পাহাড়ের প্রতি ভালোবাসা। নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছেন সংসার, পাহাড়ের কোলে কিনেছেন একটি হোমস্টে, যেখানে প্রকৃতির মাঝে কাটে তাঁদের সুখের দিনগুলো।সঞ্চারী ও সঙ্গীতের প্রেমের গল্পও বেশ সিনেমাটিক। ২০১৭-১৮ সালের দিকে ‘অপুর সংসার’ রিয়েলিটি শোয়ের সেটে প্রথম দেখা তাঁদের। সঞ্চারী তখন ক্যামেরার সামনে, আর সঙ্গীত ক্যামেরার পিছনে। প্রথম দিকে খুব বেশি কথা না হলেও একদিন শিবরাত্রির রাতে একসঙ্গে বাড়ি ফেরার সময় তাঁরা শিব মন্দিরে গিয়ে জল ঢালেন।

সেই মুহূর্তই যেন তাঁদের সম্পর্কের বীজ বুনে দেয়। এরপর বেশ কিছুদিন যোগাযোগ না থাকলেও হঠাৎ একদিন এক ক্লাবে দেখা হয়ে যায়, তখনই সঙ্গীত মনের কথা জানায়। কিন্তু সঞ্চারী সময় নষ্ট না করে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন! মাত্র এক মাসের মধ্যেই তাঁদের বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। তবে সঞ্চারীর স্বপ্ন ছিল, যেহেতু শিব তাঁদের মিলিয়ে দিয়েছেন, তাই শিবকে সাক্ষী রেখেই তাঁদের বিয়ে করবেন কোনও এক পাহাড়ে। সেই কারণে ছয় মাস ধরে খুঁজে বের করা হয় এক বিশেষ মন্দির, যা অবশেষে মেলে ডুয়ার্সের বর্ডারে।

সেখানেই সাত জন্মের বন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা, আর আজও প্রতি বছর সেই মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। তবে সঞ্চারীর জীবন সবসময় এত সহজ ছিল না। তিনি এমন এক পরিবারে বড় হয়েছেন, যেখানে মেয়েদের স্বাধীনতা ছিল খুবই সীমিত। তাঁর মা সংস্কৃতিমনস্ক ছিলেন এবং মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই নাচ-গান শেখাতেন। কিন্তু পরিবারে অনেকেই এটাকে ভালো চোখে দেখেননি। মেয়ের নাচ শেখাকে ‘বাইজিদের মতো’ কাজ বলে কটাক্ষ করা হয়েছিল, এমনকি তাঁর মা-ও কম অপমানের শিকার হননি।

এরপর টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ পাওয়া, নিজের পরিচিতি তৈরি করা— সবই ছিল কঠিন লড়াইয়ের ফসল।আজ তিনি সফল, কিন্তু কটাক্ষ ও সমালোচনা যেন তাঁর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিবারের কিছু সদস্য আজও তাঁকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। সমাজের একাংশেরও ধারণা, যেহেতু তিনি অভিনয় করেন, তাই তাঁর জীবনে কোনো কষ্ট নেই, কোনো দুঃখ নেই। এমনকি একজন নারী হিসেবেও যে তাঁর নিয়মিত পিরিয়ডের কষ্ট বা মানসিক চ্যালেঞ্জ থাকে, সেটাও অনেকেই বুঝতে চান না।

আরও পড়ুনঃ “এত সুন্দর মানুষ, তুমি কী করলে মা? তোমাকে ক্ষমা করব না!” জিতের জন্য আজও নিজের মা স্বস্তিকাকে ক্ষমা করেননি মেয়ে অন্বেষা

সঞ্চারীর মতে, মানুষ শুধু তাঁর সুন্দর ছবিগুলো দেখে, কিন্তু সেই সুখের মুহূর্ত তৈরির পেছনে যে কতটা কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়েছে, সেটা কেউ বোঝে না।তবে সব বাধা পেরিয়ে আজ তিনি জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রেখেছেন। সঙ্গীতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শুধুই দাম্পত্য নয়, বরং একসঙ্গে স্বপ্ন দেখা এবং তা পূরণ করার লড়াই। পাহাড়ের কোলে নিজেদের ভালোবাসার ঠিকানা গড়ে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভালোবাসা শুধু কথার বিষয় নয়, বরং তা টিকিয়ে রাখার এক নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস।