“সত্য বলার শাস্তি পাচ্ছি, সরকারের ভুল বলেছি বলেই আজ এই হাল!” “আমি তো ওদের পক্ষের মানুষ না, কেন সরকার আমার খোঁজ নেবে?”— অসুস্থ শরীরে লাঠির ভরসায় দিন কাটাচ্ছেন একসময়ের খলনায়ক, তবু সরকারের খোঁজ নেই! মুখ খুললেন অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়!

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যাঁদের নাম একবার উচ্চারণেই দর্শকের মনে শিহরণ জাগে, তাঁদের মধ্যে অভিনেতা ‘বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়’ (Biplab Chatterjee) একজন। একসময় পর্দায় তাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল আত’ঙ্কের ছায়া, চোখের এক ঝলকেই তিনি যেন দর্শকের ঘৃ’ণাকে নিজের অভিনয়ের সাফল্যে রূপান্তরিত করতে পারতেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবি দিয়ে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক অনন্য পরিচয়— সেই কঠোর, নির্মম খলনায়ক, যিনি গল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত দর্শককে ভয় আর কৌতূহলে বেঁধে রাখতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলেছে সবটা, আলোয় থাকা সেই মানুষটিই আজ হোঁচট খাচ্ছেন জীবনের বাস্তব মঞ্চে!

কিছুদিন আগেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছিল, লাঠির ভরসায়ও সোজা দাঁড়াতে পারছেন না বিপ্লব। হাঁটতে গেলেও দু’জনকে সাহায্য করতে হচ্ছে, চোখেমুখে ক্লান্তি স্পষ্ট। যাঁকে একসময় মানুষ সিনেমা হলে বসে গালা’গাল দিয়েছে চরিত্রের জন্য, আজ তাঁকে দেখে চোখ ভিজে যাচ্ছে সেই দর্শকদেরই! জীবনের এই নির্মম রূপই যেন তাঁর দীর্ঘ অভিনয়যাত্রার সবচেয়ে তিক্ত অধ্যায়। তবু নিজের অবস্থার জন্য তিনি কোনওদিন করুণা চাননি, বরং একরাশ দৃঢ়তায় মেনে নিয়েছেন নিজের বাস্তব।

অভিনেতার মতে, তাঁর জীবনের প্রতিটি পর্বই ছিল সংগ্রামের। থিয়েটার থেকে সিনেমা, আবার সেখান থেকে রাজনীতির ময়দান— সর্বত্র তিনি ছিলেন নিজের মতো স্পষ্টভাষী। একসময় কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ভোটের ময়দানে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেই রাজনৈতিক সচেতনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার স্বভাবই পরবর্তীতে অনেক পরিচালক-প্রযোজকের কাছে কাজ পাননি তিনি। আজও নিজের মেরুদণ্ড না ভেঙে, কারও কাছে মাথা না নত করেই এগিয়ে চলেছেন। তারই ফল আজ হয়তো এই নিঃসঙ্গতা, কাজের অপ্রাচুর্য।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তাঁর এই কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও সরকার কি কখনও খোঁজ নিয়েছে, তখন তাঁর উত্তর ছিল কাঁটায় মোড়া বাস্তবের মতোই তীক্ষ্ণ। তিনি বলেছিলেন, “কেন সরকার আমার খোঁজ নেবে? আমি তো ওদের পক্ষের মানুষ নই। আমি সরকারের ভুলগুলো বলব, যেমন একসময় নিজের দলের ভুলগুলোও বলেছি। কিন্তু সত্যি কথা সহ্য করা কঠিন, সবাই পারে না!” এই কয়েকটি বাক্যই যেন তাঁর সমগ্র জীবনের প্রতিচ্ছবি ধরা পড়েছে, যেখানে অন্যায়ের সঙ্গে আপসের জায়গা নেই, আছে কেবল সত্য বলার সাহস!

আরও পড়ুনঃ “নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরই নেওয়া উচিত, সমাজের বাধা মানলে জীবন নষ্ট!” — বি’স্ফোরক মন্তব্য ‘চিরসখা’-র কমলিনীর, দীর্ঘ দাম্পত্যে ভাঙনের কারণ টেনে সমাজের মূল্যবোধকেই প্রশ্ন করলেন অভিনেত্রী অপরাজিতা ঘোষ দাস!

নিজের অবস্থাকে তিনি কখনও দুঃখ বা অভিমান দিয়ে ব্যাখ্যা করেন না। বরং বলেন, তাঁর বাবা-মা শিখিয়েছিলেন সত্যিই সবচেয়ে বড় শিক্ষা— মুখে যা আছে, মনের মধ্যেও যেন তাই থাকে। এই সহজ অথচ অটল বিশ্বাসই আজও তিনি অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখেন। বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় হয়তো এখন আগের মতো আলোয় নেই, কিন্তু তাঁর স্পষ্টবাদিতা আর মাটির কাছাকাছি থাকা মনোভাবই তাঁকে করে তুলেছে টলিউডের এক চিরকালীন চরিত্র— যে বাস্তবেও নিজের সংলাপ গুলো বলে যায় নির্ভয়ে, বিনা অভিনয়ে।

You cannot copy content of this page