টলিউডে ‘গুপি শুটিং’-এর ঘটনা আজ আর নতুন কিছু নয়। পরিচালকেরা যখন ফেডারেশনের নির্ধারিত নিয়মের বাইরে গিয়ে গোপনে কোনও ছবি বা কাজের শুটিং করেন, তখনই তা ‘গুপি শুটিং’ নাম পায়। এমন শুটিংয়ে অনেক সময় পুরো ইউনিটকে ‘ইউটিউব কনটেন্ট’ বা ‘সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য বানানো রিল’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, এই মাধ্যমগুলোর জন্য শুটিং করলে ফেডারেশনের অতিরিক্ত নিয়ম-কানুন বা টেকনিশিয়ান নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে না। ফলে ফেডারেশনের চোখ এড়িয়ে খরচ বাঁচিয়ে কাজ করাটা অনেক পরিচালকের কাছেই হয়ে উঠছে একটা বিকল্প পথ।
রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক ছবির শুটিং নিয়েও এমনই চর্চা শুরু হয়েছে। আইফোনে শুট করা সেই ছবি আপাতত ‘ইউটিউবের জন্য’ বলেই প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু টলিউডের অন্দরের খবর বলছে, আসলে সেটি বড়পর্দারই প্রজেক্ট! পরিচালকের দলও নাকি সেই তথ্য চেপে রাখছে, যাতে সংগঠনের নজরে না পড়ে। শুটিংয়ের একটি পর্যায় হয়েছে উত্তরাখণ্ডে, যেখানে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিল গোটা ইউনিট। কেন্দ্রীয় বাহিনির সহায়তায় কোনওক্রমে সেখান থেকে ফিরে আসেন অভিনেতা-অভিনেত্রী ও অন্যান্য টিম মেম্বাররা।
এমন পরিস্থিতিতেও গোপনে শুটিং চালিয়ে যাওয়া নিয়ে অনেকেরই মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ফেডারেশনের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, কোনও ছবি বা সিরিজের শুটিংয়ে কতজন ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যান, ট্রলি অপারেটর ইত্যাদি নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু পরিচালকদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি লোকজন চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে প্রযোজকের খরচ বেড়ে যায় অপ্রয়োজনে। এই খরচ বাঁচাতেই ‘গুপি শুটিং’-এর পথ বেছে নেন কেউ কেউ।
যদিও এভাবে কাজ করাটা একদিকে যেমন নিয়মের উলঙ্ঘন, অন্যদিকে আবার নিরাপত্তার দিক থেকেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত যখন শুটিং হয় দুর্যোগপ্রবণ এলাকায়। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত পরিচালক রিঙ্গো এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। অভিনেতা গৌরব চক্রবর্তী এবং প্রিয়াঙ্কা সরকারও এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে পরিচালকদের গিল্ডের এক সদস্য জানিয়েছেন, ইউটিউবের জন্য তৈরি কনটেন্ট ফেডারেশনের নিয়মের আওতায় পড়ে না, যদি সেটা সত্যিই ইউটিউবের জন্য হয়।
আরও পড়ুনঃ “উনি তো আত্মাদের নিয়ে ওঠাবসা করতেন…মুখের অভিব্যক্তিও চেনা যেত না, আগেই জেনে গেছিলেন মৃ’ত্যু আসন্ন!”— পডকাস্টে অকপট সুপারস্টার জিৎ! অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতা নিয়ে অভিনেতার চাঞ্চল্যকর দাবি, হতবাক নেটপাড়া! কার প্রসঙ্গে এমন কথা বলেন তিনি?
এখানেই প্রশ্ন উঠছে– যদি সত্যিই ছবি বড়পর্দার জন্য হয়, তবে তাকে ইউটিউব কনটেন্ট বলে চালিয়ে দেওয়া কি নৈতিকভাবে ঠিক? নিয়ম মেনে কাজ করা পরিচালক ও কলাকুশলীরা যদি অতিরিক্ত বোঝা বহন করে থাকেন, আর কেউ যদি চুপিচুপে নিয়ম ভেঙে পার পেয়ে যান, তবে বাকি সবাই কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? যদিও শিল্পী বা পরিচালকরা বারবার বলছেন, তারা ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নয়, শুধু চাইছেন যুক্তিসঙ্গত নিয়ম ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ। কিন্তু যখন শিল্পের চেয়ে নিয়মরক্ষার দ্বন্দ্ব বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবার!