টলিউডে এমন কিছু মুখ আছে, যারা শুধুমাত্র অভিনয়ের জন্য নয়, নিজের মত প্রকাশের সাহসের জন্যও আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। ‘দেবলীনা দত্ত’ (Debolina Dutta) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি কখনোই নিজের মতামত প্রকাশে ভয় পান না— সেটা হোক রাজনীতি, সমাজ বা ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ কোনও বিষয় নিয়ে। একসময় রাজ্যের শাসকদলের নীতির সমালোচনা করায় একঘরে হতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে। নিজের অবস্থান থেকে তিনি পিছিয়ে যাননি, বরং আরও দৃঢ়ভাবে নিজের মত প্রকাশ করেছেন, যা তাঁকে অনেকের কাছে সাহসী, আবার অনেকের কাছে বিতর্কিত করে তুলেছে।
অভিনয় জগতে দেবলীনার যাত্রা সহজ ছিল না, কিন্তু তিনি কখনোই সেটাকে ‘সংগ্রাম’ বলে দেখতে চান না। তাঁর যুক্তি, “দুঃখ স্মৃতির মেয়াদ কিন্তু খুব কম। ইন্ডাস্ট্রিতে এসেই তো আর মূল চরিত্র বা মুখ্য চরিত্রের সুযোগ সবাই পায় না। যাঁরা পায় না, তারা ঘষ্টে ঘষ্টে অনেক বছর ধরে জায়গা বানানোর চেষ্টা করছে।” তবে তাঁর দৃষ্টিতে এটাকে সংগ্রাম নয়, বরং নিজের প্যাশনের পথে হাঁটা। তিনি বলেন, “আমি বলছি, এটা আমার প্যাশন। এবার এটা যদি সত্যিই আমার প্যাশন হয়, তবে সেই ইচ্ছাকৃতভাবে বেছে নেওয়া প্যাশনটা, যেটাকে আমি উপার্জনের পথ ভেবেছি…
সেটাকে ফলো করার জন্য যে যে পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে আমায় যেতে হচ্ছে, কেন সেটাকে স্ট্রাগল বলছি?” প্রসঙ্গত, বর্তমান প্রজন্মে একটা নতুন ধারা খুব স্পষ্ট আজকাল, কেউ একটু প্রতিষ্ঠা পেলেই নিজের স্ট্রাগল নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। দেবলীনা এই বিষয়টা নিয়ে বেশ আলাদা ভাবনা পোষণ করেন। তাঁর মতে, যেটা নিজে পছন্দ করে করা হচ্ছে, সেটা কঠিন হলেও ‘স্ট্রাগল’ নয়। তিনি বলেন, “এটা তো আমার প্যাশন, আমি তো যেচেই এটা করতে চেয়েছি! আমাকে তো কেউ মাথার দিব্যি দিয়ে বলেনি যে অভিনয় করো?”
এই প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তের দায় নিজের আর প্যাশনকে পেশা হিসেবে বেছে নিলে কষ্ট আসবেই, কিন্তু সেটাকে করুণা বা সংগ্রাম হিসেবে দেখা ভুল! দেবলীনার এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে অন্য অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর থেকে আলাদা করেছে। তাঁর কথায় একটা বাস্তববোধ আছে, আবেগ নয়। তিনি জানেন, অভিনয়ের দুনিয়ায় প্রতিযোগিতা ভয়ানক, সুযোগও কম, কিন্তু সেই বাস্তবতার মধ্যে থেকেও তিনি হতাশ হন না। তাঁর মতে, “চাইলেই আমি দশটা-পাঁচটার অফিস করতে পারতাম।
আরও পড়ুনঃ “নতুনরা চারিদিকে যন্ত্র লাগিয়ে গান বানাচ্ছে, আমি গানটা নিজের মুখ আর গলা দিয়েই করি!” “ওদের সঙ্গে কম্পিটিশন নেই, আমার গান দিয়ে ভিউ পাচ্ছে!”— আধুনিক গানের যান্ত্রিকতা প্রসঙ্গে নতুন প্রজন্মের গায়কদের নিয়ে বিস্ফো’রক মন্তব্য অভিজিৎ ভট্টাচার্যর!
কিন্তু আমি আমার পছন্দের জিনিসটাই করছি, অভিনয়েই তো করছি! তাহলে কেন কথায় কথায় স্ট্রাগল প্রসঙ্গ আসছে?” কথাটা সহজ অথচ অনেক গভীর। দেবলীনা দত্ত এমন এক শিল্পী, যিনি নিজের অভিজ্ঞতাকে গৌরবের সঙ্গে বহন করেন, দুঃখ বা হতাশা হিসেবে নয়। তিনি প্রমাণ করেছেন, নিজের পথ নিজে বেছে নেওয়া মানে শুধু সাহস নয়, নিজের প্রতি দায়বদ্ধতাও। তাই হয়তো তাঁর প্রতিটি বক্তব্যে একটা দৃঢ়তা থাকে, যা অন্যদের ভাবায়— হয়তো সত্যিই ‘স্ট্রাগল’ শব্দটা আমরা অনেক সময় খুব সহজেই ব্যবহার করে ফেলি, অথচ সেটার অর্থ দেবলীনার মতো কেউ কেউ আমাদের নতুন করে শেখাতে পারেন।






