টলিউডের জনপ্রিয় মুখ ‘সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়’ (Sagnik Chatterjee), যিনি একদিকে খলনায়ক হিসেবে দর্শকদের ঘৃণা কুড়িয়েছেন, আবার অন্যদিকে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে তাদের ভালোবাসাও জিতে নিয়েছেন। ছোট থেকেই তাঁর মনে ছিল একটাই স্বপ্ন— বড় পর্দায় হিরো হবেন। মিঠুন চক্রবর্তী ছিলেন তাঁর বড় প্রেরণা, তাই তাঁর মতোই সাজপোশাক রাখতেন তরুণ বয়সে। বাবা চেয়েছিলেন ছেলেও ব্যবসার জগতে পা রাখুক, কিন্তু সাগ্নিকের মন টানত পর্দার দুনিয়ায়। তাই পড়াশোনা মাঝপথেই ছেড়ে দিয়ে পা বাড়ান অভিনয়ের পথে।
আজ তাঁকে সিনেমা ও ধারাবাহিক, দুই মাধ্যমেই সমানভাবে দেখা যায়। সাম্প্রতিক কালে ‘একেন বেনারসে বিভীষিকা’ ছবিতে তাঁর অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এই পথ মোটেও সহজ ছিল না। কিছুদিন আগেই অভিনেতা খোলাখুলি জানিয়েছিলেন, কীভাবে হিরো হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে টলিউডে প্রবেশ করেও শেষ পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতির কাছে হার মেনে ভিলেনের চরিত্রে ঢুকে পড়তে হয়েছিল। তবে ভাগ্যের সেই মোড়ই যেন তাঁকে আলাদা করে গড়ে তোলে।
দর্শকরা তাঁকে খলনায়ক হিসেবেই বেশি ভালোবেসেছেন, তাঁর অভিনয় দক্ষতাই তাঁকে এনে দিয়েছে একের পর এক পুরস্কার ও সম্মান। যাঁরা সাগ্নিককে কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা জানেন তাঁর সহজ-সরল মানসিকতা। সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার, নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ক্ষমতা, কিংবা যেকোনও চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে মিশে যাওয়ার দক্ষতা— সবই তাঁকে আলাদা করে তোলে। একবার সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছিলেন, শিল্পী হিসেবে সবচেয়ে বড় কাজ হলো চরিত্রকে নিজের মতো করে বাঁচানো, সেটা হিরো হোক বা ভিলেন।
তবে জীবনের মঞ্চে সব সময় আলোই ছিল না। ২০০৪ সালে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। সেই সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রাক্তন স্ত্রী তাঁকে একরকম চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি সন্তানদের মানুষ করে তুলতে পারবেন না। এমনকি মা হয়েও সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। সেই আঘাত পেরিয়ে একা হাতে সন্তানদের বড় করে তুলেছিলেন অভিনেতা, যা আজ অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার গল্প।
আরও পড়ুনঃ “ঠাস করে চড়, মুখে জুতো খুলে মারব…সাহস থাকলে সামনে এসে বলুন!” “মায়ের কষ্ট ১০% ও দেখেননি, এই কথা মেনে নেব না!”— মায়ের জন্য আনা গয়না নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য, তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সায়ক! কটাক্ষ করে দেখালেন জুতো, গহনার রসিদ থেকে স্ক্রিনশট! নিন্দার ঝড় সমাজ মাধ্যম!
বছরের পর বছর কেটে গেছে। ২০১৮ সালে যখন মেয়ে জার্মানিতে পিএইচডি করার সুযোগ পেল, সাগ্নিকের চোখে জল এসে গিয়েছিল। তিনি বলেন, “সেদিন ফোন করে মেয়ের সঙ্গে প্রাক্তন স্ত্রীর কথা বলিয়েছিলাম। একদিন আমাকে বলেছিল যে, আমি মানুষ করতে পারব না আর সেদিন মেয়ে আমার হয়ে উত্তরটা দিয়ে দিয়েছে। আমি শুধু তাঁকে একটা কথাই বলেছিলাম, এবার খুশি তো?” তাঁর এই কথাতেই যেন লুকিয়ে আছে এক বাবার গর্ব, যিনি নিজের জীবনের দুঃখ ভুলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলেছেন একা হাতে।