মাধুরী-হেমা-রজনীকান্তের পর এবার বাংলা! ভক্তদের চোখে দেবীর আসনে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, বিনোদিনী থিয়েটারে অদ্ভুত এক পূজার সাক্ষী শহরবাসী!

ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে প্রিয় তারকাকে ‘দেবতা’ করে মানার রেওয়াজ নিতান্ত নতুন নয়। বলিউড-দক্ষিণী থেকে শুরু করে সংগীতজগত—অমিতাভ থেকে রজনীকান্ত, লতা থেকে মাধুরী—ভক্তির নানা রূপ বহুবার দেখেছে দেশ। এবার সেই ঢেউ এসে ঠেকল টলিউডেও। বাংলার ‘লেডি সুপারস্টার’ শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘিরে অনুরাগীদের উচ্ছ্বাস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শহরের এক ঐতিহাসিক মঞ্চে দেখা গেল ভক্তির এক অভিনব প্রকাশ। কী ঘটল ঠিক? সেখানেই শুরু আসল কৌতূহল।

উত্তর কলকাতার থিয়েটারপাড়ায় বহুদিন ধরেই গুঞ্জন—সাম্প্রতিক কাজের দাপটে শুভশ্রীর জনপ্রিয়তা নতুন উচ্চতায়। ‘পরিণীতা’ পর্ব পেরিয়ে একের পর এক ভিন্নসুরের চরিত্রে বাজিমাত করে চলেছেন তিনি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-তে নটী বিনোদিনীর ছায়া যেমন আলোচনায়, তেমনই সামনে আসছে ঐতিহাসিক নারী-চরিত্র ‘রায়বাঘিনী ভবশঙ্করী’-র প্রস্তুতিও। এই ‘ধূমকেতু’ গতির উচ্ছ্বাস নিয়েই হঠাৎ এক সন্ধ্যায় থিয়েটারমুখী দর্শকরা দেখলেন, ব্যতিক্রমী এক আয়োজন শুরু হয়েছে মঞ্চের সামনেই।

‘বিনোদিনী’ থিয়েটারের প্রবেশদ্বারে শুভশ্রীর পোস্টারের সামনে ভক্তদের একাংশ দুধ ঢেলে ‘দুধাভিষেক’ করলেন—স্লোগান উঠল, “জয় মা শুভশ্রী!” কেউ আবার পোস্টারে ফুলও অপর্ণ করলেন। টলিউডে সুপারস্টারদের প্রথম দিনের শো ঘিরে যে উন্মাদনা দেখা যায়, তারই একটি অধিক ভক্তিমুখী সংস্করণ যেন ধরা দিল সেদিন। দেব-জিতের ছবি ঘিরে যেমন আগে ‘ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো’-তে আবেগে ভেসেছে শহর, তেমনই এবার শুভশ্রীকেও ঘিরে সেই আবেগের তীব্রতা চাক্ষুষ হল মঞ্চের বাইরে—অনেকে বললেন, “তারকাকে ভালোবাসা মানে এটাই, আমাদের ব্যক্তিগত ভক্তি।”

উত্তরের সূত্র মেলে কাজেই। ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-তে নটী বিনোদিনীর মতো জটিল চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন শুভশ্রী; ‘গৃহপ্রবেশ’-এ তাঁর সংযত পারফরম্যান্সও আলোচনায়। সামনে অদিতি রায়ের সিরিজে তিনি ক্রাইম জার্নালিস্ট—অন্য স্বাদ। পনেরো বছরের কেরিয়ারে বাণিজ্যিক ছবিতে দেব-জিতের সঙ্গে হিট দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ছকভাঙা চরিত্রে নিজের অভিনয়-পরিসর বাড়িয়েছেন—দেবালয় ভট্টাচার্যের ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এ তাঁর রূপান্তর ছিল দৃষ্টান্ত। তালিকায় ‘বিসমিল্লাহ’, ‘ধর্মযুদ্ধ’, ‘সন্তান’, ‘হাবজি গাবজি’-র মতো কাজও আছে। ডিগ্ল্যাম, বয়স-ভিত্তিক চরিত্র, মায়ের ভূমিকা—প্রয়োজনে নিজের তারকাখোলস ভেঙে নতুন ত্বকে হাজির হওয়ার সাহসই তাঁর প্রতি আস্থাকে টেকসই করেছে।

আরও পড়ুনঃ “ছোট থেকে একা হাতে মানুষ করেছিলেন আমায়…”— স্বাধীনতা দিবসের দিনই মাতৃহারা অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়!

ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তারকা-পূজা এক সাংস্কৃতিক বাস্তবতা—কখনও অনুরাগ, কখনও অনুপ্রেরণা। ‘বিনোদিনী’ থিয়েটারের সামনের ঘটনাটি সেই ধারাতেই পড়ে—একদল অনুরাগীর ব্যক্তিগত ভক্তি-প্রকাশ, যেখান থেকে স্পষ্ট, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক কাজ দর্শকের মনে গভীর রেখাপাত করেছে। ধর্মীয় অনুষঙ্গ থাকলেও এর মূলে সিনেমা ও চরিত্রের প্রতি আবেগই মুখ্য। শেষ পর্যন্ত বার্তাটি একটাই—তারকার প্রতি ভক্তি যখন কাজের মানে সিলমোহর দেয়, তখন মঞ্চের বাইরে গিয়েও তৈরি হয় ‘জয় মা শুভশ্রী’-র মতো মুহূর্ত, যা শহরের সাংস্কৃতিক স্মৃতিতে আলাদা করে জায়গা চেয়ে নেয়।