ইন্দ্রাণী দত্তের কন্যা পরিচয় নয়, নিজের পরিচয়ে উজ্জ্বল রাজনন্দিনী! মায়ের স্বপ্নকে বাস্তব করতে আজ তিনি বীরাঙ্গনা রানী ভবানী! বাস্তবের আত্মবিশ্বাসী, লড়াকু রাজনন্দিনীর গল্পটা ঠিক কী?

নৃত্যশিল্পী থেকে অভিনেত্রী হিসেবে ‘রাজনন্দিনী পাল’ (Rajnandini Pal) আজ টেলিভিশন এবং সিনেমা জগতে নিজের আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কলকাতায় হলেও তাঁর শিকড় অনেক গভীরে গভীরে, বিশেষ করে সংস্কৃতির মাটিতে। ওড়িশি নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী ‘ইন্দ্রাণী দত্ত’ (Indrani Dutta) -এর কন্যা হিসেবে ছোট থেকেই ধ্রুপদী নৃত্যের সংস্পর্শে ছিলেন রাজনন্দিনী। ইংরেজি সাহিত্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পাশাপাশি, তাঁর নৃত্যচর্চা এবং পারফর্মিং আর্টসের প্রতি ভালবাসাই যেন ভবিষ্যতের অভিনয় জীবনের ভিত তৈরি করে দেয়।

২০১৮ সালে ‘উড়নচণ্ডী’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় তাঁর। সেখানে তাঁর সাবলীল অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছিল সমালোচক ও দর্শক উভয়ের। এরপর সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘এক যে ছিল রাজা’ এবং পাভেলের ‘অসুর’-এ দেখা যায় ছোট চরিত্রে, কিন্তু প্রতিটি উপস্থিতিতেই নজর কাড়েন তিনি। এরপর তিনি ‘ওহ! লাভলি’তে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে প্রমাণ করেন, রাজনন্দিনী শুধুই ‘স্টার কিড’ নন, তিনি নিজেই তাঁর পরিচয় গড়ে নিতে চান।

‘ছাদ’ ছবিতে এক আধুনিক নারীর চরিত্রে তাঁর সাবলীল অভিনয় আবারও স্পষ্ট করে দেয়, তিনি ধীরে ধীরে নিজের জায়গা শক্ত করছেন। ডিজিটাল মাধ্যমেও রাজনন্দিনীর উপস্থিতি সমানভাবে প্রশংসিত। ‘পায়েস’ সিরিজে প্রাথমিক অভিনয়ের পর, হইচই-এর জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘সম্পূর্না’ তাঁকে পৌঁছে দেয় বৃহত্তর দর্শকবৃত্তে। এরপর ‘মহালয়া’ উপলক্ষে ওটিটিতে নির্মিত বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-তে দেবী দুর্গার চরিত্রে রূপদান করে তিনি এক অভিনব পরিচিতি লাভ করেন।

এই বছরের শুরুতেই তিনি গোয়েন্দা কমেডি ‘একেন সিজন ৮’-এ কথাকলি শিল্পী পারমিতা চরিত্রে দর্শকদের মন জয় করেন। চলতি বছরের শেষ দিকে তিনি ঋত্বিক চক্রবর্তীর বিপরীতে ‘মিস্টার কোলকেতা’ নামক একটি অ্যাডভেঞ্চারধর্মী ছবিতে অভিনয় করবেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে স্টার জলসার ধারাবাহিক ‘রাজরাজেশ্বরী রাণী ভবানী’-তে তিনি ঐতিহাসিক চরিত্র ‘রানী ভবানী’র ভূমিকায় অভিনয় করছেন, যেখানে তিনি এক বীরাঙ্গনা নারীর আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের গল্প তুলে ধরছেন।

আরও পড়ুনঃ কমলিনীর পাশে সোহিনী! চন্দ্রকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করতেই থমকে গেল সবাই! অন্যন্যার মুখে ঝামা ঘষে দিল কমলিনীর দাদা! পরিবারের চোখে অপরাধী, একঘরে প্লুটো-মৌ!

এই ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় প্রমাণ করেছে রাজনন্দিনী নিছক স্টারকিডের ছায়া নন, বরং নিজেই এক সৃষ্টিশীল নারী। আর যাঁর মায়ের ফেলে আসা স্বপ্নকে তিনি নিজের পরিশ্রমে নতুন করে বাস্তব করে তুলছেন। তবে তাঁর কেরিয়ার যতটাই সুগঠিত, ব্যক্তিগত জীবন ততটাই আলোচনায় এসেছে নানা সময়ে। একসময় পরিচালক সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে তাঁর নাম জড়ায়। সে প্রসঙ্গে রাজনন্দিনীর স্পষ্ট বক্তব্য, “বয়সে সৃজিত পিতৃসম।” এই আত্মবিশ্বাসই প্রমাণ করে, রাজনন্দিনী পাল নিজের কাজ এবং মর্যাদা—দুয়েই বিশ্বাস রাখেন।