“মমতা শঙ্করের শিষ্যত্বই আমাকে আজকের লকেট বানিয়েছে!” অভিনয় জীবনে আবার‌ও ফিরতে চান অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়! বিপক্ষ দলের হওয়ায় তবে কি টলি পাড়ায় মিলছে না সুযোগ?

অভিনয় থেকে রাজনীতির মঞ্চ, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের পথচলাটা যেন এক রঙিন অধ্যায়। এক সময় যিনি ছিলেন মঞ্চ ও পর্দার পরিচিত মুখ, আজ তিনি বিজেপির নেত্রী। দুর্গাপূজার পর, লক্ষ্মীপূজার প্রাক্কালে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে লকেট খোলামেলা ভাবে তুলে ধরলেন তাঁর জীবনের নানা অজানা দিক—অভিনয়, রাজনীতি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক নিয়েও অকপটে কথা বলেছেন তিনি।

কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে উঠে আসা লকেট জানান, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরে হলেও, প্রকৃত রাজনৈতিক সক্রিয়তা শুরু হয় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর। মহিলা মোর্চার সভাপতি হিসেবে কাজ করার সময় তিনি প্রায় আড়াই হাজার মহিলা প্রার্থীকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেতাতে সাহায্য করেছেন। পরে উত্তরাখণ্ডে দলের প্রভারীর দায়িত্ব পেয়ে রাজ্য বিজেপির সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, যা তাঁর ভাষায় “একটি ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা”। শুধু উত্তরাখণ্ডই নয়, তিনি উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশেও কাজ করেছেন—আর এই সমস্ত রাজ্যের নির্বাচনী অভিজ্ঞতাই তাঁকে রাজনৈতিকভাবে পরিণত ও দক্ষ করে তুলেছে।

দলীয় কোন্দল প্রসঙ্গে লকেটের সোজাসাপটা উত্তর, “সব দলের মধ্যেই মতবিরোধ থাকে। কিন্তু বিজেপিতে জেলা থেকে বুথ পর্যন্ত একটি সংগঠিত কাঠামো আছে—এই ধাপবিন্যাসই দলকে শক্তিশালী করে।” দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী বা নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ে বাইরে যতই জল্পনা হোক, তিনি সেটিকে দেখেন দলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বাস্তবতা অন্যরকম—এখানে বিজেপি কর্মীদের নিরাপত্তা ও সংগঠনের রক্ষাই প্রথম অগ্রাধিকার, কারণ রাজনৈতিক সহিংসতা এখন নিত্যদিনের ঘটনা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও উঠে আসে সাক্ষাৎকারে। লকেট হাসিমুখে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সবসময় খুব সহজভাবে কথা বলেন। একবার উত্তরাখণ্ডের ঠান্ডায় আমার শরীর খারাপ হলে উনি নিজে খোঁজ নিয়েছিলেন। দলের কাজ হোক বা ব্যক্তিগত সমস্যা—সব কিছুই তাঁর কাছে বলা যায়। মোদিজি আমার কাছে প্রধানমন্ত্রী নন, একদম ঘরোয়া মানুষ।” তাঁর মতে, এই মানবিক দিকটাই মোদিকে বিশেষ করে তোলে।

অভিনয় থেকে আপাতত দূরে থাকলেও লকেট অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা হারাননি। বর্তমানে সাংসদ না থাকায় কিছুটা অবসর পাচ্ছেন, তাই আবারও ক্যামেরার সামনে ফেরার ইচ্ছা আছে তাঁর, তিনি জানান “ভালো প্রস্তাব এলে সিনেমা বা সিরিয়ালে ফিরবই,” । দেব, জিৎ, কোয়েলদের সঙ্গে কাজের স্মৃতি আজও তাঁর কাছে অমূল্য। পাশাপাশি হিন্দি সিনেমার শাহরুখ খান, অজয় দেবগন, দীপিকা পাডুকোন, আলিয়া ভাট—এদের কাজ তিনি অত্যন্ত পছন্দ করেন।

আরও পড়ুনঃ “দাদা একটু দেখবেন…আমাকে একটা কাজ দেবেন?”— ২৪ বছরের অভিজ্ঞতার পরেও, টলিউডে অবহেলার শিকার জনপ্রিয় অভিনেতা সুরজিৎ সেন! কাজ পেতে এখনও হাত পাততে হচ্ছে তাঁকে!

দক্ষিণেশ্বরের সারদা দেবী বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা আর নৃত্যশিল্পী হিসেবে মমতা শংকরের শিষ্যত্ব তাঁর জীবনের গঠনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। তিনি বলেন, “এগুলো রাজনৈতিক ব্র্যান্ডিং নয়, এগুলো আমার নিজস্ব ভালোবাসা।” উত্তরাখণ্ডে ঘুরতে গিয়ে রুদ্রাক্ষের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। সব মিলিয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায় আজও এক বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব—অভিনেত্রী, সাংসদ, সাংস্কৃতিক মানুষ এবং জননেত্রী। রাজনীতির মাটিতে যেমন তিনি দৃঢ়, তেমনি সংস্কৃতির জগতে তাঁর শিকড় আজও দৃঢ়। মঞ্চ হোক বা সংসদ—দুই ক্ষেত্রেই তাঁর উপস্থিতি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও উজ্জ্বল।