সিনে প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। বাংলা সিনেমার স্বর্নযুগের একজন দাপুটে এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ ছিলেন। থিয়েটার থেকে সিনেমা, নিজের অভিনয়ের মাধ্যমেই তিনি কখনও হাসিয়েছেন, কখনও করিয়েছেন আপামর বাংলা সিনেমার দর্শকদের। ১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই প্রভাবশালী অভিনেতা। অভিনয় এবং বিশেষত থিয়েটারকে ভালোবেসেই তিনি পা রেখেছিলেন অভিনয় জগতে। মূলত নান্দীকারে তার অভিনয় নজর কেড়েছিল সেই সময়কার থিয়েটার প্রেমীদের।
স্বর্ণযুগের ১৯৬৬ সালে জনপ্রিয় পরিচালক তপন সিনহার সিনেমা “গল্প হলেও সত্যি”র মাধ্যমেই বাংলা সিনেমার জগতে পা রেখেছিলেন অভিনেতা চিন্ময় রায়। সমান দক্ষতার সঙ্গে প্রায় ৬০ টির বেশী সিনমায় সেইসময়কার প্রভাবশালী অভিনেতা রবি ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। ধন্যি মেয়ে, চারমূর্তি, বসন্তবিলাপ, মৌচাক, ঠগিনী, ওগো বধূ সুন্দরী, হাটেবাজারে, ননীগোপালের বিয়ে, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেরশ্বরী, অমৃতকুম্ভরের সন্ধানে সহ একাধিক সিনেমায় তার অভিনয় মন জিতে নিয়েছে আপামর বাংলা সিনেমার দর্শকদের। এছাড়াও কৌতুক অভিনেতা নিয়েছেন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। এছাড়াও স্বর্ণযুগের স্বনামধন্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে চিড়িয়াখানা ও গুপি গাইন বাঘা বাইনে অভিনয় করে নিজের ছাপ ফেলে গেছিল অভিনয় জগতের ইতিহাসে।
স্বর্ণযুগের অভিনেত্রী জুঁই বন্দোপাধ্যায় সঙ্গে তিনি আবদ্ধ হয়েছিলেন বিবাহ বন্ধনে। সংবাদ সূত্রে খবর, “ননী গোপালের বিয়ে” চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সময় অভিনেত্রীকে দেখে মুগ্ধ হন তিনি। এই সিনেমায় চলাকালীন তিনি নিজেই প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন অভিনেত্রীকে। অভিনেত্রীকে তার প্রস্তাব স্বীকার করে নেন। তারপরই চার হাত এক হয়ে যায় তাদের। তাদের একটি ছেলে এবং মেয়েও রয়েছে। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন বেশ সুখেই চলছিল তাদের। তবে এই সুখ চিরস্থায়ী হয়নি তাদের কপালে। অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর একা হয়ে যায় তিনি। পত্নী বিরহে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি নিজেকে।
২০১৮ সালেই ছাদ থেকে পড়ে যান এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। সেইসময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলনা তার ছেলে শঙ্খ রায়। প্রতিবেশিরা লক্ষ্য করে রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার শরীর। হাত, পা সহ বুকের পাঁজরেও গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার আর এন টেগোর হাসপাতালে। যদিও সেই যাত্রায় বেঁচে গেছিলেন তিনি। যদিও তিনি কিভাবে ছাদ থেকে পড়ে গেছিলেন সেই নিয়ে এখনও কাটেনি ধোঁয়াশা। একাকি ছিল নিছক দুঃঘটনা, নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
আরো পড়ুন: ন্যাকা সূর্য আর নেকি ইরার বিবাহ সম্পন্ন! ইরা-সূর্যকে বিয়ে করতে আসতে দেখে রাতভর উৎসবে মাতল গোটা গ্রাম
তীব্র একাকিত্ব এবং কষ্টেই কেটেছিল তার জীবনের শেষ কয়েকটি বছর। অবশেষে ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ হার্ট অ্যাটাকের কারণে নিজবাসস্থানে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাংলার সিনেমায় থেকে চিরতরে বিদায় নেয় স্বর্ণযুগের অভিনেতা চিন্ময় রায়। ব্যাংক সিনেমায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তাকে আমরা সকলেই জানায় শ্রদ্ধা ও কুর্নিশ।