তিনমাস ধরে নেই কাজ! বর্তমানে ধারাবাহিকে কাছের অসহনীয় পরিস্থিতি নিয়ে অকপট অভিনেত্রী মানসী সিনহা

বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মানসী সিনহা। ধারাবাহিক থেকে সিনেমা সব কিছুতেই তার অভিনয় মন জয় করেছে দর্শকদের। গুলগী, টেকো, শুভ বিজয়া, ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি সহ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও অগ্নিপরীক্ষা, কন্যাদান, ভুতু, রেগে অনুরাগে, পটলকুমার গানওয়ালা, প্রথম প্রতিশ্রুতি, জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি, আমাদের এই পথ যদি না শেষ হয় সহ একাধিক ধারাবাহিকও করেছেন তিনি। সম্প্রতি শেষ হয়েছে জি বাংলায় তার ধারাবাহিক রাঙা বউ।

জানা গেছিল মুক্তি পেয়ে চলেছে তার সিনেমা। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এক অঘটন। আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত হন অভিনেত্রী মানসী সিনহা। বর্তমানে কেমন আছেন তিনি? কেমন ভাবে থাকছে তার দিন? একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে নিজের মনের কথা খুলে বলেছেন তিনি।

তিনি জানিয়েছেন “আমি এবং আমার স্বামীর আগে বাড়ি দক্ষিণ কলকাতায় বাড়ি কেনার সামর্থ্য ছিল না, তাই এখানে কামালগাজির ধারে একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলাম কিন্তু আমার স্বামী বলল একটু নিজস্ব মাটি থাকবে না আমাদের ছেলে মেয়েদের পায়ের নিচে সেই জন্যই বাড়ি বানানো। তবে আমরা চেয়েছিলাম বাড়িতে যেন কোনও ব্যক্তি বিশেষের ছাপ না পড়ে মানে যেন মনে না হয় এটা কোনও সেলিব্রেটির বাড়ি বা কোনও ব্যাবসায়ীর বাড়ি। এখানে কিছু মানুষ বাস করে ব্যাস। এবং আমরা অতীতকে ভালোবাসি। মানে আমার আগের প্রজন্ম, তার আগের প্রজন্ম। আমাদের বাড়িতে এখনও শিলনোড়ায় মশলা বাটা হয়।”

“এখনও আমাদের বাড়িতে বড়ি খাওয়া সবকিছুরই চল আছে। এখনও সবকিছুতেই বড়ি খাই আমরা। আমাদের এই বাইরের ছাদে আমি আচার করে শুকাই। কারণ আমরা তো এসব পেয়েছি কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন এগুলি ভুলে না যায়। তাদের মধ্যেও যেন বাঙালিয়ানা থাকে। মার্বেল, টাইল্স, কাঠের মেঝে সব জায়গায় থাকে কিন্তু এই লাল মেঝে শুধু বাঙালি বাড়িতেই পাওয়া যায়। তাই ওরা যেন বাঙালিয়ানা ভুলে না যায়। ওরাও যেন জানে যে আচার শুধু প্যাকেটে নয়, হাতেও করা যায়। আমাদের বাড়িতেও খুব বাঙালি খাওয়া দাওয়া হয়।”

আপনি কি খেতে ভালোবাসেন? তিনি জানিয়েছেন “আমি ভাত, আলু সেদ্ধ আর পোস্ত বাটা। যদি পান্তা হয় আরও ভালো, বা সেদ্ধ ভাত। আমার ওসব কায়দার খাওয়ার ভালো লাগে না। আমার বরও তাই খালি মাছের ঝোল ভাত হলেই হল। তাই অনেক ধরণের রান্নাও শিখেছি কারণ ওই রাস্তার কেমিকেল খাওয়ার তো ভালো না। নাহলে আমাদের মুটি, আচার ব্যাস।”

অভিনেতাদের রাজনীতিতে যোগ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? তিনি বলেন “আমার খুব জটিল লাগে। শিল্পে রাজনীতির কথা বলা হয়। পথনাটক থেকে সবই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শঙ্খ ঘোষের কবিতা এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। সেটা খারাপ নয়। তবে এখন আমার শিল্পী বন্ধুরা কতটা রাজনীতি বুঝে করছেন সেটা, এখন তো রাজনীতি নয় এখন স্বার্থনীতি সেটা আমার খুব জটিল লাগে। তখন বিশ্বাসটা নড়বড়ে হয়ে যায়।”

দেব তো আপনার খুব প্রিয় তাদের তার রাজনীতি থেকে চলে যাওয়া আবার ফিরে আসা নিয়ে আপনি কি বলবেন “দেব আমার কাছে খুব কাছের, যতটা দেখেছি ও খুব পরিষ্কার মনের মানুষ। ও আমায় দিদি বলে ডাকে তবে প্রত্যেকটা মানুষই তো বাইরে ভিতরে আলাদা তবে কাজের বাইরেও যতটা মিশেছি ও খুব ফোকাস ছেলে। ও নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আসেনি এবং ও স্বার্থর জন্য বেরিয়ে যায়নি। ও তো পরিষ্কার ভাবে না বলেছে সেটাই বা কয়জন বলতে পারে এবং ও ফিরে এসেছে কারণ ওর মনে হয়েছে ও গেলে লোকের সমস্যা হবে। এটা আমার মত।”

তিনি যেমন বলেছেন এমন অনেকেই বলে না সমস্যা হবে ভেবে সেই উত্তরে তিনি বলেন “আমি সত্যি বলি। আমার তো চারদিকে সমস্যা হতে পারে, প্রথমত, রাঙা বউ শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে তারপর থেকে আমার কাজ নেই তো নেই। এখন কি আমি ভাববো রাজনীতির জন্য কাজ নেই তাতো নয়। আমি এখন যেভাবে চালাচ্ছি সেইভাবেই চালাবো। দ্বিতীয়ত আমার পরিবারে কোনও সমস্যা হয়না আর তৃতীয়ত আমার মেয়েদের কেউ সমস্যায় ফেললে আমি তাকে ছিঁড়ে, আমি তার হাত ভেঙে দেব। আর শেষে আমার সামনের মানুষের ওপর নির্ভর করে সে জানে আমি সত্যি বলছি কিনা। কাজেই যদি সত্যি বলে তাহলে তাকে মেনে নিতে হবে নাহলে প্রতিবাদ করতে হবে আর তাহলেই প্রমাণিত হবে আমি সত্যি বলছি।”

আরো পড়ুন: টিআরপির প্রথম পাঁচে শুধুই জয়জয়কার জি বাংলার! টিমটিম করে জ্বলছে জলসার গীতা! আঁধারে দীপা!

তিনি এও বলেন “আমি ট্রোল হ‌ইনা, আমি সাধারণ মানুষ রাজনীতির পরিমণ্ডলে বাস করি তাই আমার প্রতিক্রিয়া থাকে। যতটা পারব সত্যি বলব আর না পারলে চুপ করে যাবে কিন্তু ভুল বলব না।” বর্তমানে ধারাবাহিক নিয়ে তিনি জানিয়েছেন “আগে বলার সুযোগ থাকত এখন কিছু বলতে দেওয়ায় হয়না। তাই বিবাদ বাঁধে। এখন কেউ সার্বিকভাবে বাঁধে না। সবাইকে তো সবটা জানতে হবে।” তিনি জানিয়েছেন “অনেক ভুল মানুষ পেয়েছিলাম তাই ছবিটা হয়নি। তবে সবটা ঠিক হয়ে গেছে। পরের বছর মুক্তি পাবে। আমিও নন্দনে অ্যাপ্লাই করব যদি হল থাকার পরও না পাই তাহলে বলব নন্দনে রাজনীতির লোকদের সিনেমা হন। আর হলে বলবনা।”

সৌরভ গাঙ্গুলিকে নিয়ে বলেন “ও একটা পাজি ছেলে আগের একবার দাদাগিরিতে বলে তোমার বুটিকের শাড়ি পরে এসেছ আর পরের বার উঠে গেছে আমি ওকে বলেছি এই নিয়ে। না সত্যিই ও খুব ভালো। যদি কেউ সিনেমা বা সিরিয়ালে ডাকে করব। এতদিন কাজ নেই তো সমস্যাটা তো একটু হবেই। আমি একটা কবিতার স্কুল খুলছি।” তিনি জানিয়েছেন আনন্দ সত্যি, ব্যর্থতাও সত্যি সবটাই আমি মেনে নিয়েছি।