“জীবনের সবকিছু ঠেকেই শিখেছি।” মায়ের থেকে বড় শিক্ষক কেউ নেই! জীবনে ঠেকে শেখাটাই সবথেকে বড় শিক্ষা বলে মনে করেন শর্মিলা ঠাকুর!

ষাট ও সত্তরের দশকে রুপোলি পর্দায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন সবার প্রিয় মুখ, যেখানে এক বঙ্গ কন্যার সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পাশ্চাত্য ছোঁয়া। তাঁর চোখের গভীরতা, মুখের দীপ্তি, আর অভিনয়ের দক্ষতা তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে সময়ের সকল অভিনেত্রীর থেকে। ‘শর্মিলা ঠাকুর’ (Sharmila Tagore) —এই নামটি শুধুমাত্র একটি নাম নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি অধ্যায়! সময়ের স্রোতে তিনি যেন এক শুধু অভিনেত্রী নন, চলচ্চিত্রের ইতিহসের এক সাক্ষী, যাঁর উপস্থিতি আজও সকলের মনে জায়গা করে আছে।

প্রায় ১৪ বছর পর ফের নিজের মাতৃভাষার ছবিতে অভিনয় করলেন শর্মিলা ঠাকুর, ছবির নাম ‘পুরাতন’ (Puratawn)। কলকাতার কাছেই গঙ্গার ধারে এক প্রাচীণ, ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে শ্যুটিং হয়েছে এই ছবির। এই পরিবেশটাই তাঁকে এই ছবিটির প্রতি আকৃষ্ট করেছিল বলে জানালেন তিনি। তবে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা যতটাই ভালো, আবার ঠিক ততটাই ছিল শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। বয়সের ভারে আজ আর আগের মতো অনায়াসে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা নামা করতে অক্ষম তিনি।

Tollywood, Bollywood, actress, Sharmila Tegore, entertainment, বিনোদন, বাংলা সিনেমা

সেই কারণেই তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, এই ছবিটিই হতে চলেছে তাঁর অভিনয়জীবনের শেষ কাজ। এখন তিনি আর হয়ত পর্দায় নিয়মিত ফিরবেন না। তবে এই শেষ ছবিতে তাঁর পাশে ছিলেন প্রযোজক এবং সহ অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শর্মিলা জানান, প্রযোজক হিসেবে ঋতুপর্ণা তাঁর প্রতি এতটাই যত্নশীল ছিলেন যে, তাঁকে কোনও চাহিদা মুখ ফুটে বলতে পর্যন্ত হয়নি। ঠিক মতন খাওয়ার এনে দেওয়া থেকে শুরু করে সময় মতন প্যাক আপ, সবকিছুই দায়িত্ব সহকারে পালন করেছেন ঋতুপর্ণ।

এই ছবির শ্যুটিং শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই শর্মিলা ঠাকুরকে ঘিরে শোনা যায় এক খারাপ খবর। শর্মিলার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে, যদিও সৌভাগ্যবশত সেটি ধরা পড়ে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটিকে নিরাময় করা গেছে। কেমোথেরাপি কিংবা রেডিওথেরাপির মতো কঠিন ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি তাঁকে। তাঁর মেয়ে সোহা জানিয়েছেন, মা এই যু’দ্ধে জয়ী হয়েছেন অনন্য মানসিক শক্তি আর আত্মবিশ্বাসে ভর করে।

আবারো সম্প্রতি ‘পুরাতন’ ছবির প্রচারে কলকাতায় এলেন শর্মিলা। শহরের আলো, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ আর দর্শকের ভালোবাসা আবার ঘিরে ধরল এই কিংবদন্তী অভিনেত্রীকে। সেখানেই একাধিক সংবামাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে উঠে আসে জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়। একটি সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানান, জীবনের সবকিছুই বোধয় তাঁর ঠেকে শেখা। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান বিয়ের আগে মা এবং বিয়ের পর শাশুড়ি মা তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ ৪০ বছরের দাম্পত্য, কিন্তু একটাও সন্তান নেই! কষ্ট আঁকড়ে কীভাবে সুখে রয়েছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়?

বরাবর স্বাধীনচেতা অভিনেত্রী প্রথম মা হওয়ার পর একবার ডাক্তারের পরামর্শে ছেলেকে ফলের রস খাওয়াতে যান, তখন শাশুড়ি মা বাধা দিয়ে বলেন তাতে একটু জল মেশাতে। অভিনেত্রী তার কথা অগ্রাহ্য করে সোজাসুজি ফলের রস খাইয়ে দেয়। তার পরিণতি হিসেবে ছেলেকে বহুদিন পেটে সমস্যায় ভুগতে হয়। অভিনেত্রী বলেন কিন্তু প্রত্যেকেই বুঝেছি কখনো কখনো অন্যের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। আর এভাবেই আমি জীবনের সবকিছু ঠেকে শিখেছি।