স্মৃতি আছে, ছবি আছে, শুধুই নেই সে! জন্মদিনে পল্লবীর ঝলমলে দিনের ভিডিও দেখে আবেগে ভাসল ভক্তরা

টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রী ছিলেন পল্লবী দে। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ছিল তাঁর গভীর ভালোবাসা। কলকাতার বুকে বড় হলেও পল্লবীর স্বপ্ন ছিল সীমাহীন। তিনি চেয়েছিলেন এমন কিছু করতে, যাতে দর্শকের হৃদয়ে তাঁর জন্য চিরস্থায়ী জায়গা তৈরি হয়। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন, কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। অভিনয়ের প্রতি তাঁর নিবেদন, অধ্যবসায় এবং প্রতিভা তাঁকে খুব অল্প সময়েই টলিউডে জনপ্রিয় করে তোলে।

সিরিয়ালের দুনিয়ায় পল্লবীর সফর শুরু হয়েছিল কিছু ছোট চরিত্র দিয়ে। কিন্তু তিনি জানতেন, নিজের প্রতিভার জোরে তিনি আরও উঁচুতে উঠতে পারবেন। এরপর এল সেই সুযোগ, যা তাঁকে এনে দেয় পরিচিতি—‘আমি সিরাজের বেগম’। সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফার চরিত্রে তিনি এতটাই মুগ্ধ করেছিলেন দর্শকদের যে, রাতারাতি হয়ে উঠেছিলেন ঘরের মেয়ে। তাঁর অভিনয়ের গভীরতা, চোখের অভিব্যক্তি, সংলাপ বলার ধরন—সবকিছু মিলিয়ে দর্শক তাঁকে মনে রেখেছে এক আবেগপ্রবণ অভিনেত্রী হিসেবে।

পল্লবী শুধু একজন ভালো অভিনেত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক অনবদ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর হাসি, প্রাণোচ্ছ্বলতা, সরলতা, বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব তাঁকে সকলের খুব প্রিয় করে তুলেছিল। সহ-অভিনেতা থেকে শুরু করে ইউনিটের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। তিনি সবসময় চাইতেন আশেপাশের মানুষজন ভালো থাকুক, হাসিখুশি থাকুক। তবে এই খুশির আড়ালে লুকিয়ে ছিল কিছু না বলা কষ্ট, কিছু চাপা কান্না, যা হয়তো তিনি কাউকে বুঝতে দেননি।

২০২২ সালের মে মাস, টলিউডের জন্য এক শোকের দিন হয়ে আসে। পল্লবীর হঠাৎ চলে যাওয়ার খবরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রি। কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, হাসিখুশি মেয়েটি আর নেই। তাঁর বাবা-মা, পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী, দর্শক—সবাই এক মুহূর্তে যেন এক গভীর শূন্যতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। পল্লবীর অকালপ্রয়াণে বাংলা টেলিভিশন এক প্রতিভাবান শিল্পীকে হারাল, যে আরও অনেক বছর দর্শকদের মন জয় করতে পারত।

আরও পড়ুনঃ জিনিয়ার মুখে ঝামা ঘষে এক হল শুভ-আদৃত! ইচ্ছাপূরণ হল না জিনিয়ার, ধুন্ধুমার পর্ব গৃহপ্রবেশে

আজ তাঁর জন্মদিনে, তাঁকে ঘিরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন তাঁর পরিবারের লোকজন এবং কাছের মানুষজন। বাবা-মা এখনও মেয়ের স্মৃতির মধ্যে বেঁচে আছেন। তাঁর ঘর, ব্যবহার করা জিনিসপত্র, ছবিগুলো তাঁদের কাছে আজও জীবন্ত। সহ-অভিনেতারা তাঁকে স্মরণ করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, শেয়ার করছেন পুরনো দিনের ছবি, মুহূর্ত। তাঁদের কথায়, পল্লবী কখনও চলে যেতে পারেন না, তিনি থাকবেন তাঁর কাজের মাধ্যমে, তাঁর স্মৃতির মধ্যে, তাঁর হাসিতে, যা আজও অনেকের কানে বেজে ওঠে।

পল্লবীর জীবনের গল্প অসমাপ্ত থেকে গেলেও, তাঁর স্মৃতি কখনও মুছে যাবে না। তিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন—সকলের হৃদয়ে, চিরকাল।