টলিউডের দীর্ঘ অভিনয়জীবনে ‘অনামিকা সাহা’ (Anamika Saha) আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। নায়িকার চরিত্র থেকে খলনায়িকা কিংবা স্নেহময়ী মায়ের ভূমিকায়, প্রতিটি জায়গাতেই তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতায় দর্শকের মন জয় করেছেন। তবে এই সাফল্যের রাস্তা সহজ ছিল না একেবারেই। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের স্বপ্ন দেখলেও সমাজের নানা কটূক্তি তাঁর পিছু ছাড়েনি। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির আপত্তিতে টানা ছয় বছর দূরে থাকতে হয়েছে অভিনয় থেকে। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালবাসা এতটাই প্রবল ছিল যে, সময় মতো সব বাঁধা পেরিয়ে আবার ফিরে আসেন রূপোলি পর্দায়।
ফিরে আসার পর একের পর এক সফল ছবির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে অনামিকা সাহা শুধু নামী নন, বরং একজন শক্তিশালী অভিনেত্রী। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের লড়াইয়ের কাহিনি তুলে ধরে অনামিকা জানিয়েছেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁকে সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবন হোক বা অভিনয়ের মঞ্চ, কোথাও তিনি সহজ পথ পাননি। তাঁর কথায়, সমাজে সৌন্দর্য ও রূপের মাপকাঠি নিয়ে বরাবরই ছিল দমবন্ধ করা মানসিকতা, যা তাঁকে অনেক সময়ই ভাবিয়ে তুলেছে।
তিনি এদিন বলেন যে, একসময় ইন্ডাস্ট্রির অনেক নায়করাই তাকে সৌন্দর্যের কারণে নায়িকা হিসাবে গ্রহণ করতে চাননি। এদের মধ্যে রঞ্জিত মল্লিকের নাম উল্লেখ করে তিনি একাধিক বি’স্ফো’রক তথ্য দিলেন! অনামিকার কথায়, “রঞ্জিত দা ভীষণ একজন ভদ্রলোক। কিন্তু প্রথম যখন আমার সঙ্গে ‘মায়ের আঁচল’ ছবিতে ওনার হিরো হিসেবে অভিনয় করার কথা উঠেছিল, উনি একটু আপত্তি জানিয়েছেন। বলেছিলেন ডিরেক্টরকে যে, ‘অনামিকা সাহাকে নিও না, অনুরাধা রায়কে নাও!’ তখন ডিরেক্টর নিজেই আপত্তি করেন, অনামিকাকেই এই চরিত্রে ভালো লাগবে বলে।
আসলে রঞ্জিত দা বরাবরই নিজে সুন্দর বলে একটু সুন্দরী নায়িকাদের পছন্দ, এবং অনুরাধার সঙ্গে অনেক ছবি করার ফলে একটা সখ্যতা আর সাচ্ছন্দ ছিল তাই আমার সঙ্গে অভিনয় করতে চাননি। এরপর প্রভাত রায়ের প্রথম বাংলা ছবি ‘প্রতিদান’ -এর সময় এরকম আরও একটা ঘটনা আছে। ছবিতে হিরো ছিলেন– ভিক্টর ব্যানার্জি, রঞ্জিত মল্লিক নাসিরউদ্দিন শাহ। ছবিটিতে শর্মিলা ঠাকুরের বাচ্চার গভার্নেস চরিত্রে আমি ছিলাম। শুটিংয়ের ফাঁকে সবাই এক জায়গায় বসতাম কিন্তু রঞ্জিত দা দূরে একটা চেয়ার নিয়ে একা বসে থাকতেন।
আরও পড়ুনঃ সম্পর্কে বারবার ব্যর্থ প্লুটো, মৌ না মিঠি— দ্বিচারিতা দেখে ক্ষুব্ধ দর্শক! উঠছে প্রশ্ন তার পুরুষোচিত মানসিকতা নিয়ে! “প্লুটোর মতো মেরুদণ্ডহীন পুরুষকে কি ভালোবাসা উচিত?” “এমন দুর্বল পুরুষকে ভালোবাসার চেয়ে একা থাকা ভালো!”— কটাক্ষে সরগরম ‘চিরসখা’র দর্শকরা!
কারোর সঙ্গে কথাই বলতেন না, শর্মিলা ঠাকুর একবার অস্বস্তিতে পড়ে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ওনার জন্যই কি রঞ্জিত দা এরম করছেন কি না। কিন্তু উনি যে এরকমই, কাজের বাইরে কারোর সঙ্গে কথা বলেন না খুব বেশি।” সব সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাহ্য করে, নিজের আত্মবিশ্বাসকে অস্ত্র করে এগিয়ে গিয়েছেন অনামিকা। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা আর নিজের যোগ্যতার ওপর ভরসাই তাঁকে আজ এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে যে যাত্রা তিনি করেছেন, তা টলিউডের নবীন প্রজন্মের কাছে নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণার।