সম্পর্কে বারবার ব্যর্থ প্লুটো, মৌ না মিঠি— দ্বিচারিতা দেখে ক্ষুব্ধ দর্শক! উঠছে প্রশ্ন তার পুরুষোচিত মানসিকতা নিয়ে! “প্লুটোর মতো মেরুদণ্ডহীন পুরুষকে কি ভালোবাসা উচিত?” “এমন দুর্বল পুরুষকে ভালোবাসার চেয়ে একা থাকা ভালো!”— কটাক্ষে সরগরম ‘চিরসখা’র দর্শকরা!

চলতি বছরের শুরুতেই স্টার জলসায় শুরু হয়েছে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখনীতে নতুন ধারাবাহিক ‘চিরসখা’ (Chiroshokha)। তথাকথিত প্রেম-ভালবাসার এক ব্যতিক্রমী সমীকরণ তুলে ধরছে এই ধারাবাহিকের গল্প। এক সম্পর্ক এবং তার পরিণতি নিয়ে পড়ে না থেকে জীবনে এগিয়ে গিয়ে, ভালবাসাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার কথাই বলছে এটি। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক মানেই যে সেটা শারীরিক হতেই হবে, সেটার বিপক্ষে কথা বলছে ‘চিরসখা’। গল্পের প্রধান চরিত্র কমলিনী এবং স্বতন্ত্র।

ধারাবাহিকের শুরুতেই দেখা যায়, কমলিনী বিধবা একজন নারী। যিনি অনেক অল্প বয়সেই জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছেন। শাশুড়ি এবং সন্তানদের নিয়েই তাঁর সংসার, যেখানে নিত্যনতুন অশান্তি লেগেই থাকে রোজ। এই সবকিছুর মাঝেও স্বতন্ত্র নামক এক ব্যক্তি কমলিনীর পাশে আছে ছায়াসঙ্গী হয়ে। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক বলতে শুধু আত্মিক, কিন্তু সমাজের চোখে তাদের এই সম্পর্ক অপরাধের সমান। গল্পে কমলিনীর মেয়ে মিঠি আবার ঘটনাচক্রে ভালবেসে ফেলে স্বতন্ত্রর ভাইপো প্লুটোকে।

ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে থাকতে থাকতে তাঁদের এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পরিণত বয়সে এসে যা একটা নাম পায়। হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে প্রবেশ করে মিঠির মামাতো বোন মৌ, তাঁকে কেন্দ্র করেই প্লুটোর আচরণ বদলাতে শুরু করে মিঠির প্রতি। এক পর্যায়ে সে নিজেকে শেষ করে দিতে চায়, সেই সময়ে প্লুটোর মা অর্থাৎ স্বতন্ত্রর বউদি, কমলিনী এবং মিঠিকে সবার সামনে অপমান করেন। প্লুটোর পরিণতির জন্য তাদের ‘মা-মেয়ে দু’জনেই ছেলেধরা’ বলে অপমান করে প্লুটোর মা। তার একটা কারণ , স্বতন্ত্রর সঙ্গে কমলিনীর ঘনিষ্ঠতা।

অন্যদিকে, ছেলের প্রেমিকা হিসাবেও মিঠিকে তার পছন্দ নয়। এরপর দুজনের সম্পর্ক ভেঙে যায়, মিঠি নিজেকে বুঝিতে নেয় যে প্লুটোর সঙ্গে তাঁর কোনও ভবিষ্যৎ নেই। অন্যদিকে মৌ এর সঙ্গে প্লুটোর সম্পর্ক গড়ে উঠে। যদিও যতবার সে মিঠির মুখোমুখি হয়েছে, তখন মৌকে অস্বীকার করে মিঠির কাছেই ফিরতে চেয়েছে। মিঠি যদিও বরাবর নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছে, আর প্লুটো বলে গেছে যে মায়ের কথায় অবাধ্য হবে না বলে মৌকে বিয়ে করছে কিন্তু মনে তার মিঠি।

মিঠিকে একবার নিজের মুখে এই কোথাও জানিয়েছে সে, মিঠি যদিও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে– বর্তমানে যে প্রেমিকার সমর্থনে মায়ের উপর কথা বলতে পারছে না, ভবিষ্যতে সে কী করবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এরপর মৌয়ের সঙ্গে বিয়ে পাকা হয়ে যায় প্লুটোর, আশীর্বাদ পর্বও শেষ কিন্তু এতকিছুর পরেও সে মিঠিকে প্রেম প্রস্তাব দিচ্ছে! প্রশ্ন উঠছে– প্লুটো যদি সত্যিই মিঠিকে ভালোবেসে থাকে, আর মৌকে সে কখনওই নিজের মনে জায়গা দিতে পারবে না। তাহলে প্রতিবাদ না করে চুপচাপ কেন সমস্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে?

উপরন্তু এক বোনের সঙ্গে বিয়ে পাকা করে আরেক বোনের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। শেষ অবধি ‘চিরসখা’ দেখে দর্শকদের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—প্লুটোর মতো দ্বিধাগ্রস্ত, দুর্বল এবং মেরুদণ্ডহীন পুরুষকে আদৌ কি ভালবাসা উচিত? যে মানুষ নিজের মায়ের সামনে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে পারে না, প্রিয়জনকে সম্মান দিতে জানে না, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারে না, তাকে সঙ্গী হিসেবে মেনে নেওয়া মানে নিজের জীবনকে বারবার অস্থিরতায় ফেলে দেওয়া।

আরও পড়ুনঃ আলোচনার কেন্দ্রে রাজনন্দিনী! টিআরপি দৌড়ে এগোলেও, ‘রাজরাজেশ্বরী রাণী ভবানী’-তে নায়িকা পছন্দ হচ্ছে না অনেকের! মুখ্য চরিত্রে নেই সেই তেজ, মানাচ্ছে না রানীর আসনে! দর্শকদের চোখে স্বীকৃতিকেই মানাত বেশি রানী ভবানীর ভূমিকায়! আপনাদের কী মত?

দর্শকদের অনেকেই বলছেন, প্লুটোর মতো চরিত্র আজকের সমাজে দুর্ভাগ্যজনক হলেও বারবার সামনে আসে। প্রেম মানে শুধু আবেগ নয়, দায়িত্ববোধও বটে। যেখানে সেই দায়িত্ববোধ নেই, সেখানে প্রেম কেবল ভেঙে যাওয়ারই নামান্তর। প্লুটোর চরিত্র তাই মনে করিয়ে দেয়—নিজেকে অবমূল্যায়ন করে কোনো দুর্বল পুরুষকে ভালোবাসার চেয়ে একা থাকা অনেক বেশি সম্মানের। আর সমাজকেও ভাবতে হবে—এমন দ্বিচারী পুরুষদের প্রশ্রয় দিয়ে নারীর আত্মসম্মান বারবার ভাঙা যাবে না।