“অশ্লীল শব্দপ্রয়োগ এখন জলভাত…এটা আধুনিকতা নয়, কুশিক্ষা!” নব ইন্ডাস্ট্রির ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে সরব অভিনেত্রী রীতা দত্ত চক্রবর্তী! নতুন প্রজন্মের মানসিকতায় সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে কী বললেন তিনি?

টেলিভিশনের পর্দায় তিনি কখনও স্নেহময়ী মা, আবার কখনও দজ্জাল শাশুড়ি। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে অভিনেত্রী ‘রীতা দত্ত চক্রবর্তী’কে (Rita Dutta Chakraborty) নিয়ে। অভিনয়জীবনে পার করে এসেছেন অনেকগুলো বছর। বিভিন্ন সময় থেকে শুরু করে নানান প্রজন্মের মানুষদের সঙ্গে পরিচয় এবং কাজ। তবে, আজকের প্রজন্মের কথাবার্তা এবং ভাষা চর্চা নিয়ে অভিনেত্রী বেশ উদ্বিগ্ন! তার মতে, ‘অশ্লী’ল বা কুটিল শব্দ ব্যবহার এখন যেন স্বাভাবিকতার অংশ হয়ে গেছে। সেটাকে মোটেই ফ্যাশন বলা চলে না, বরং ‘কুশিক্ষা’র প্রকাশ সেটা।’

সমাজে তো বটেই, তবে অভিনেত্রী মনে করেন যে সেটে তরুণদের এই আচরণকে অনেকেই অনায়াসে মেনে নিয়েছে, যা শিল্পের মান ও ভাষার সৌন্দর্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। চারপাশের কথাবার্তা, উচ্চারণ আর আচরণ মিলিয়ে আজকের সমাজে ভাষার যে রূপ দেখা যাচ্ছে, তা যেন একজন দীর্ঘদিনের শিল্পীর চোখে দারুন অস্বস্তির। ভাষার প্রতি এই অসতর্কতা শুধু কথার স্তরেই থেমে নেই, বরং মানসিকতার দিকটাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

এতদিন অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত রীতা জানেন, এই জায়গায় পৌঁছনোর পথ মোটেই সহজ ছিল না। কঠোর পারিবারিক বিধিনিষেধ, আর্থিক টানাপোড়েন পেরিয়ে তাঁকে নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে থাকতে হয়েছে। এক সময় জীবিকা আর শেখার প্রয়োজনে টানা শিফটে কাজ করেছেন, সেই শ্রমই আজ তাঁর আত্মপরিচয়ের ভিত। বড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েও সিনেমায় স্থায়ী জায়গা হয়নি, কিন্তু ছোটপর্দাকে অবলম্বন করেই তিনি নিজের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।

প্রসঙ্গত, ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর টান ছোটবেলা থেকেই। থিয়েটার, নাট্যকর্মশালা, গুরুজনদের সান্নিধ্য মিলিয়ে শেখার পরিসর ছিল বিস্তৃত। নাচ থেকে অভিনয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল শৃঙ্খলা আর নিয়মের পাঠ। সেই কারণেই আজকের দিনে কারোর বিকৃত কথাবার্তা এবং অগোছালো ব্যবহার তাঁকে ভাবায়। বিশেষ করে যখন শিশুদের আশেপাশে এমন কথা বলা হয়, তখন উদ্বেগ আরও বাড়ে। শিশুরা যে পরিবেশে বড় হচ্ছে, কোন সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে শিখছে, সেটাই ভবিষ্যতে তাদের সত্তাকে গড়ে দেবে।

আরও পড়ুনঃ “নেতাজির বাড়িতে বিয়ে হয়েছিল, ভেবেছিলাম জীবনটা অন্যরকম হবে, কিন্তু একটা কারণেই সংসার টেকেনি, ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হই” সুভাষচন্দ্রের পরিবারের বউ থেকে একা মায়ের লড়াই, এতদিন পর ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ্যে আনলেন তুলিকা বসু!

তাই বড়দের ব্যবহার এবং শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে, বলেছেন তিনি। উল্লেখ্য, নতুন প্রজন্মের প্রতি তাঁর বিশ্বাসটুকু রেখেই কথা বলেন রীতা। তিনি দেখেছেন, ভুল থাকলেও শেখার আগ্রহ থাকলে তা শুধরে নেওয়া সম্ভব। ভাষা হোক বা আচরণ, মনোযোগী শিক্ষা আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে এই সংকট কাটাতে। বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা আজও অটুট। তিনি চান, এমন এক পরিবেশ তৈরি হোক যেখানে শুদ্ধ ভাষা স্বাভাবিক হবে, শিল্পের মর্যাদা বজায় থাকবে আর আগামী প্রজন্ম সেই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই নিজের পথ খুঁজে নিতে পারবে।

You cannot copy content of this page