দুর্গাপুজোকে ঘিরে বাঙালির আবেগ কতটা গভীর, সেটা বোঝা যায় মহালয়ার সকালেই। বছরের পর বছর ধরে টিভির মহালয়া যেন উৎসবেরই অঙ্গ হয়ে গেছে। তাই কারা দেবীর চরিত্রে অভিনয় করবেন, সাজপোশাক কেমন হবে, সেই নিয়ে উৎসাহী থাকে আপামর দর্শক। ২০২২ সালে যখন জানা গেল কালার্স বাংলার আগমনী অনুষ্ঠানে দুর্গা রূপে দেখা যাবে অভিনেত্রী ‘ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত’কে (Rituparna Sengupta), তখন স্বভাবতই আলোড়ন পড়েছিল। বড় পর্দার প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী প্রথমবার মহিষাসুরমর্দিনী হিসেবে এলে কৌতূহল তো তৈরি হবেই।
কিন্তু কৌতূহল যতটা ছিল, মহালয়া প্রচারিত হওয়ার পর প্রশংসা ততটা জুটল না বললেই চলে। এই মহালয়াটি নিয়ে তখন থেকেই সমাজ মাধ্যমে নানান রকমের মিম আজও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। বহু দর্শকই ভিডিও দেখে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেন। কেউ বলেন, অনুষ্ঠানটি নাকি কমেডির মতো। আবার অন্যজনের কথায়, দেবদেবীর উপস্থাপনায় দায়িত্ববোধ নেই। সেই সময় এই মহালয়া দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন, ঋতুপর্ণার অভিনয়ে সেই দেবীসুলভ শক্তি বা ভাব ধরা পড়েনি।
অবশ্য কয়েকজন তাকে দেখে খুশিও হয়েছিলেন, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সমালোচনার ঝড়ই ছিল প্রবল। টেলিভিশনের দর্শকের প্রত্যাশা বিশাল আর সেই মানের স্তরে পৌঁছতে না পারলে যে কত দ্রুত আঙুল ওঠে, এই ঘটনা তার স্পষ্ট উদাহরণ। তবে, এবার প্রকাশ্যে এলো সেই সময়ের এক সাক্ষাৎকারের অংশ, যা ইতিমধ্যেই সমাজ মাধ্যমে তুমুল সাড়া জাগিয়েছে। সেখানে সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, তার দুর্গা রূপের সঙ্গে সংযুক্তা বন্দোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপস্থাপনার তুলনা নিয়ে তার মত কী? প্রশ্ন শুনে ঋতুপর্ণার থমকে যাওয়া অনেকের নজরে পড়েছে।
প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে অভিনেত্রী কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন, যেন চিনতেই পারছেন না কার সঙ্গে তার তুলনা হচ্ছে! এরপর সাংবাদিক নিজের থেকেই বলেন, দূরদর্শনে যিনি মা দুর্গা সাজতেন সেই সংযুক্তা বন্দোপাধ্যায়ের কথা হচ্ছে। এরপর অভিনেত্রী কিছুটা চেনার ভান করে উত্তর দিলেন, “ও তাই, ভালো তুলনা হলেই ভালো। আমি সন্মান করি সবাইকে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের জায়গায় প্রত্যেকেই সেরা।” অনেকেই বলছেন, এমন একজন শিল্পীকে না চেনা বা চিনতে না পারার ভঙ্গিটা বাঙালিদের কাছে খুবই অস্বস্তিকর।
প্রসঙ্গত, সংযুক্তা বন্দোপাধ্যায় এখনও বহু মানুষের কাছে মহালয়ার ‘টেলিভিশনের চিরন্তন দুর্গা’। তার নৃত্য, চোখের অভিব্যক্তি আর দেবীর রূপ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা মিলিয়ে তিনি এক ধরনের মান নির্ধারণ করে গেছেন। তিনি বহু বছর অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও, তার সৃষ্ট মা দুর্গার প্রতিমূর্তি আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করে। সেই তুলনায় টলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও ঋতুপর্ণার সেই নামটি শুনে দ্বিধায় পড়ে যাওয়া, দর্শকের চোখে তা অবাক করার মতোই ছিল।
এরপর থেকেই শুরু হয়েছে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, কেউ বলছেন এটি কৃতজ্ঞতাহীনতা তো অন্য কেউ বলছেন অহংকার। মহালয়াকে ঘিরে এত উচ্ছ্বাসের মাঝে দর্শকের রাগও যেন বেশি তীব্র হয়ে ওঠে। ঋতুপর্ণার অভিনয় নিয়ে সমালোচনা হওয়াটাই যেখানে চলছিল, তার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের এই অংশ যুক্ত হওয়ায় অনেকেই আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। একজন লিখছেন, “তুলনার যোগ্যতা নেই বলেই এমন আচরণ!” অন্যজন বলছেন যে, “তার প্রতিক্রিয়ার ভঙ্গি বুঝিয়েছে কেন দর্শকের সঙ্গে তিনি সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি।”
আরও পড়ুনঃ জি বাংলার ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এ বড় পরিবর্তন! আর্য চরিত্র ছেড়ে দিলেন জিতু কমল! দিতিপ্রিয়ার নতুন নায়ক হচ্ছেন কে?
কেউ বলেছেন, “ঋতুপর্ণার মধ্যে কৃতজ্ঞতার লেশমাত্র নেই, বরং কথার মধ্যে অত্যন্ত অহংকারী ভাব।” আবার কারোর মতে, “যেভাবে উনি চিনতে পারলেন না নামটা শুনে, তার মধ্যে আকার ইঙ্গিতে নিজেকে সেরা ঘোষণা করা এবং অপরদিকের অভিনেত্রীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের একটা ভাব রয়েছে।” আবার একাংশ বলেছেন “ঋতুপর্ণার মহালয়া আজ অব্দি টেলিভিশনের সব থেকে বাজে গুলোর মধ্যে একটা!” এসব মন্তব্য নিতান্তই দর্শকের প্রতিক্রিয়া হলেও এটাই স্পষ্ট যে, ঋতুপর্ণার সেই মহালয়া বেশিরভাগের মনেই দাগ কাটতে পারেনি বরং বিতর্কের তালিকাতেই জায়গা করে নিয়েছে।





