“মৃ’ত্যু সব কিছুর শেষ হলেও, কিন্তু পরিচয় এবং স্মৃতিকে কোনওদিন মুছে দিতে পারে না।” এই সত্যিটাই যেন আবার মনে করিয়ে দিল টলিউডের প্রাক্তন তারকা তথা একসময়ের রাজনৈতিক মুখ জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ (Joy Banarjee Death)। সোমবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। হাসপাতালের করিডরে নেমে এলো শো’কের ছায়া, আর সেই শোক ছড়িয়ে পড়ল বিনোদন জগত থেকে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত। তাঁর চলে যাওয়া যেন এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি।
এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনও ছিল নাটকীয় উত্থান-পতনে ভরপুর। নব্বইয়ের দশকে চুমকি চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর জুটি দর্শকদের মন জয় করেছিল। বিশেষত ‘হীরক জয়ন্তী’ তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। এক সময় নাকি এতটাই প্রেম জমেছিল চুমকির সঙ্গে জয়ের যে, অভিনেত্রীর বাবা অঞ্জন চৌধুরী বিয়ে পর্যন্ত ঠিক করেন অভিনেতার সঙ্গে। সেই বিয়ে না হওয়ার অবসাদে চলে জান তিনি, মানসিক টানাপড়েন ধীরে ধীরে তাঁকে দূরে সরিয়ে দেয় অভিনয় থেকে।
শাসকদলের কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রথম ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি। সেই সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না, বিচ্ছেদের পর দ্বিতীয়বার হাত ধরেন বর্তমান স্ত্রী অঙ্কিতা ব্যানার্জীর। পরবর্তীকালে রাজনীতির জগতে প্রবেশ করলেও সেখানে বড় সাফল্য পাননি। তা সত্ত্বেও মানুষের মনে তিনি থেকে গিয়েছিলেন এক পরিচিত মুখ হিসেবে। জানা গেছে, শেষের দিকে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। বিনোদন-রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়ে নীরব জীবন বেছে নিলেও তাঁর নামে আলোচনা থামেনি। দীর্ঘ অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হেরে গেলেন জয়।
চলতি মাসের ১৫ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে, মূলত নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে। পরবর্তীতে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় অবস্থায় অবনতি হলে। আজ সকালের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেলা এগারোটা নাগাদ প্রয়াত হন তিনি। তাঁর মৃ’ত্যু নিছক কোনও নামের অবসান নয়, বরং একটা যুগের অবসানও। তবে এই মৃ’ত্যু সংবাদে সবচেয়ে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া এসেছে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর কাছ থেকে। অভিনেত্রীর গলায় অসহায়তার সুর। হাসপাতাল থেকে জয়কে শেষবার দেখে বেরোতেই সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ‘জয় আমার জীবনের প্রথম পুরুষ, প্রথম প্রেম! কী করে ভুলে যাই বলুন তো?’— কান্নায় ভেঙে পড়লেন জয় ব্যানার্জীর প্রথম স্ত্রী অনন্যা এই পুজোয় তাঁর জীবনে আর নেই আনন্দের আলো, শুধু রয়ে গেল শূন্যতা আর জয়ের স্মৃতি!
তিনি জানান, “আমার থেকে যথেষ্ট সিনিয়র অভিনেতা উনি। অভিনয়ের সূত্রেই আমাদের পারিবারিক একটা সম্পর্ক ছিল। আমার বাবা-মা যথেষ্ট স্নেহ করতেন ওনাকে। যবে থেকে উনি অসুস্থ হয়েছেন, রোজ দেখতে আসবো ভাবতাম। আজকে দেখতে আসবো ঠিকই করেছিলাম, কিন্তু সকালে উঠে শুনলাম উনি আর নেই। অনেক কষ্ট পাচ্ছিলেন, হয়তো এবার ভালো জায়গায় গেলেন। সব মানুষই এমন ভাবে চলে যায় একদিন।” যাঁকে একসময় সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলেন, তাঁর জন্য ঋতুপর্ণার চোখের জলই প্রমাণ করে দিল, ব্যক্তিগত সম্পর্কের উষ্ণতাই মানুষের প্রকৃত পরিচয়।