সুচিত্রাকে কোনওদিনই মহানায়িকা মনে করতেন না ঋত্বিক ঘটক!মহানায়িকাকে নিয়ে ছিল তীব্র আপত্তি! কেন তাঁকে কখনই মেনে নিতে পারেননি? কারণ জানলে চমকে উঠবেন!

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ‘উত্তম কুমার’ (Uttam Kumar) এবং ‘সুচিত্রা সেন’ (Suchitra Sen) —এই দুই নাম যেন এক স্বর্ণযুগের প্রতীক। একজনকে বলা হয় মহানায়ক, আর অপরজনকে মহানায়িকা। একসঙ্গে পর্দায় যাঁরা মানেই হিট, আর আলাদাভাবেও যাঁদের উপস্থিতি বক্স অফিসে ছড়িয়ে দিত ম্যাজিকের ছোঁয়া। তবুও এত সফলতার পরও কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ‘ঋত্বিক ঘটক’ (Ritwik Ghatak) কখনও উত্তম কুমারকে নিয়ে ছবি তৈরি করেননি।

তিনি সুচিত্রাকে নিয়েও যেই সিনেমার কাজ শুরু করেছিলেন, তা শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে এর পেছনে ছিল এক গভীর মানসিক উপলব্ধি। সুচিত্রা সেনকে নিয়ে সকলেই যেমন বিস্ময় প্রকাশ করতেন, তাঁকে “মহানায়িকা”র আসনে বসাতেন, ঋত্বিক ঘটকের চোখে সেই অভিধা অর্থহীন হয়ে উঠেছিল। তবে এর মানে এই নয় যে তিনি সুচিত্রাকে অবহেলা করতেন।

বরং সুচিত্রার প্রতি তাঁর যে শ্রদ্ধা, তা ছিল একদম আলাদা মাত্রায়। সেই শ্রদ্ধার গভীরতা প্রকাশ পায় তাঁদের শেষদিকের সাক্ষাতে। ঋত্বিক ঘটকের জীবনের অন্তিম সময়, যখন তিনি হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী, নিয়মিত তাঁকে দেখতে যেতেন সুচিত্রা। সমস্ত ব্যস্ততা সামলে, এক ব্যক্তির প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নিয়েই হাজির হতেন তিনি। কখনও ফল নিয়ে, কখনও নিছক গল্প করতে।

এই নিবেদনের মুহূর্তেই একদিন ঘটে যায় সেই ঐতিহাসিক কথোপকথন। ঋত্বিক দুর্বল কণ্ঠে, অথচ তীক্ষ্ণ আবেগে বলে ওঠেন— “তুমি মহানায়িকা নও!” চমকে উঠেছিলেন সুচিত্রা, কিন্তু এর পিছনের মানে বুঝতে দেরি হয়নি। ঋত্বিক আবারও বলেন, “তুমি যেমনভাবে প্রতিদিন আমার কাছে আসো, সেটা মহানায়িকা পারে না। তুমি আমার কাছে দেবী মা।” সেই মুহূর্তে আর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সুচিত্রা সেন, চোখের জলে ভেসে যান তিনি।

আরও পড়ুনঃ “আজকে আমি এই কথা বলছি, কালকে আমি থাকবো কিনা সেটাই জানিনা!, মানুষ অনেক কথা বলবেই, কিন্তু আমরা নিজেদের মধ্যে যে সম্মানবোধ আছে সেটা নিয়েই এগোতে চাই” সম্পর্ক নিয়ে অকপট তিয়াসা- সোহেল!

এই অনন্য সম্পর্কের রসায়ন, যা অভিনয়ের গ্ল্যামার নয়, বরং নিঃস্বার্থ এক আত্মিক বন্ধনের দৃষ্টান্ত, তা আজও বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনুচ্চারিত অধ্যায়। এই কাহিনি বহুদিন আগে প্রকাশ পেয়েছিল এক পত্রিকায়। কিন্তু আজও এই গল্প মনে করলেই, মহানায়িকা সুচিত্রাকে নতুন এক রূপে দেখেন তাঁর অনুরাগীরা, সেখানে নেই অহং, নেই তারকাখ্যাতির গর্ব—আছে কেবল এক স্নেহময়ী, মানবিক মূর্তি, যাঁকে মনে হয় সত্যিই এক দেবী।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।