টেলিভিশনের ঝলমলে পর্দার আড়ালে কতটা সংগ্রাম লুকিয়ে থাকে, তা খুব কম মানুষই জানেন। দর্শক যখন সিরিয়ালের চরিত্রে কোনও পরিচিত মুখকে দেখে মুগ্ধ হন, তখন হয়তো ভাবেন না সেই শিল্পী বাস্তবে কেমন লড়াই করছেন টিকে থাকার জন্য। সম্প্রতি টলিপাড়ার পরিচিত অভিনেতা সত্যম মজুমদার তাঁর এক সরল স্বীকারোক্তিতে এমন এক বাস্তবতার কথা জানিয়েছেন, যা শুনে চমকে গিয়েছেন অনেকেই।
জনপ্রিয় ধারাবাহিক জগদ্ধাত্রী কিংবা কেয়াপাতার নৌকো-তে অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন সত্যম। কিন্তু আজ কাজের সুযোগ অনেক কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। টলিউডে প্রতিনিয়ত নতুন মুখ আসছে, ফলে অভিজ্ঞ শিল্পীদের জন্য জায়গা যেন ছোট হয়ে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমি যদি আমার যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক চাই, তাহলে আমাকে বাদ দিয়ে দেবে।” এই কথার মধ্যেই যেন ধরা পড়ছে বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির কঠোর বাস্তবতা।
লকডাউনের পর বহু থিয়েটার শিল্পী কাজ হারিয়ে টেলিভিশনে আসেন, ফলে অনেকেই কম পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজি। সেই প্রতিযোগিতায় হারাচ্ছেন অভিজ্ঞ অভিনেতারা। সত্যমের অভিমত, “যে টাকা আমি চাই, সেই টাকার অর্ধেকেই কেউ কাজ করে দিচ্ছে, তাহলে ওরা আমাকে নেবে কেন?” তাঁর মতো বহু শিল্পীই আজ একই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন — নিয়মিত কাজ না পেলে সংসার চালানোই দুঃস্বহ হয়ে দাঁড়ায়।
তবু হাল ছাড়েননি অভিনেতা। নর্থ কলকাতার বেলগড়িয়ার বাসিন্দা সত্যম এখনো থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত, কারণ সেটাই তাঁর নেশা ও পরিচয়। ছেলে উপার্জন করলেও হাতে কাজ না থাকলে তিনি নিজেকে অপরাধী মনে করেন। হাসিমুখে বলেন, “দিনের শেষে দুটো ডালভাত যেন পেটে দিতে পারি, সেটাই চাই।” তাঁর স্ত্রীও পাশে আছেন — সংসার সামলাতে টুকটাক কাজ করেন।
আরও পড়ুনঃ বন্ধু নয়, স্ত্রী হিসেবে চেয়েছিল কমলিনীকে, অবশেষে মুখ খুলল স্বতন্ত্র! পার্বতীর উপস্থিতিতেই স্বতন্ত্রর অকপট স্বীকারোক্তি, কমলিনী শুনেও চুপ! প্রশ্ন উঠছে, স্বতন্ত্রর প্রতি তার অনুভূতি কি সত্যিই নেই, নাকি জেদ বা ভুল বোঝাবুঝি?
শেষে সত্যমের আবেদনে উঠে আসে এক গভীর বার্তা — প্রবীণ শিল্পীদের জন্য যেন সরকার ন্যূনতম পেনশনের ব্যবস্থা করে। কারণ, শিল্পীর আয় কখনও স্থায়ী নয়, কিন্তু তাঁর জীবনের প্রয়োজনগুলো ঠিকই থেকে যায়। বহু গুণী অভিনেতার মতো যেন আর কেউ কাজের অভাবে শেষ জীবনে কষ্ট না পান, সেই আশা নিয়েই এগিয়ে চলেছেন তিনি। সত্যম মজুমদারের এই অকপট উচ্চারণ যেন আজকের টলিপাড়ার নিঃশব্দ লড়াইয়ের প্রতিধ্বনি।