একের পর এক বাংলা ধারাবাহিকে উপেক্ষিত প্রবীণ তারকারা! কাউকে বাতিল করা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে, কেউ জানতেই পারছেন না তিনি হঠাৎ বাদ পড়েছেন! কেন এই অসম্মান প্রাপ্তি হচ্ছে তারকাদের?

প্রবীণ অভিনেতাদের প্রতি অবহেলার অভিযোগ নতুন নয়। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি সেই অভিযোগকে আরও তীব্র করেছে। ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী’ ধারাবাহিকে কাজ শুরু করার পর তুলিকা বসুর সামনে এমন শর্ত আনা হয় যা তাঁর পক্ষে মানা সম্ভব ছিল না। শুরুতেই জানানো হয়েছিল তিনি বেশি দিন সময় দিতে পারবেন না তবু তাঁকে নেওয়া হয় এবং পরে ‘এনওসি’ সই করিয়ে বাদ দেওয়া হয়। একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হন ‘রাজ রাজেশ্বরী রানি ভবানী’ ধারাবাহিকের স্বাগতা বসু এবং তনিমা সেন। মাত্র দুই মাসে সময়ের লাফ দেখানোর অজুহাতে তাঁদের চরিত্র বাতিল করা হয় এবং কেউ কেউ তো জানতেই পারেননি তাঁরা ধারাবাহিকে নেই।

স্বাগতা জানিয়েছেন তাঁকে মাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন কাজ করার কথা বলা হয়েছিল এবং সে সূত্রে তাঁর পারিশ্রমিকও কমিয়ে দেওয়া হয়। তিনি সব শর্ত মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু ধারাবাহিক জনপ্রিয় হওয়ার পর হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে যায়। বিপরীতে তনিমাকে বলা হয় পরের দিনের শুটিং বন্ধ থাকবে পরে এক সহঅভিনেত্রীর কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই ঘটনায় তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন নিজের মৃত্যুর খবরও নাকি তাঁকে অন্যের কাছ থেকে জানতে হয়। তাঁর দাবি কিছু মানুষ ক্যামেরার সামনে দক্ষ না হলেও ক্যামেরার পিছনে নিয়ম তৈরিতে প্রভাব খাটাতে শিখেছেন তাই তাঁকে নতুন করে কাজ খুঁজতে হচ্ছে।

অনেক বর্ষীয়ান অভিনেতার অভিযোগ নাটক বা যাত্রায় অভিনয় করতে গেলেই তাঁদের ধারাবাহিক থেকে বাদ দেওয়া হয়। শঙ্কর চক্রবর্তী এবং সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই সমস্যায় পড়েছিলেন। তাঁদের মতে মঞ্চ তাঁদের দম দেয় কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ করতে গেলে ছোটপর্দায় সুযোগ কমে যায়। অধিকাংশ প্রবীণ অভিনেতার কোনও চুক্তিপত্র থাকে না ফলে সংস্থা চাইলে সহজে তাঁদের বাদ দিতে পারে। শুধু নায়ক নায়িকাদেরই আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি করা হয় তাই তাঁদের বদলাতে গেলে কিছু নিয়ম মানতে হয় কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে তা প্রয়োজন হয় না।

এ অবস্থার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অভিজ্ঞ ও বয়স্ক শিল্পীরা। অনেক ধারাবাহিক হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় এবং তাঁদের নতুন কাজ খুঁজতে ব্যস্ত হতে হয়। স্বাগতার মতে ইন্ডাস্ট্রিতে একা মায়ের সংখ্যা বাড়ছে এবং কাজের অনিশ্চয়তা তাঁদের আরও সমস্যায় ফেলছে। অভিযোগ আছে প্রবীণ তারকাদের পাঁচজনের সঙ্গে একটি মেকআপ রুম ভাগ করতে হয় যা তাঁদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে। সব মিলিয়ে বয়স বাড়লে ছোটপর্দায় স্থায়ী জায়গা ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ “লাইফ পার্টনার নিজেকেই বেছে নিতে হবে, বাবা–মা চাপিয়ে দিলে সেটা খুব খারাপ”—তাহলে কি বাবা–মায়ের সিদ্ধান্তই সম্পর্ক ভাঙার নেপথ্যে? কেন এত বড় মন্তব্য করলেন পিসি সরকার জুনিয়র, কোন অভিজ্ঞতা থেকে সমাজকে সতর্ক করলেন বিখ্যাত জাদুকর?

তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। সুব্রত গুহ রায় জানিয়েছেন তিনি কখনও অবমাননা বা অমানবিকতার শিকার হননি। বরং ছোটপর্দার সৌজন্যেই তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তাঁর মতে লিলি চক্রবর্তী বা অনামিকা সাহার মতো শিল্পীরা ধকল নিতে না পারার জন্য ধারাবাহিক থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। বয়স বাড়লে রাত পর্যন্ত শুটিং করা কঠিন হয়ে ওঠে তাই সুব্রতের পরামর্শ প্রবীণ অভিনেতাদের উচিত কাজ বাছাই করে নেওয়া যাতে শরীর ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।