টলিউড ইন্ডাস্ট্রির বর্ষীয়ান অভিনেতা ‘শঙ্কর চক্রবর্তী’ (Shankar Chakraborty) দীর্ঘ কর্মজীবনে অসংখ্য স্মরণীয় চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন পর্দায়। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা, সবেতেই তাঁর অভিনয় ছড়িয়েছে স্বতন্ত্র ছাপ। তবে শিল্পীজীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবন নিয়েও রয়েছে বহু টানাপোড়েনের স্মৃতি। বিশেষ করে, প্রয়াত স্ত্রী অভিনেত্রী ‘সোনালি চক্রবর্তী’কে (Sonali Chakrabarti) ঘিরে রয়েছে তাঁর মনের গভীরে জমে থাকা আফসোস। ২০২২ সালের অক্টোবরে লিভারের অসুখে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর প্রয়াত হন সোনালি। কিন্তু আজও তাঁর চলে যাওয়ার কষ্ট বহন করে চলেন শঙ্কর।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শঙ্কর চক্রবর্তী খোলাখুলি জানিয়েছেন, স্ত্রীর প্রতি কিছু সিদ্ধান্ত তাঁকে সারাজীবন অপরাধবোধে ভোগাচ্ছে। প্রসঙ্গত, সোনালি চক্রবর্তী বাংলা চলচ্চিত্রে এক সময় বেশ জনপ্রিয় নাম ছিলেন। ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমায় তাঁর ঝলমলে অভিনয় আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। সেই সময়ে যখন শঙ্করের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় নাট্যদলে, তখনও দর্শক তাঁকে সেই ছবির নায়িকা হিসেবেই চিনতেন। অন্যদিকে, শঙ্কর তখন ছিলেন একেবারেই সাধারণ যুবক।
সংসার চালানোর মতো ন্যূনতম টাকাও ছিল না তাঁর হাতে। এমন পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সোনালি। নাচ শেখানোর আয় থেকে সংসারের খরচ মেটাতেন, স্বামীকে জামা কিনে দিতেন, এমনকি সেলুনে নিয়ে গিয়ে চুল কাটানোর খরচও দিতেন তিনি। এক কথায়, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। মফস্বল থেকে উঠে আসা শঙ্করকে পরিণত মানুষ তৈরি করেছিলেন সোনালী। কিন্তু সেই সোনালিকেই এক সময় অভিনয়জগৎ ছাড়তে বলেছিলেন শঙ্কর!
এদিন শঙ্কর চক্রবর্তীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, স্ত্রী যখন ধীরে ধীরে উন্নতির পথে এগোচ্ছিলেন, তখন তাঁর পুরুষসুলভ অহংকারে বাধা পেয়েছিলেন সেই সাফল্য। অভিনেতার মতে, সেই সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আজও এই সিদ্ধান্তের জন্য তিনি গভীর অনুশোচনায় ভোগেন। সেদিন সোনালির প্রতিভার পাশে দাঁড়িয়ে, এগিয়ে দিতে পারলে হয়তো আরও অনেক বড় সাফল্য অর্জন করতে পারতেন তিনি নিজেও।
অভিনেতার মতে, স্ত্রী শুধু প্রতিভাবানই ছিলেন না, জীবন নিয়ে তাঁর সিদ্ধান্তও ছিল যথেষ্ট বাস্তবসম্মত। বহুবার স্ত্রী তাঁকে সঞ্চয় করার কথা বলেছিলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিকল্পনা করতে বলেছিলেন। কিন্তু শঙ্কর সে কথা কানেই তোলেননি। ফলস্বরূপ, এক সময় ঋণের চাপে পড়ে শ্বাসরু’দ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাঁদের সংসারে। আজ ফিরে তাকিয়ে আফসোস হয় তাঁর, স্ত্রী যদি তখনকার মতো পরামর্শ দিয়ে যেতে পারতেন, তবে হয়তো জীবনের ভারসাম্য একেবারেই অন্যরকম হত।
আরও পড়ুনঃ অডিশনের নামে ২০২৩ সাল থেকে চলছিল যৌ’ন নির্যা’তন, অবশেষে মুখ খুললেন উঠতি মডেল! বড়পর্দার স্বপ্ন দেখিয়ে কসবার হোটেলে অমানবিকতা, অভিযুক্ত টলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক-প্রযোজক!
আজ সোনালি নেই, কিন্তু তাঁর স্মৃতি এবং অনুপস্থিতি শঙ্করের জীবন থেকে মুছে ফেলা যায় না। তিনি মানেন, দীর্ঘদিনের সঙ্গিনীকে হারানোর শোক এখনও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। স্ত্রীকে নিয়ে করা অতীতের ভুল সিদ্ধান্তই আজ তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। তবে সোনালির ভালোবাসা, অবদান এবং জীবনদর্শনই আজও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখছে। সেই স্মৃতিই একদিকে তাঁকে অপরাধবোধে কুরে কুরে খায়, অন্যদিকে আবার শক্তিও জোগায়।