সামাজ মাধ্যমের জনপ্রিয় মুখ ‘সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়’ (Sohini Ganguly) মাতৃত্বের প্রতিটি মুহূর্তই সাক্ষী থেকেছেন অগণিত মানুষ। কখনও বেবি বাম্প নিয়ে রিল পোস্ট, কখনও সাধভক্ষণ— তাঁর প্রতিটি ছবিতে ও পোস্টেই যেন ঝরে পড়েছিল মাতৃত্বের উচ্ছ্বাস আর স্পষ্ট ছিল সুখের ছোঁয়া। ভক্তরাও সমানভাবে অপেক্ষা করছিলেন সন্তান আসার সেই খুশির খবরের জন্য। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর খেলায় আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয় গভীর শোকে। প্রসবের কিছুদিন আগেই সন্তান হারানোর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন সকলেই।
সমাজ মাধ্যমে এক ভাইরাল ভিডিওতে অভিযোগ ওঠে চিকিৎসকের গাফিলতির কারণেই ঘটে গেছে এই মর্মান্তিক ঘটনা। ওই ভিডিওতে এক মহিলা নিজেকে সোহিনীর ননদ বলে দাবি করেন। এর পরেই নেটিজেনদের একাংশ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরব হন। যদিও চিকিৎসক শিবেন্দ্রনাথ দাস ওরফে এস.এন. দাস স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে সন্তানের মৃ’ত্যুর পেছনে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই এবং কী কারণে এমনটা ঘটেছে তাও তিনি ব্যাখ্যা করেন। এরপরেই সবাই সোহিনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।
অনেকের মতে, জেনেশুনে এমন স্পর্শকাতর অবস্থায় নাচানাচি করে ভিডিও বানানো, পেটে ভগবানের ছবি আঁকার ফলেই এমন হয়েছে। সব বিতর্কের মাঝেও সোহিনী ও তাঁর স্বামী অনির্বাণ নিঃশব্দ থেকেছেন, একটিও কথা বলেননি। এই নীরবতাই যেন আরও ভারী করে তুলছিল তাঁদের চারপাশের শোকের আবহ। অবশেষে নীরবতা ভেঙে সামনে এলেন দু’জনে। প্রমাণসহ জানালেন সেদিনের ঘটনার সত্যতা, আর আসল দোষী কে। সোহিনীর দিকে তাকানোর উপায় নেই, এমনই পুত্র সন্তান শোকে মায়ের অবস্থ।
ভিডিওর শুরুতেই কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কেঁদে ফেলেন সোহিনী। তিনি বলেন, “আমি এমনই অভাগা একজন মা, যার বুকের দুধটুকুও শুকায়নি। সেলাইও কাটা হয়নি এখনও। এই পরিস্থিতিতেও আমাকে নিজের মৃ’ত সন্তান নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। চারিদিকে লোকে নানান কথা বলছে। আমার মনে হয়, আজকে সত্যিটা না জানালেই নয়।” এরপর তিনি বলেন, “গত মাসের ২২ তারিখ ভোর রাত থেকেই বাচ্চার নড়াচড়া তেমন অনুভব করতে পারছিলাম না। আমার স্বামীকে বললে, ও জানান হালকা অনুভব করা যাচ্ছে। আমরা তাও সকাল হতেই ডাক্তারের কাছে যাই।
সকাল ৭ টায় ডাক্তার বাবুর বাড়িতে চেকআপের পর তিনি জানান, ইউএসজি করে আনতে হবে। তখনও আমার সন্তানের হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছিল। আমাদের বলা হয়, সকাল দশটার মধ্যে পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে কল্যাণী মেডিকেল কলেজে দেখা করতে। উনি সেখানে অপেক্ষা করবেন, প্রয়োজনে ওটি করবেন। এগারোটা দিয়ে উনার ক্লাস থাকে বলে উনি আর থাকতে পারবেন না। অত সকালে কোথাও পরীক্ষা হয় না, তবুও আমরা সবটা করে রিপোর্ট দিয়ে ঠিক সময় পৌঁছে যাই। উনি আবার আমাকে দেখে জানান সব ঠিক আছে।
তবে রিপোর্টে লেখা ছিল বাচ্চার গলায় আম্বিলিক্যাল কর্ড বা নাড়ী জড়িয়ে রয়েছে। যার ফলে ও শ্বাস নিতে পারছে না। আমরা অনুরোধ করি ওটি করে দিতে, কিন্তু উনি জানান সেটা সম্ভব নয়। উল্টে একদিন এডমিট থাকতে বলেন। আমি অনেকবার অক্সিজেন চাই বাচ্চাটার জন্য কিন্তু সেটাও আমাকে দেওয়া হয়নি। আমাকে একটা সাদা কাগজ দিয়ে বাচ্চার নড়াচড়ার হিসেব রাখতে বলা হয়। বেলা বারোটা নাগাদ শেষ বার অনুরোধ করি। দুপুর দুটো নাগাদ ডাক্তার এসে আমার স্বামীকে জানায় বাচ্চাটা আর নেই। তিনি কিছু করতে পারবেন না এই মুহূর্তে আর।
আরও পড়ুনঃ বাবার অত্যাচারে অত্যাচারিত মা! গরিব মেয়ে ঝিলের র্যাপে সামাজিক বাস্তবতা, ডাক্তারের চরিত্রে নজরকাড়া নীল! জলসায় আসছে ‘ভোলে বাবা পার করেগা’, প্রোমো দেখে মুগ্ধ নেটপাড়া
এরপরেও তিনি ওটি করতে রাজি হন না, বরং ওই অবস্থায় আমাকে আবার বাইরে ইউএসসি করাতে পাঠান। সেখানে রিপোর্টেও ফিটাল ডিমাইজ আসে। মোট আটবার ওই অবস্থাতে আমায় এদিক-ওদিক করতে হয়েছে। সন্ধ্যে হতেই আমার অবস্থা খারাপ হয়, রক্তপাত শুরু হয়। সেই সময় আমার স্বামী ডাক্তারের কাছে আমায় দেখার অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, “মৃত বাচ্চার ওটি আমরা করি না। দু’দিন সময় লাগবে, ওষুধের দ্বারা বের করে দেওয়া হবে। রক্তপাত শুরু হয়েছে সেটা তো খুব ভালো কথা, তার মানে সব ঠিক আছে। আমার কাছে নিয়ে আসুন কাউন্সিং করে দেবো।”
সোহিনী স্বামীর দাবী ডাক্তার নিজের ভিডিওতে যেসব কথা বলেছে, তার একটিও সত্যি নয়। বরং তিনি প্রথম থেকে উদাসীন ছিলেন। প্রেসক্রিপশন এর ছবি দেখিয়ে ছবি নিয়ে স্বামী কষ্ট করে দিয়েছেন শরীরের কোনরকম রক্তচাপের সমস্যা ছিল না। এখন কি সেদিন ডাক্তারের উপর কেউ চড়াও হয়নি। রাত এগারোটার সময় মৃ’ত প্রায় অবস্থায় সোহিনীর ওটি করেন তিনি। এই সময়ে সোহিনীকে তিনি বলেন, “তোমার বাচ্চাকে তুমি মেরেছো, আমি না! সবাইকে ছবি দেখালে ওরকমই হয়।” বাচ্চাটিকে দেখিয়ে তিনি জানান, অনেক আগেই সে মারা গেছে, সকালের রিপোর্ট সব ভুল ছিল।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।
দুর্গাপুর ধ’র্ষণ কান্ডে মুখ্যমন্ত্রীর ‘রাত ৮টা’ মন্তব্যে ক্ষোভ টলিপাড়ায়, সোশ্যাল মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঋদ্ধি-ঋত্বিক-রুদ্রনীলের