সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরি ছেড়ে অভিনয় আসা, জানুন সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু’ ওরফে প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের অজানা কথা

তাঁর মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের মানুষ খুবই কম রয়েছে। অভিনয় তাঁর পেশা হলে, কবিতা লেখা তাঁর ভালোবাসা। যেমন শিক্ষিত ছিলেন তেমনি এক অন্য ধারার মানুষ ছিলেন প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

আকাশবাণীতে চাকরি করে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তারপর পেয়েছেন অভিনয়ে সুযোগ। এই সমস্ত কিছুর মধ্যে চালিয়ে গিয়েছেন নিজের কবিতা লেখার শখকে। প্রতিবছরই ছেলে মেয়ের জন্মদিনে একটি করে কবিতা উপহার দিতেন অভিনেতা। রীতি ছিল বলা যায়। আগের রাতে ঘুমের সময় ছেলে-মেয়ের বালিশের নিচে কবিতাটি রেখে আসতেন বাবা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

life story

এদিকে অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন আকাশবাণীর একটি পদের জন্য। প্রথম স্থানে নাম আসে অনিল চট্টোপাধ্যায়ের আর দ্বিতীয় স্থানে সৌমিত্রবাবুর। কিন্তু হঠাৎই বাংলা ছবিতে অভিনয়ের ডাক পেয়ে কাজ ছেড়ে চলে যান অনিলবাবু। তাঁর বদলে চাকরিটা পেলেন সৌমিত্রবাবু। এদিকে ‘অপুর সংসার’ ছবি দিয়ে অভিনয়জগতে কাজ শুরু করলেও, জীবনের প্রথম স্ক্রিনটেস্টে বাতিল হয়ে যান। ১৯৫৭ সালে কার্তিক চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নীলাচলে মহাপ্রভু’তে চৈতন্যদেবের চরিত্রে দিয়েছিলেন স্ক্রিনটেস্ট। কিন্তু এতে অভিনয় করেছেন অসীম কুমার। অভিনয় জগতে আসার সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন শিশির ভাদুড়ির অভিনয় দেখে। পাশাপাশি শিশিরবাবু মারা যাওয়ার আগে, তাঁর দলে ছোটো চরিত্রে কাজ করে ফেলেছিলেন।life story

অন্যদিকে অধ্যাপক এবং সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে কলেজ জীবনে পড়াশোনা করেছেন। পরে সৌমিত্র বাবু নিজেই জানিয়েছিলেন, তাঁর অভিনয় জীবনের পিছনে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রধান ভূমিকা রয়েছে। এরপর সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’ ছবির শুটিংয়ে পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সৌমিত্রবাবু। যেখানে সত্যজিৎ রায় তাঁর সঙ্গে ছবি বিশ্বাসের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন এই বলে যে, এই হল সৌমিত্র যে আমার পরের ছবিতে ‘অপু’ হচ্ছে। ঘটনাটা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজেই।life story

এরপর ‘চারুলতা’ ছবিতে তাঁর হাতের লেখার বেশ কয়েকটি শর্ট থাকবে বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। যারপর হাতের লেখা চর্চা করেছিলেন সৌমিত্রবাবু। তিন মাস ধরে। তবে ছবির শুটিং শেষে নিজের হাতের লেখায় ফিরতে প্রায় ছয় মাস লেগে গিয়েছিল প্রবাদপ্রতিম অভিনেতার। ‘অপুর সংসার’ ছবির প্রায় ২০ বছর পর ফিরেছিলেন মঞ্চে। নিজের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ করেছেন ‘নাম জীবন’ নাটকটি।

তাঁর সবকটি চরিত্রের মধ্যে ‘ফেলুদা’ চরিত্রটি সকলের কাছে বেশ জনপ্রিয়। সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’ চরিত্রে এক নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে অভিনেতার। অন্যদিকে পরিচালনা করেছিলেন ‘স্ত্রী কা পত্র’ ছবিটি। এটি একটি হিন্দি ছবি। যেখানে অভিনয় করেছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার মঞ্চে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। যদিও তিনি মনে করেছিলেন জাতীয় পুরস্কার পাওয়া তাঁর আগেই উচিত ছিল।

life story

জীবনে কখনও জাতীয় পুরস্কার পাননি তিনি। অথচ এদিকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান লিজিয়ঁ দ্য’ন্যর পেয়েছেন অভিনেতা। এছাড়া নিজের একটি পত্রিকা বার করেছিলেন সৌমিত্রবাবু। নামকরণ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘এক্ষণ’। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান ভোলার নয়। পাশাপাশি অভিনেতা হওয়ার আগে তিনি ছিলেন সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ী। একসঙ্গে নিজের জীবনে বহু অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেছেন তিনি। আজও তাঁর কথা রয়েছে সকলের স্মরণে।