টেলিভিশনের একসময়ের ব্যস্ততম মুখ ‘সৌমিতৃষা কুন্ডু’ (Soumitrisha Kundu) হঠাৎ করেই আলোচনা থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ‘মিঠাই’ (Mithai) খ্যাত এই অভিনেত্রীকে পর্দা থেকে শুরু করে পুরস্কারের মঞ্চ কিংবা সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত দেখা গেলেও, একসময় যেন তিনি সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যান। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘কালরাত্রি’ সিরিজের সাফল্যের পর দর্শকরা ভেবেছিলেন নতুন প্রজেক্টে আবারও ফিরবেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে না কোনও নতুন ধারাবাহিক, না কোনও সাক্ষাৎকার, এমনকি ফটোশুটেও তার উপস্থিতি দেখা যায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভক্তদের মনে নানান প্রশ্ন দানা বাঁধে।
এই রহস্যের মাঝেই জানা যায়, সৌমিতৃষা গুরুতর অসুস্থতার কারণে সব কাজ থেকে বিরতি নিয়েছেন। চিকিৎসকের রিপোর্টে ধরা পড়েছিল কিডনিতে পাথর, এবং সেই কারণে তিনি রাজ্যের বাইরে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শরীরের অবস্থা বিবেচনা করে তিনি অভিনয় কিংবা জনসম্মুখের সমস্ত ব্যস্ততা থেকে দূরে সরে শুধুমাত্র পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাচ্ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এই অনুপস্থিতি ভক্তদের কৌতূহল বাড়িয়েছিল এবং নানা গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছিল। অবশেষে আবারও প্রকাশ্যে এলেন তিনি।
যা দর্শকদের কাছে অনেকটা স্বস্তি নিয়ে আসে। ধীরে ধীরে সৌমিতৃষা আবারও নিজের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে আগের মতো সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। বিশেষ করে রান্না এবং বেকিং নিয়ে ভিডিও শেয়ার করে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। পাশাপাশি, জন্মাষ্টমীর সময় তিনি তার অন্তর্দৃষ্টি ভাগ করে নিয়েছেন। ভক্তরা জানেন, সৌমিতৃষা গোপালের ভক্তি ধারাবাহিকের চরিত্র থেকে নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলেন। ‘মিঠাই’-এ গোপাল পূজা করার সেই অভ্যাসই তাকে বৃন্দাবনের ভক্তিতে আচ্ছন্ন করেছে।
নিজের জন্মদিনেও বৃন্দাবনে গিয়ে ঈশ্বরের সেবায় সময় কাটিয়েছেন তিনি। অভিনেত্রীর কথাতেই স্পষ্ট, শারীরিক অসুস্থতা এবং মানসিক অবসাদের সময় ধর্মীয় ভক্তিই তাকে শক্তি জুগিয়েছে। তার নিজের ভাষায়, “এত শারীরিক অসুস্থতা, দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা এবং সব থেকে বেশি কাজ করতে না পারা— এই এত কিছুর মধ্যে মানসিক শান্তিটাই কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যবে থেকে জন্মাষ্টমী আসবে আসবে শুরু হয়েছে এবং দেখতে দেখতে চলে এলো– আজই সেই বিশেষ দিন, কোথায় যেন সমস্ত শারীরিক কষ্ট আর মানসিক অবসাদ হওয়া হয়ে যাচ্ছে তাঁর আগমনে।
খালি মনে হচ্ছে এখন যদি এক ছুটে বৃন্দাবন যেতে পারতাম, কিন্তু এতটা জার্নি করার অবস্থা নেই আমার এখন। আমার ভীষন ইচ্ছা করছে কাল রাত দিয়ে যে একটু যদি তাঁর জন্মস্থানে যেতে পারতাম।” ভক্তদের উদ্দেশে সৌমিতৃষা আরও একটি গভীর বার্তা দিয়েছেন। তার মতে, “যাঁরা হয়তো ভগবানের সত্যিকারের ভক্ত হন, তাদের জীবনে এমন কঠিন পরিস্থিতি আসতেই থাকে। আমি আগে ভাবতাম যে আমি তাঁর ভক্ত বলে, স্পেশাল ভিআইপি টিকিট পাব জীবনে ভালো থাকার।
আরও পড়ুনঃ মাধুরী-হেমা-রজনীকান্তের পর এবার বাংলা! ভক্তদের চোখে দেবীর আসনে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, বিনোদিনী থিয়েটারে অদ্ভুত এক পূজার সাক্ষী শহরবাসী!
কিন্তু এখন বুঝতে পারি সেটার উল্টোটা হয়, যারা সত্যিকারের ভক্ত হয় তাদের জীবন কখনওই মসৃণ হয় না। শারীরিক এবং মানসিক কষ্ট লেগেই থাকে তাদের জীবনে, এই কষ্ট সহ্য না করলে হয়তো ভগবানের কাছে পৌঁছানো যায় না। ভগবান ভক্তের যোগ্যতা সারা জীবন ধরে পরীক্ষা করেন, এই যে শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমি খুব একটা কথা বলি না কিন্তু আজ এই কথাগুলো ভাগ করে নেওয়া উচিত।” তার এই অভিজ্ঞতার কথা শুনে ভক্তরা যেমন আবেগাপ্লুত, তেমনই প্রিয় অভিনেত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনাও করছেন সকলে।