৮৫ বছর বয়সেও একইভাবে উদ্যমী! বিয়ে করে ছাড়তে হয়েছিল অভিনয়! জীবনের ওঠা নামার গল্প শোনালেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মিতা চ্যাটার্জী

উনিশের দশকে তিনি পা রেখেছিলেন অভিনয়ের জগতে। তবে এখনও ৮৫ বছর বয়সেও একইভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি অভিনয়। কখনও ঠাকুমা, কখনও দিদিমার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি জিতে নিয়েছেন দর্শকদের মন। ১৯৩৬ সালের ২২ আগস্ট অভিনেত্রী জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায়। যদিও জন্মসূত্রে তার নাম ছিল নমিতা চট্টোপাধ্যায়। তার পিতার নাম ফনিভুষণ চট্টোপাধ্যায়। বাবার ইচ্ছেতেই তিনি শুরু করেন নাচ এবং অভিনয়। মাত্র ১১কি ১২ বছর বয়সে ১৯৪৮ সালে হেমেন গুপ্তের ভুলি নাই সিনেমার মাধ্যমেই পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। শিশু শিল্পী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি সিনেমায়। তবে সেই সময় অনেক অভিনেত্রীর নাম নমিতা থাকায় তিনি নিজের নাম বদলে রাখেন মিতা।

যদিও অধিকাংশ সিনেমায় তিনি করেছেন পার্শ্ব চরিত্র। জীবন যোদ্ধা, বিয়ের ফুল, বেয়াদব, নবরুপা, পরান যায় জ্বলিয়া রে, নবজন্ম, অন্নপূর্ণার মন্দির সহ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী মিতা চ্যাটার্জী। তবে ধারাবাহিকের মতোই সমানভাবে জনপ্রিয় তিনি। কালজয়ী ধারাবাহিক জন্মভূমিতে তার পিসিমার চরিত্রে অভিনয় এখনও দাগ কেটে যায় মানুষের মনে। এছাড়াও ওগো বধূ সুন্দরী এবং ত্রিনয়নী ধারাবাহিকে দেখা গেছে তাকে। সাংবাদিকরা গিয়েছিল তার সাক্ষাৎকার নিতে। সেখানেই তিনি প্রথমেই সকলকে ভালোবাসা জানিয়েছিলেন তারপর বলেছিলেন করোনার কারণেই তিনি বিরত ছিলেন অভিনয় থেকে খুব শীঘ্রই তিনি আবার ফিরতে চান অভিনয়ে।

শুধুমাত্র অভিনয় বা নাচ নয়, একজন প্রকৃত সাক্ষাৎ সরস্বতী তিনি। তিনি জানিয়েছিলেন মাত্র সাড়ে ৩ বছর বয়সে তিনি শুরু করেন নাচ। তারপর একের পর এক জায়গায় তিনি দিয়েছেন সোনার পদক। এমনকি বাংলা থেকে তিনি গিয়েছেন রাচিতেও নাচের কম্পিটিশনে। সেখান থেকেই তিনি প্রথম বই দ্বিতীয় হননি কখনও। তিনি জানিয়েছেন “আমি ছবি বিশ্বাস সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন চরিত্রহীনে। তিনি আমায় দেখিয়ে বলেছিলেন আমার লিটিল হিরোইনকে দেখেছো আমি একের পর এক পাতা সাজিয়ে বসে আছি কিন্তু কেমন সমস্ত প্রশংসা ও নিয়ে চলে গেল।”

তিনি এও জানিয়েছিলেন “আমি কথাটা শুনে তাকে প্রণাম করেছিলাম। তিনি আমায় আশীর্বাদ করেছিলেন।” তবে শুধু তাই নয়, তিনি বলেছিলেন জীবনে ফেলনা যায়না কিছুই। তবে সব কিছুর পরও থামেনি পড়াশোনা। তিনি জানিয়েছিলেন স্কুলে পড়াশোনা করার সময় তিনি পর পর তিন বছর প্রথম হওয়ায় স্কুল থেকে তাকে একটি ক্লাস উচুঁতে দেওয়া হয়। ক্লাস ৪ থেকে তিনি যায় ক্লাস ৬ এ। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন স্বইচ্ছেতেই তিনি শিখেছিলেন ঘোড়া চালান। তবে তার এই শিখাই কাজে লেগেছিল চিত্রাঙ্গদা করার সময়। তিনি এও বলেছিলেন এছাড়াও তিনি শিখেছেন গান, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন।

সেইসময়কার সেরা খেলোয়াড়কেও হারিয়ে ছিলেন তিনি। তার প্রশংসা করেছিলেন সেখানকার সেরা খেলোয়ার। এছাড়াও তিনি শিখেছেন গাড়ি চালাও, শর্ট হ্যান্ড-এর কাজ। তবে অভিনয়ের টাকে তিনি ছেড়েছেন চাকরি। তার লেখা বই প্রকাশিত হয়েছিল ২০০০ সালের কলকাতা বই মেলায়। তিনি জানিয়েছিলেন তার লেখা বিজ্ঞান ছড়ার বই পড়ানো হয়েছে অনেকগুলি স্কুলে। তিনি পেয়েছিলেন মধুসূদন পুরস্কার স্বয়ং রাজ্যপালের হাত থেকে। তিনি বিয়ে করেছিলেন অধ্যাপক বিমল চট্টোপাধ্যায়কে।

আরো পড়ুন: ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর শোক ধাক্কা কাটিয়ে ফের সোশ্যাল মাধ্যমে ফিরলেন সব্যসাচী! প্রিয় বন্ধুর উদ্দেশ্যে কি বললেন সায়ক?

বিয়ের পর বেশ কয়েকবছর তিনি দূরে ছিলেন অভিনয় থেকে কিন্তু থেমে থাকেননি তিনি। তিনি জানিয়েছেন তার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে একটু ধারাবাহিকের প্রস্তাব দেয় একটু ধারাবাহিকের প্রযোজক। তিনি প্রথমে ইতস্তত করলেও রাজি হয়ে যায়। সেখানে রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি ধারাবাহিককে কাজ করেছেন তিনি। সেখান থেকেই তিনি সুযোগ পান জন্মভূমি ধারাবাহিকের। ধারাবাহিকটি চলেছিল ৭ বছর। এছাড়াও লেখালেখি ও নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন ডিপ্রেশনের কিছু নেই। আনন্দের সঙ্গে বাঁচতে হবে। তিনি বলেছেন বাঁচতে হবে সবাইকে। তার চিন্তাধারা এবং অভিজ্ঞতাকে কুর্ণিশ জানাই আমরা।