“রাজারহাটের সাঁওতাল পল্লির মানুষদের পোশাক বিলিয়েছি, ফিরোজের প্রিয় শহরগুলোতে দরিদ্র-অনাথদের খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে!”— স্বামী ফিরোজের মৃ’ত্যুবার্ষিকীতে বিশেষ উদ্যোগ নিলেন অভিনেত্রী সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়!

টলিপাড়ার পরিচিত মুখ ‘সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়’ (Subhadra Mukherjee) অনেকদিন ধরেই পর্দা থেকে দূরে রয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনের পরপর আঘাত তাঁকে যেন একেবারেই গুটিয়ে দিয়েছিল। বাবাকে, শ্বশুরকে আর স্বামীকে হারানোর পর জীবনযুদ্ধে দাঁড়িয়ে থেকেও বারবার ভেঙে পড়েছেন তিনি। তবু মনের মধ্যে সেই লড়াইটা চালিয়ে গেছেন নিঃশব্দে। স্বামী ফিরোজের আকস্মিক চলে যাওয়া তাঁর জীবনের রঙই কেড়ে নিয়েছে বলে মনে করেন সুভদ্রা।

স্বামীকে স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “২০২৩ থেকে পুজো আমার কাছে অর্থহীন। ওই বছর থেকে জীবনে মৃত্যুমিছিল শুরু। ২০২৩-এ বাবাদের একসঙ্গে হারিয়েছি। ২০২৪-এ স্বামী ফিরোজও চলে গেল।” এই ক্ষতগুলো তাঁর ভেতরে আজও কুরে কুরে খাচ্ছে। একসময় পুজোর দিনগুলো ছিল তাঁর পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় সময়। বাবার শখ ছিল নানা রকম পাঞ্জাবি পরা, সেই শখের পাঞ্জাবি কেটেই অভিনেত্রী, এখন নিজের জন্য সাদা জামা বানান।

সুভদ্রার কাছে এটাই যেন বাবার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার এক উপায়। অন্যদিকে, অভিনেত্রীর স্বামী ছিলেন সর্বধর্মসমন্বয়ে বিশ্বাসী। দুর্গাপুজো থেকে বড়দিন, সব উৎসবই তিনি প্রাণ খুলে উপভোগ করতেন। বড়দিনের দিন মেয়েকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটে বেড়াতে যাওয়া ছিল তাঁর নিয়ম। পুজোর সময়ও ফিরোজ সবসময় কলকাতায় থাকতে চাইতেন, কারণ উৎসবের এই আবহ তাঁর ভীষণ প্রিয় ছিল। সুভদ্রার রান্না ফিরোজ কতটা ভালোবাসতেন, তা আজও অভিনেত্রীর স্মৃতির পাতায় ভাসে।

আমিষ-নিরামিষ মিলিয়ে এলাহি আয়োজনের মধ্যে ফিরোজের প্রিয় ছিল স্ত্রীর হাতে বানানো যে কোনও রান্না।এবার ফিরোজের মৃ’ত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করার এক ভিন্ন আয়োজনও করছেন সুভদ্রা। শুধু পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি এই উদ্যোগ। তিনি চান সমাজের বহু মানুষও ফিরোজকে মনে রাখুক। তাই এই বছর মহালয়ার দিনে রাজারহাটের এক সাঁওতাল পল্লিতে গিয়ে পোশাক বিলিয়েছেন তিনি। আবার ৩০ সেপ্টেম্বর ফিরোজের প্রিয় শহরগুলিতে— হায়দরাবাদ, বর্ধমান, কলকাতা, মুম্বইয়ের দরিদ্র মানুষ, অনাথ শিশুদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।

আরও পড়ুনঃ ছোট পর্দা ছেড়ে এবার বড় পর্দায় অঙ্কিতা-দিব্যজ্যোতি! মহুয়া রায় চৌধুরী ও তাপস পালের চরিত্রে দেখা যাবে টেলিভিশনের এই দুই তারকাকে

যদিও সব জায়গায় একসঙ্গে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই এবার বর্ধমানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। পাড়ার পুজোর আয়োজকরাও গত বছর সুভদ্রাকে অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। সুভদ্রার কথায়, ফিরোজ এসব একেবারেই পছন্দ করতেন না। তাই স্বামীর ইচ্ছেকেই মর্যাদা দিয়ে তিনি উৎসব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। জীবনের বড় বড় শূন্যতার মাঝেও ফিরোজের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে নিজের মতো করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই অভিনেত্রী।