কার্তিক মাস অবাঙালি হিন্দু মহিলাদের এক বিশেষ ব্রতের নাম— করবা চৌথ (Karva Chauth)। এই দিনে বিবাহিত হিন্দু মহিলারা স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় সারাদিন উপবাস করে চাঁদ দেখে উপবাস ভাঙেন। সূর্যোদয়ের আগে খাওয়া, দিনভর জল না খেয়ে থাকা, অবশেষে সন্ধ্যায় সেজেগুজে চাঁদকে অর্ঘ্য দেওয়া— সব মিলিয়ে এক ধর্মীয় রীতির চেয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান বলেই বেশি গুরুত্ব পায় এটি। মূলত উত্তর ভারতে প্রচলিত এই ব্রত বাঙালিদের রীতির মধ্যে পড়ে না। অথচ এবার সেই করবা চৌথের ছবি শেয়ার করে শিরোনামে উঠে এলেন টলিউডের পরিচিত মুখ ‘সুদীপা চট্টোপাধ্যায়’ (Sudipa Chatterjee)। শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক!
উল্লেখ্য, একদিন যাঁর মুখ ছাড়া ‘জি বাংলার রান্নাঘর’-এর কথা কল্পনাও করা যেত না, আজ সেই সুদীপা নিজের ইউটিউব চ্যানেলে রান্না শেখান, চালান নিজের বুটিক। বদলে গেছে সময়, বদলেছে পরিসরও। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও কি আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটা কিছুটা বদলে গেল? সুদীপা যে ‘করবা চৌথ’ পালন করলেন সেটা হয়তো তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, কিন্তু প্রশ্নটা উঠছে যখন তিনি সেই ছবি সমাজ মাধ্যমে ভাগ করেন এবং দেখা যায় তা আসলে এআই দিয়ে তৈরি, তখন সেই কৃত্রিমতার উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ জাগে।
অনেকে ঠাট্টা করে বলেছেন, “ছবিতে তো চাঁদ পিছনে, সামনে কাকে দেখছেন তাহলে?” তবে বিতর্কটা শুধুমাত্র ছবি ভুয়ো হওয়া নিয়ে নয়, আরও গভীর। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, “বাঙালি হয়ে মাড়োয়ারি বা অবাঙালি রীতি পালন করার মানে কী? আজও তো অবাঙালি সমাজে বাঙালিদের অশোক ষষ্ঠী বা শীতলা ষষ্ঠীর কোনও জায়গা নেই। তাহলে বাঙালির এত নিজস্বতা থাকা সত্ত্বেও অন্যের সংস্কৃতির অনুকরণে কেন এমন উচ্ছ্বাস?” বিশেষ করে একজন বাঙালি পরিচিত মুখ হয়ে এরকম উৎসব পালনের ছবি প্রকাশ্যে আনা কি আদৌ ঠিক?
এই নিয়েই সামাজিক মাধ্যমে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কেউ বলেছেন, “বাঙালিদের কি পুজো কম পড়েছে যে এখন করবা চৌথ করতে হবে?” আবার কেউ লিখেছেন, “যাঁদের উৎসব নিয়ে এত মাতামাতি, তাদের গিয়ে বলুন ইতুর ব্রত বা নীল ষষ্ঠী করতে। তখন উত্তরটা নিজে থেকেই চলে আসবে।” এই সব সমালোচনার মুখে সুদীপাও চুপ থাকেননি। তাঁর সোজাসাপটা উত্তর, “বাঙালি তো ক্রিসমাসও উদযাপন করে, ধানতেরস করে, কি না করে? যে যেভাবে আনন্দে থাকে, থাকুক না? আপনাদের কি?”
আরও পড়ুনঃ “উৎপলদাকে সামনে দেখে গলা শুকিয়ে যেত, অভিনয় ভুল করলে আর রক্ষে নেই!” “উৎপলদা আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি, ওই রকম মানুষ আর জন্মাবে না!”— গুরুর কাছে শেখা জীবনের পাঠ আজও ভোলেননি শঙ্কর চক্রবর্তী! জানেন রেগে গেলে কী করতেন উৎপল দত্ত?
সুদীপার এই বক্তব্যে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জায়গাটা স্পষ্ট থাকলেও, তবু প্রশ্নটা থেকেই যায়— সবকিছুর মধ্যেই কি সীমা থাকা উচিত নয়? সংস্কৃতির জায়গায় এই রকম অনায়াস অনুকরণ কি সত্যিই স্বাভাবিক? উৎসব উদযাপন তো আনন্দের, কিন্তু সেটার শিকড় যদি নিজের মাটি থেকে উঠে গিয়ে অন্য কারও ছায়ায় দাঁড়ায়, তখন সেটিকে নিছক আনন্দ বলা যায় কি? সমাজ মাধ্যমের যুগে ব্যক্তিগত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক। তাই এই বিতর্ক হয়তো এখানেই শেষ হচ্ছে না।