“আমার বাবা নেই, আমার বাবা চাই-ও না!”— ছোট্ট মেয়ে সহচরীর মুখে এই কথা শুনে ভেঙে পড়লেন মা স্বরলিপি! একদিকে বাবার আদর ছাড়া একাকী বেড়ে উঠছে মেয়ে, অন্যদিকে বাবা সৌম্য জীবনে নতুন সম্পর্ক নিয়ে ব্যস্ত! ১১ দিন বয়স থেকেই রাখে না মেয়ের খোঁজ!

বাবা আছেন, তবু নেই-এই অনুভূতি নিয়ে বড় হচ্ছে মেয়েটি। মায়ের চোখের নিচের কালি, চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া, আর সমাজের প্রশ্নবাণ— সবকিছু তার শৈশবের সঙ্গী। মায়ের হাসির আড়ালে লুকানো ক্লান্তি মাঝে মাঝে বুঝে ফেলে ছোট্ট মন। আর বাবার অভাব, ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হয় তাঁর। কথা হচ্ছে, ‘স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়’ (Swaralipi Chatterjee) এবং তার মেয়ে সহচরীকে নিয়ে। বাবা সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Shoumo Banerjee) সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদের পর, সে মায়ের কাছেই বড় হচ্ছে বাবার অভাব বুকে নিয়ে।

টেলিভিশনের পর্দায় যে সহজ-সরল ছেলেটির চরিত্রে মুগ্ধ হন দর্শকরা, জানেন কি ব্যক্তিগত জীবনে অভিনেতা সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিন্তু অনেকটা জটিল। একসময় ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ধারাবাহিকের সেটেই শুরু হয়েছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায়— স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রেম। পর্দার প্রেম বাস্তবেও গড়িয়েছিল বিয়েতে, ২০১৭ সালে। কিন্তু জীবন সবসময় গল্পের মতো সুখের হয় না। ধীরে ধীরে দূরত্ব বেড়েছিল, আর শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্ক টেকেনি।

দক্ষিণ কলকাতায় দু’জনে মিলে খুলেছিলেন ছোট্ট এক ক্যাফে। একসঙ্গে সময় কাটানোর সেই জায়গাই যেন ভালোবাসার সাক্ষী ছিল একসময়। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙার পর সেই যৌথ উদ্যোগ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেন সৌম্য। আজ সেই জায়গার মালিকানা একাই সামলাচ্ছেন স্বরলিপি, আর পাশে আছে তাঁদের একমাত্র মেয়ে সহচরী— মায়ের আদরে এখন সে বড় হচ্ছে। বিচ্ছেদের পর স্বরলিপি নিজের মতো করে নতুন করে গুছিয়ে নিয়েছেন জীবন।

অন্যদিকে সৌম্যের কথায়, প্রথমদিকে তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতেন। কিন্তু পরে আর সেই সুযোগ পাননি। এদিকে স্বরলিপি জানিয়েছেন, মেয়ের ১১ দিন বয়স থেকেই বাবা কোনও সম্পর্ক রাখে না। তবু বাবার স্নেহে না থাকা ছোট্ট সহচরী কিন্তু এখন অনেকটাই বড় হয়েছে। শুরুর দিকে বাবাকে না দেখে মন খারাপ করত, কান্না পেত তার। কিন্তু এখন সে নাকি মাকে নিজেই বলে, “আমার বাবা নেই, আমার বাবা চাই-ও না!” সন্তানের মুখে এই কথা শুনে এক মুহূর্তের জন্য থমকে যান স্বরলিপি, কিন্তু বুক শক্ত করে নিজের মেয়েকে বড় করে তুলছেন একাই।

আরও পড়ুনঃ “বাজির বিকট আওয়াজে অসুস্থ অভিনেতা! ফোন ধরল না পুলিশ‌ও” — সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্তি, “মানুষের একটু বিবেক বাকি আছে?” কোথায় নিয়ন্ত্রিত হলো শব্দবাজি?

মেয়ের জন্যই এখন তাঁর বেঁচে থাকা, এমনটাই বলেন স্বরলিপি। জীবনের এত উত্থান-পতনের পরও তিনি নিজের কাজ আর দায়িত্বে দৃঢ়। অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু জীবনের মঞ্চে তিনি লড়ছেন প্রতিদিন। নিজের মেয়েকে এমনভাবে মানুষ করতে চান, যাতে সে কাউকে হারিয়েও কখনও নিজেকে হারিয়ে না ফেলে। এদিকে সৌম্যর জীবনে এসেছে নতুন সম্পর্কের গুঞ্জন। দেবলীনা দত্তের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছে। কিন্তু স্বরলিপি আর ছোট্ট ‘পুটলি’র জন্য এ এক মায়ের নিঃশব্দ সংগ্রাম, আর এক মেয়ের বাবা ছাড়া রোজ বাঁচার চেষ্টা।

You cannot copy content of this page