রহস্যে মোড়া মৃ’ত্যু! দু বছরের ছেলেকে নাকি মদ্যপান করাতেন মহুয়া রায়চৌধুরী, এবার নায়িকার নাম ভূমিকায় স্বস্তিকা?

বায়োপিকের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ চিরকালই তুঙ্গে থাকে, বিশেষত যদি তা হয় কিংবদন্তি অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্বকে ঘিরে। একসময় শিশুশিল্পী অয়ন্যা চট্টোপাধ্যায় ও রাজনন্দিনী পালের নাম উঠে এলেও এবার আলোচনায় এসেছে আরেকটি নাম—স্বস্তিকা দত্ত। শোনা যাচ্ছে, পরিচালকের দল বেশ কয়েকজন অভিনেত্রীর লুক টেস্ট করছে, তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। রাণা সরকারের প্রযোজনায় নির্মিতব্য এই ছবির সম্ভাব্য নাম রাখা হয়েছে ‘গুনগুন করে মহুয়া’, যার পরিচালনায় থাকছেন নবাগত সোহিনী ভৌমিক। চিত্রনাট্যের দায়িত্বে আছেন দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত ও সোহিনী ভৌমিক। কিন্তু কে হবেন ‘মহুয়া’?

মাত্র ২৬ বছর বয়সেই প্রায় ৮০টি ছবিতে নায়িকা হিসেবে কাজ করেছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী, যা বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়েছে। তরুণ মজুমদারের ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ সিনেমার মাধ্যমে রুপোলি পর্দায় অভিষেক হলেও ‘দাদার কীর্তি’ তাঁকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তবে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন ও রহস্যজনক মৃত্যু আজও টলিউডের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। একসময় তাঁকে বলা হতো ‘বাংলা সিনেমার রানি’, অথচ আজকের প্রজন্ম তাঁকে সেভাবে চেনে না।

অভিনয়ে সাফল্য পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে মহুয়া ছিলেন ভীষণ রকম দুর্ভাগা। প্রেম করে বিয়ে করলেও খুব দ্রুত স্বামী তিলক চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। শোনা যায়, দাম্পত্য জীবনে নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হতেন তিনি। কাজের ফাঁকে মেকআপ দিয়ে সেই ক্ষত ঢেকে অভিনয় চালিয়ে যেতেন। ১৯৮৫ সালের ২২ জুলাই তিনি আগুনে গুরুতর দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, যেখানে দশদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সরকারি নথি অনুযায়ী, স্টোভ বিস্ফোরণই ছিল এই দুর্ঘটনার কারণ, তবে মহুয়ার অনুরাগীদের মনে আজও নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে।

মহুয়া রায়চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী রত্না ঘোষাল একবার দাবি করেছিলেন, মহুয়া মদ্যপানে আসক্ত ছিলেন এবং নিজের সন্তানকেও ছোটবেলাতেই মদ খাইয়েছিলেন। এই মন্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর বিতর্ক হয় এবং মহুয়ার অনুরাগীরা এতে প্রবল আপত্তি তোলেন। প্রযোজক রাণা সরকার তখন এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানান। মহুয়ার মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী তিলক আর বিয়ে করেননি, ছেলে তমালকে নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। তমাল একজন গিটারিস্ট ও কর্পোরেট চাকরিজীবী হলেও তিনি কখনো মায়ের পরিচয় নিয়ে সামনে আসেননি।

আরও পড়ুনঃ দারুণ সুখবর! নতুন বছরে পরমব্রত-পিয়ার জীবনে নতুন সদস্য! সুখবর ভাগ করে নিলেন পিয়া!

এই বায়োপিকে কেবল অভিনেত্রী মহুয়াকেই নয়, ব্যক্তি মহুয়ার জীবনকেও তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতারা। তাঁর উত্থান, টলিউডের শীর্ষস্থানীয় নায়িকা হয়ে ওঠা, ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন এবং রহস্যময় মৃত্যুর গল্পই হবে ছবির মূল আকর্ষণ। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাকে দেখা যাবে? অয়ন্যা ও রাজনন্দিনীর পাশাপাশি স্বস্তিকা দত্তের নামও উঠে এলেও, শেষ পর্যন্ত কে মহুয়া হবেন, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে পুরো টলিউড।