কলকাতার কালীপুজোর সময় যেন পুরো শহরেই এক অনন্য উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়। শুধু মন্দির নয়, ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট—সবার মনেই মাতৃভক্তির উচ্ছ্বাস। এই সময় মানুষ দেবীর কাছে প্রার্থনা জানায় নিজের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য পাশাপাশি ভক্তরা নিজের পছন্দমতো দেবীকে উপহারও দিয়ে থাকে। বিশেষ করে নৈহাটির বিখ্যাত বড়মা মন্দিরে এই চিত্র যেন আরও বিশেষ হয়ে ওঠে।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, দেব, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়—এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়—সকলেই বিভিন্ন সময় দেবীর কাছে প্রার্থনা জানাতে উপস্থিত হন। তবে এই উপহারের গল্প শুধু সাম্প্রতিক নয়। সত্তরের দশকে উত্তমকুমার, অমিতাভ বচ্চনসহ বহু তারকা ফাটাকেষ্টর কালীপুজোর অংশ ছিলেন। দেবীর কাছে পাঠানো উপহার, বেনারসি শাড়ি বা হিরের নাকছাবি—সবই এই ভক্তি ও প্রার্থনার প্রতীক।
এ বছরও বড়মা মন্দিরে সেই একই রীতি বজায় আছে। মন্দিরের সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এবার অপরাজিতা রুপোর তোড়া পাঠিয়েছেন দেবীর জন্য। পুজোর দিনে তা দেবীর পায়ে পরিয়ে দেবীকে সাজানো হবে। এছাড়াও সাংসদ ও অভিনেতা দেব তার তিনটি ছবি—‘খাদান’, ‘ধূমকেতু’, ‘রঘু ডাকাত’—বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার আনন্দে দেবীর জন্য পাঠিয়েছেন মূল্যবান বেনারসি শাড়ি।
যদিও অনেকেই ভাবেন দেবী সরাসরি ওই দিন সেই উপহার পরবেন, কিন্তু মন্দিরের সম্পাদক স্পষ্ট করেছেন, “এই দিন দেবীর অনেক বড় মূর্তি পূজিত হয়। তাই সকলের দেওয়া বেনারসি দেবীর পিছনে টাঙিয়ে রাখা হয়। তার ছবি পরে ভক্তদের পাঠানো হয়।” অপরাজিতা ছাড়াও বাংলা ছবির বহু জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী মানত পূরণ হলে দেবীকে গয়না বা উপহার পাঠান। সরাসরি উপহার দেওয়ার নিয়ম না থাকায় অনেকের নাম প্রকাশ হয় না।
আরও পড়ুনঃ “মা কালী আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, মা জানেন আমি তাঁকে কতটা ভালোবাসি”— কালীপুজোর আগে আবেগঘন শ্রুতি দাস! পর্দায় দেবীরূপে যাঁকে দেখে দর্শক বলেন ‘দেবী নেমে এসেছেন’, বাস্তবেও যেন সেই রূপেরই ছাপ!
মন্দিরের সম্পাদক আরও জানিয়েছেন, বড়মা শুধু তারকাদের জন্য নয়। খ্যাতনামি হোক বা সাধারণ ভক্ত—সবার প্রার্থনা একভাবে মন্দিরে শোনা হয়। সকলের জন্য দেবী সমানভাবে শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ প্রদান করেন। এভাবে প্রতি বছর নতুন করে ভক্তদের ভালোবাসা ও তারকার প্রার্থনা মিলে তৈরি হয় এক অনন্য কালীপুজোর দৃশ্য, যা কলকাতার উৎসবকে করে আরও প্রাণবন্ত।