ছোটপর্দার এক সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ ‘মধুবনী গোস্বামী’ (Madhubani Goswami), হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে গিয়েছেন সিরিয়ালের পর্দা থেকে। একসময় টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ হওয়া সত্ত্বেও আজ তিনি অনেকটাই আলাদা জীবন বেছে নিয়েছেন। স্টার জলসা শুরুর লগ্ন থেকেই একের পর এক মেগা দিয়ে গিয়েছে, একদম শুরুতেই যে মেগা আট থেকে আশি সকলের মন কেড়েছিল টা হলো ‘ভালোবাসা ডট কম’ (Bhalobasha dot com), এখানেই প্রথম অভিনয় আত্মপ্রকাশ করেন মধুবনী ও রাজা গোস্বামী (Raja Goswami) যথাক্রমে ‘তোড়া’ ও ‘ওমে’র চরিত্রে। এখন থেকেই দুজনের প্রেমের সূত্রপাত যা পরে গিয়ে বিবাহে পরিণত হয়।
এত সাফল্যের মাঝেও বিয়ের পর এই হারিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কোনও মান-অভিমান নয়, নেই কেরিয়ার থেকে পাওয়া কোনও দুঃখবোধ, আসলে সিদ্ধান্তটা খুব সচেতনভাবেই নিয়েছেন তিনি। গত রবিবার নিজের সমাজ মাধ্যমে মধুবনী একটি ভিডিও শেয়ার করে জানিয়েছেন তাঁর অভিনয় থেকে অবসরের নেপথ্যে থাকা কারণ, তারসাথে তিনি সমস্ত সমালোচকদের উদ্দেশ্যেও বক্তব্য রেখেছেন। নিজের সন্তান কেশবকে সময় দিতে গিয়েই তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন অভিনয় দুনিয়া থেকে।
এমন সময় যখন একের পর এক লিড চরিত্রে ডাক পড়ছিল, তখনই মা হওয়ার অভিজ্ঞতাকে জীবনের সেরা অধ্যায় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বলে জানান অভিনেত্রী। মধুবনী বলেন, “আমি সেই সব মেয়েদের মধ্যে পরি না যাঁরা বিয়ের পর স্বামীর বা শ্বশুরবাড়ির চাপে কাজ ছেড়ে দেন। বরং ঠিক উল্টোটা। আমার শশুর শাশুড়ীর মতন কেউ হতে পারবেন না!” অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী রাজা গোস্বামী থেকে শুরু করে শাশুড়ি—সবার পক্ষেই চাওয়া ছিল তিনি যেন অভিনয়টা চালিয়ে যান।
এমনকী অভিনেত্রী বলেন অনেক সময় তাঁকে ‘ঘাড় ধাক্কা’ দিয়ে কাজের জন্য পাঠানো হত। সন্তান জন্মানোর পর থেকে ধীরে ধীরে তাঁর জীবনের অগ্রাধিকার বদলে গেল। মা হয়ে ওঠাটাকেই জীবনের শ্রেষ্ঠ সাফল্য বলে মনে করছেন তিনি। একসময় কেশবের জন্মের পরে যখন তিনি শরীরের আগের ছন্দে ফিরে এসেছিলেন, তখনো একাধিক প্রজেক্টের প্রস্তাব এসেছিল তাঁর কাছে। দুই প্রধান চ্যানেল থেকে মুখ্য ও নেগেটিভ, পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ডাক এসেছিল অগুন্তি বলে জানান অভিনেত্রী।
তবু সবকিছু ফিরিয়ে দিয়ে তিনি শুধু একটাই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন তা হলো ‘মাতৃত্ব’।তাঁর কথায়, ‘‘আমি জানি এই সময়টা আমি ফিরিয়ে পাব না। আমার সন্তানের বেড়ে ওঠার মুহূর্তগুলো মিস করতে চাই না।’’ একটা শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনের পেছনে যে বাবা-মায়ের কতটা ভূমিকা থাকে, তা তিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, “এই যে আপনারা কেশবকে এত সাবলীল ভাবে কথা বলতে দেখেন সেটা কিন্তু আমার নিজস্বার্থ ত্যাগের ফল”। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।
অনেকেই বলে থাকেন, সব মায়ের সেই আর্থিক সুযোগ থাকে না। মধুবনী স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, এটা শুধু টাকা বা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের বিষয় নয়। এটা মানসিক প্রস্তুতি, অগ্রাধিকারের প্রশ্ন। যাঁরা চাকরি, সন্তান, সংসার সব সামলে চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তিনি। তবে তিনি বুঝেছিলেন, তাঁর নিজের ক্ষেত্রে সন্তানকে সময় দেওয়াটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আর সেখানেই তিনি নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ প্রথমবারেই সুচিত্রা সেনকে ছোঁয়ার সাহস! ‘রিনা ব্রাউন’ হচ্ছেন পায়েল! নেটপাড়ায় সিনেপ্রেমীদের চরম ক্ষোভ— “রিনা ব্রাউন একজনই, টাচ করা মুশকিল হি নেহি, নামুমকিন হ্যায়!”
এখন অবশ্য তিনি একেবারে কর্মজীবন ছেড়ে দেননি। সমাজ মাধ্যমে ব্লগ, নিজের পার্লারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বাড়িতে বসেই। যেখানে অনেকের পক্ষে বাইরে কাজ করা বাধ্যতামূলক, সেখানে মধুবনী নিজের কাজের ধরন এমনভাবে গড়ে নিয়েছেন যাতে ছেলের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। আজকের দিনে এই আত্মবিশ্বাসী, স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া মায়েদের মধ্যে মধুবনী নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ।
খাওয়ানোর নাম করে মায়ের রান্না নিয়ে ব্যবসা? মায়ের স্বপ্নকে ঘিরে ব্যবসার অভিযোগ! নোংরা কটাক্ষের মুখে বাংলার জনপ্রিয় গায়িকা!