একসময়ে স্টার জলসার পর্দা কাঁপানো ‘শান্টু গুণ্ডা’কে মনে আছে? কিম্বা তুঁতের স্বপ্ন পূরণে দায়িত্ব নেওয়া রঙ্গন? হ্যাঁ, কথা হচ্ছে অভিনেতা ‘সৈয়দ আরেফিন’ (Syed Arefin) এর। আজ তিনি টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ হলেও, এই সফলতার পেছনের যাত্রাপথ মোটেই মসৃণ ছিল না। ‘ইরাবতী চুপকথা’, ‘খেলাঘর’, ‘তুঁতে’ কিংবা ‘যোগমায়া’- প্রতিটি ধারাবাহিকে নিজের অভিনয় দক্ষতায় দর্শকদের মনে নিজের পরিচিতি গড়তে সক্ষম হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন ‘শান্টু গুণ্ডা’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে।
এই চরিত্রই তাঁকে একেবারে ঘরের ছেলে করে তুলেছিল বাংলা সিরিয়াল প্রেমীদের কাছে। দাদাগিরির মঞ্চে এসে সৈয়দ আরেফিন একবার নিজের জীবনের অজানা অধ্যায়ের কথা তুলে ধরেছিলেন। সৈয়দ আরেফিন বলেন, ছোটবেলায় তাঁর মধ্যে একরকম উন্মাদনা ছিল হৃতিক রোশনকে ঘিরে। ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ দেখার পরই অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি।চিত্তরঞ্জনের মতো ছোট শহরে থাকলেও হৃত্বিককে নকল করে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন
এরপর স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলির মুখে ‘চিত্তরঞ্জনের হৃতিক’ উপাধি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান তিনি। তবে শুধুই যে স্বপ্ন দেখলেই হয় না, তার জন্যে লড়াইও করতে হয়, এই কথা প্রমাণ করেছেন সৈয়দ। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে যেন পড়াশোনা করে একজন ইঞ্জিনিয়ার কিংবা আইনজীবী হন, কিন্তু সৈয়দের ইচ্ছে অভিনেতা হবে। পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে, ক্লাস টুয়েলভের পরই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন কলকাতায়। এরপর থেকেই শুরু হয়ে স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই।
কলকাতায় এসে কিভাবে আর কোথায় থেকেছেন, তিনি বলেন সেটা হয়তো গুনে বলা মুশকিল। রিষড়া থেকে শুরু করে শেষমেশ টালিগঞ্জ সংলগ্ন গ্রামস রোড পর্যন্ত একাধিক জায়গায় থেকেছেন তিনি। কখনও পকেটে ছিল দেড়শো টাকা, কখনও সাতশো টাকায় পুরো মাস কাটাতে হয়েছে—সেই অভিজ্ঞতাই আজ স্বগর্বে বলেন তিনি। কোনও সহায়তা ছাড়াই শুধু একজন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি লড়েছেন দিনরাত।
আরও পড়ুনঃ ‘নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন ভুলে ১৮ বছর বয়সে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম, ওই কারণেই আর নায়িকা হওয়া হয়ে উঠল না’, নায়িকা না হতে পারার আক্ষেপ আজও রয়ে গেছে সমতা দাসের!
আজ সৈয়দ আরেফিন বাংলা টেলিভিশন জগতের এক পরিচিত নাম। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে জমানো অভিজ্ঞতা আর স্বপ্ন না ছাড়ার তীব্র জেদ। তাঁর গল্প নিঃসন্দেহে অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার, বিশেষ করে তাঁদের জন্য, যারা স্বপ্ন দেখার সাহস রাখে কিন্তু পথটা সহজ নয় জেনে পিছিয়ে পড়ে। সৈয়দের কোথায়— স্বপ্ন দেখলে, তাকে ধাওয়াও করতে হয় সাহস নিয়ে। অতীতে যে অভিজ্ঞতা তিনি পেয়েছেন, সেটাই আজ তাকে সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।