অপমান আর ঘাড় ধাক্কায় কেটেছে প্রথম জীবন! তবু নিজের জেদে অনড় ছিলেন অভিনেতা! কিভাবে স্পট বয় থেকে অভিনেতা হয়ে উঠলেন সুখেন দাস?

বাংলা চলচ্চিত্রের একজন প্রতিভাবান অভিনেতা যাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ আজও বহু সিনেপ্রেমীরা। অভিনেতার নাম সুখেন দাস। এই কিংবদন্তি শিল্পী একজন সফল অভিনেতার পাশাপাশি ছিলেন একজন সুপরিচিত পরিচালকও।

বলাই বাহুল্য, এই অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করলেও দর্শকদের মনে বরাবরের জন্য আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে, ঝাঁ চকচকে দুনিয়ার এই ব্যাক্তির সফল হওয়ার রাস্তাটা মোটেই সহজ ছিল না। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যই ছিল তাঁর সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি।

অভিনেতার জীবনের দরজায় বারবার কড়া নেড়েছিল অবহেলা, যন্ত্রণা। তাও তিনি এই সবকিছুকে উপেক্ষা করে বাংলা ছায়াছবিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। জানেন কি অভিনেতা কোন প্রতিকূলতাকে পার করে জীবনে সফলতার শিখরে উঠেছিলেন?

শোনা যায়, ছোটবেলাতেই পিতৃহারা সুখেন বাবু বড় হয়েছেন কলকাতা শহরের এক অনাথ আশ্রমে। আর্থিক সমস্যা এবং অনাথ আশ্রমের অত্যাচারে একদিন গোপনে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। দু’মুঠো ভাতের জন্য দিনের পর দিন রাস্তায় ঘুরেছেন। অর্থাভাবের জন্য বেশিদূর লেখাপড়াও হয়নি তাঁর।

এরপর একদিন হঠাৎই টালিগঞ্জের এক ডাক্তারের চেম্বারে আশ্রয় পান সুখেন দাস। নিজের খিদে মেটানোর জন্য নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করতেন তিনি। এমন সময় কাজ করতে করতেই স্টুডিও পাড়ায় ঘোরাফেরা করতেন তিনি। দারোয়ানের গলা ধাক্কা থেকে শুরু করে লুকিয়ে লুকিয়ে শুটিং দেখা সবটাই জীবনে পেয়েছেন তিনি।

ভাগ্যের ফেরে হঠাৎই একদিন সুখেনবাবু নজরে পড়েন পরিচালক দেবনারায়ণ গুপ্তের চোখে। এরপর ‘দাসী পুত্র’ নামে এক সিনেমার হাত ধরে ১৯৪৯ সালে সিনেমা জগতে অভিষেক করেন কিংবদন্তি শিল্পী। এরপর ডাক্তারের চেম্বার ছেড়ে সিনেমায় অভিনয় করার পাশাপাশি শুটিং ফ্লোরে স্পট বয়েরও কাজ করেছেন তিনি। একসময় স্টুডিও করাই হয়ে উঠেছিল তাঁর ঘরবাড়ি। এরপর একে একে বহু সিনেমাতে অভিনয় করতে দেখা গেছে সুখেন দাসকে।

অভিনেতার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল- ‘পাপ পুণ্য’, ‘অভিমান’, ‘রাজনন্দিনী’, ‘দাদামণি’, ‘বস্তির মেয়ে রাধা’, ‘কথা দিলাম’, ‘প্রতিকার’, ‘বাবা তারকনাথ’ এবং আরো অনেক। এরপর ধীরে ধীরে নিজের ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরিচালক হয়ে ওঠেন তিনি। শোনা যায় সেই সময় দেবদূতের মত সুখেন বাবুকে সাহায্য করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার।

আরও পড়ুনঃ “আপনার মতো নিম্নরুচির লোক আর দেখিনি!” “সেক্যুলারিজমকে হাতিয়ার করে কেরিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা!” — ঋত্বিক চক্রবর্তীর ‘ময়ূররঞ্জন’ পোস্ট ঘিরে উত্তাল সমাজ মাধ্যম!

অন্যদিকে আবার পরিচালক সুখেন দাস মহানায়িকার কাছে ছবির প্রস্তাব নিয়ে গেলেও সুচিত্রা সেন ফিরিয়ে দেন তাঁকে। কারণ, ততদিনে অভিনেত্রী নিজেকে অভিনয়ে জগত থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। সুখেন বাবুর পরিচালনায় ‘মিলন তিথি’, ‘প্রতিশোধ’, ‘দেনা পাওনা’, ‘অমরকন্টক’- এর মত সিনেমা বক্স অফিসে সেই সময় বিশাল ঝড় তুলেছিল। প্রধানত গ্রাম বাংলার মহিলারাই অভিনেতার ছবি দেখতে ভালোবাসতেন। অবশেষে এক কথায় বলা যেতে পারে প্রতিভাবান এই শিল্পীর কথাও আজও মনে গেঁথে রেখেছেন দর্শক থেকে শুরু করে বিনোদন জগতের প্রতিটা ব্যক্তি।