“বাবার চোখের সামনেই নায়কদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করেছি!” “অতি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে আমার বিপরীতে নায়করাও পর্যন্ত অস্বস্তিতে পড়ে যেত, তাও বাবাকে সরানো যেত না!— অভিনয় জীবনের অজানা দিক নিয়ে অকপট শতাব্দী রায়!

নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রে যিনি এক প্রকার সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন, তিনি অভিনেত্রী ‘শতাব্দী রায়’ (Satabdi Roy)। সময়টা ছিল একেবারে অন্যরকম। প্রসেনজিৎ, তাপস পাল, চিরঞ্জিতদের মতো সুপারহিট নায়কদের সঙ্গে একের পর এক সফল ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি। যদিও এখনকার প্রজন্ম তাঁকে বেশি চেনে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, তবে অভিনয়ের প্রতি তাঁর টান কিন্তু একটুও কমেনি। বহু বছর পরে আবার ফিরেছেন রুপোলি পর্দায়, এক নতুন উদ্যম আর পরিপক্ক উপলব্ধি নিয়ে।

ফেরার পরেই নিজের অতীত জীবনের কিছু অকপট কথা ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেত্রী। তিনি প্রথমেই জানান, একটা সময় এমন এসেছিল যখন আর আগের মতো অভিনয় করতে ভালো লাগত না। একটা অদ্ভুত ক্লান্তি গ্রাস করেছিল তাঁকে। ওই সময়ই পরিচালক প্রশান্ত নন্দী তাঁকে বলেন, “তোমার বিশ্রাম দরকার।” সেই বিরতিই যে এত লম্বা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে, সবচেয়ে চমকে দেওয়ার মতো কথা উঠে আসে এদিন ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর কথায়। শতাব্দী বলেন, “যদি ইতিহাস ঘেঁটে দেখো তাহলে বুঝতে পারবে, আমাদের সময়ে কেমন বাধ্যবাধকতার মধ্যে অভিনয় করতে হতো।

আমার সঙ্গে সব সময় আমার বাবা থাকতেন, আর দেবশ্রীর সঙ্গে ওর মা। যেকোনও দৃশ্য অভিভাবকদের সামনেই অভিনয় করতে হতো আমাদের। ফলে হুটহাট করে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কোনও অবকাশ ছিল না। অন্তরঙ্গ দৃশ্য পর্যন্ত বাবার সামনেই অভিনয় করেছি! অতি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে আমার বিপরীতে নায়করাও পর্যন্ত অস্বস্তিতে পড়ে যেতেন, তাও বাবাকে সেখানে থেকে সরানো যেত না। বাবা বলতো এমন কী আছে যেটা আমি দেখতে পারব না?” এই স্মৃতিচারণ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, বরং একটা সময়ের সামাজিক বাস্তবতাকেও তুলে ধরে।

তখনকার দিনে অভিনয় জীবনে স্বাধীনতার সঙ্গে অনেকরকম সামাজিক বিধিনিষেধ জড়িয়ে ছিল। এমন বাস্তবতার মধ্যে থেকেও শতাব্দী হয়ে উঠেছিলেন এক নম্বর নায়িকা, এটা নিঃসন্দেহে তাঁর প্রতিভার প্রমাণ। উল্লেখ্য, নায়কদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের অভিনয়ের জন্য তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে বরাবর। কিন্তু সবসময়ই খুব স্বচ্ছভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল যে কোনও অভিনেতাকে বিয়ে করবেন না। কারণ, একজন নায়কের জীবনসঙ্গী হতে গেলে নিজেকে খুব কঠোরভাবে গড়ে তুলতে হয়।

আরও পড়ুনঃ এক ছবিতেই বাজিমাত, তারপর আর পর্দায় ফিরলেন না! জীবনের শেষ অধ্যায়ে বয়সের ভারে অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটছে ‘পথের পাঁচালী’র ‘অপু’ সুবীর ব্যানার্জির! সত্যজিৎ রায়ের অপু আজ কোথায়? এখন কী করেন তিনি, কেনই বা ফিরলেন না পর্দায়?

আর তিনি বরাবরই ছিলেন রক্ষণশীল স্বভাবের। তাই সম্পর্কের জায়গাটা খুব সচেতনভাবেই বেছে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন কখনওই কারোর সংসার ভাঙার কারণ হননি, ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করার পরেও। একজন অভিনেত্রী হিসেবে, একজন মেয়ে হিসেবে, এবং পরে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর চলার পথটা যেমন সহজ ছিল না, তেমনই ছিল সাহসিকতায় ভরপুর। আজ, তিনি যখন আবার অভিনয়ে ফিরেছেন, তখন সেই পুরনো অভিজ্ঞতা আর বর্তমান উপলব্ধিই যেন এক নতুন ‘শতাব্দী’কে সামনে আনছে অনেক বেশি সংবেদনশীল, বাস্তব আর স্বচ্ছ।