স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার কিন্তু জীবনযুদ্ধে কাঁধে তুলে নেন মানুষ হাসানোর দায়িত্ব! শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের গল্প কাঁদাবে
চাকর-বাকরের রোল থেকে মূল চরিত্রে অভিনয় বাংলা সিনেমার অন্যতম পরিচিত নাম তিনি ।
যদিও এই ইন্ডাস্ট্রি হাস্যকৌতুক পূর্ণ অভিনেতা হিসেবে বেশি ব্যবহার করলেও হাস্যরসের আড়ালে এই অভিনেতার প্রতিভা হয়ত একটু বেশিই চাপা পড়ে গেছে। শুধুমাত্র কমিক চরিত্র নয় দায়িত্বশীল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রতেও যে তিনি সমান দক্ষ ও তার প্রমাণ তিনি বিভিন্ন সময় দিয়েছেন।
অবশ্যই বুঝতে পারছেন কার কথা বলছি, তিনি বাংলা সিনেমা দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং নামী অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। অসামান্য অভিনয় দক্ষতায় তিনি বারংবার মন জিতে নিয়েছেন বাঙালি দর্শকদের। কৌতুক চরিত্রের পাশাপাশি সিরিয়াস চরিত্রেও তিনি যে সমান দক্ষ তা বোঝাতে হয়তো তার হয়ত একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু তিনি বুঝিয়েছেন। ভালোভাবে বুঝিয়েছেন।
‘মহালয়া’ ছবিতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চরিত্রে কিংবা ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি’ ছবিতে পুরোহিতের চরিত্রে তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে দর্শক! বলতে বাধ্য হয়েছেন এই কোন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়! একটা সময় পর্যন্ত বাংলা সিনেমায় হাস্যরসাত্মক চরিত্রে এই অভিনেতাকে ছাড়া অন্য কারর নামই ভাবতেন না পরিচালকরা। দর্শকে হাসানোর এক অদ্ভুত ক্ষমতা আজও রয়েছে এই অভিনেতার মধ্যে।
কিন্তু মানুষকে হাসানো এই মানুষটার জীবনের পিছনে যে কত কান্না লুকিয়ে রয়েছে তা বোধহয় খুব কম মানুষই জানেন। আমজনতার মুখে হাসি আনা এই পরিচালকের নিজের জীবন কিন্তু একেবারেই রঙিন বা মসৃণ ছিল না। ভীষণ কষ্ট করে জীবনে সাফল্য অর্জন করেছেন।
পড়াশোনাতে মোটামুটি ভালোই ছিলেন তিনি। তবে খেলাধুলাতে তার থেকেও বেশি ভালো ছিলেন বিশেষ করে ক্রিকেট। অভিনেতার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতাতেই। স্কটিশ চার্চ স্কুল থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর জয়পুরিয়া কলেজ থেকে বি.কম গ্রাজুয়েট হন তিনি ।শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের বাবা ছিলেন একজন চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট।
অভিনেতা হওয়ার আগে একজন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তার পারিবারিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, বাস্তবে তো দূর, স্বপ্নতেও তিনি ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন। পারিবারিক আর্থিক সংকট মেটাতে একটি কসমেটিকস কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন তিনি। এরপর মুদ্রণ মাধ্যমেও বেশ কিছুদিন আজ করেছেন।
যদিও ততদিনে অভিনয়ের প্রতি ভালবাসাও তৈরি হয়ে গেছে তার। ১৯৮৭ সালে পূর্ণেন্দু পাত্রীর ‘ছোটো বকুলপুরের যাত্রী’ ছবি দিয়েই প্রথমবারের মতো অভিনয়ের অঙ্গনে পা রাখেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। অভিনয় দুনিয়া তাকে হাত ভরে দিয়েছিল। পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে বকুল প্রিয়া, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, কত ভালোবাসা, প্রতিদ্বন্দ্বী, গুরু শিষ্য, সংসার সংগ্রাম, দাদা ঠাকুর, সজনী, সূর্য, আক্রোশ, মেঘে ঢাকা তারা, খোকাবাবু, রাজমহল, গুগোল-এর কীর্তি, আরও বিভিন্ন ছবিতে পারদর্শিতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। এখনও সমান তালে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে চলেছেন তিনি।