উত্তম কুমার নেই, কিন্তু রয়ে গেছে ঐতিহ্যের ছাপ! আজ‌ও মহানায়কের দুই পুত্রবধূ একসাথে থাকেন একই বাড়িতে, প্রকাশ্যে উত্তম কুমারের পরিবারের অজানা গল্প!

সময় বয়ে চলে ঠিকই, কিন্তু কিছু তারকা এমনই, যাঁদের ছায়া অমলিন থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে। ২৪শে জুলাই ঠিক তেমনই একটা দিন। ১৯৮০ সালের এই তারিখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক অপার অহংকার—উত্তম কুমার। তখনও কেউ ভাবেননি যে বাংলা সিনেমা এমন এক শূন্যতার মুখে পড়তে চলেছে, যাকে পূরণ করা কখনও সম্ভব হবে না। মৃত্যুর ৪৫ বছর পরেও, আজও সেই একই আবেগে ভেসে যায় বহু মন, বহু পরিবার।

উত্তম কুমার মানেই শুধু সিনেমার পর্দায় নিখুঁত অভিনয় নয়, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও বহুবার উঠে এসেছে আলোচনায়। সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বহু কাঙ্ক্ষিত গসিপের বিষয়। যদিও তিনি বিবাহিত ছিলেন, তবুও তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে কোনওদিনও টানাপোড়েন বা প্রকাশ্য বিতর্ক চোখে পড়েনি। কারণ, উত্তম নিজেই ছিলেন শালীনতা আর মর্যাদার প্রতিমূর্তি। আর এই একই মাটির টান ও সম্মানের ধারা বজায় রেখেছেন তাঁর পরিবারও—যার অন্যতম উদাহরণ তাঁর একমাত্র ছেলে গৌতম চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর দুই স্ত্রী।

গৌতম চট্টোপাধ্যায়, পেশায় অভিনেতা, প্রথমে বিয়ে করেন সুমনা চট্টোপাধ্যায়কে। এই বিয়েতে আশীর্বাদ ছিল উত্তম কুমারেরই। গৌতম-সুমনার সন্তান আজকের চেনা মুখ গৌরব চট্টোপাধ্যায়। পরে গৌতম দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন মহুয়া চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু তাতেও পরিবারে কোনও টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়নি। বরং দুই পুত্রবধূ, সুমনা ও মহুয়া, একসাথে একই ছাদের তলায় থাকেন বোনের মতো। তাঁদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই, নেই কোনও গোপন ক্ষোভ। কারণ একটাই—উত্তম কুমারের নাম ও সম্মান যাতে কোনওদিন কলঙ্কিত না হয়। গৌরবও দুই মায়ের সঙ্গেই সমান স্নেহ ও শ্রদ্ধায় সম্পর্ক রাখেন, যা আজকের দিনে সত্যিই বিরল।

মহুয়া জানান, ছোটবেলায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একবার সিনেমা দেখতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। উত্তম কুমার সেদিন হাসিমুখে বলেছিলেন, ‘‘কখনও যদি সিনেমা দেখতে ইচ্ছে হয়, আমাকে বলবি, আমি নিজেই টিকিট কেটে দেব।’’ এমনই ছিলেন তিনি—সহজ, হৃদয়বান আর উদার। দুই পুত্রবধূর কথায়, উত্তম কুমার কখনও অকারণে রেগে যেতেন না। তবে অন্যায় দেখলে তাঁর প্রতিবাদ ছিল সরাসরি। নিয়মের ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর, যা তাঁকে এক ‘ডিসিপ্লিনড’ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিল।

আরও পড়ুনঃ ফুলকি-পরিণীতাকে পিছনে ফেলে পরশুরামের জয়জয়কার, কোন অবস্থায় জগদ্ধাত্রী ও রাণী ভবানীর?

এবছর তাঁর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিবার একত্রিত হয়ে স্মৃতিচারণ করেছে। কোনও আড়ম্বর নয়, বরং অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা থেকেই তাঁকে স্মরণ করেছেন গৌরব, সুমনা ও মহুয়া। উত্তম কুমার আজও তাঁদের জীবনের একটি শক্ত ভিত। শুধু পর্দার মহানায়ক নয়, ঘরের মানুষ হিসেবেও তিনি রেখে গিয়েছেন এক অমূল্য শিক্ষা—মর্যাদা, সহানুভূতি আর পারিবারিক বন্ধনের। সেই শিক্ষাই আজও বয়ে চলেছেন তাঁর উত্তরসূরিরা।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।