“বহুবার রাঁচির পাগলা গারদে গেছি…প্রেম আর বিচ্ছেদের আ’ঘাত সাংঘাতিক!” “আমার দুটো বিয়েই আগের জন্মে লেখা ছিল!”— মৃ’ত্যুর কিছুক্ষণ আগেই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেগঘন স্বীকারোক্তি!

অভিনয় আর রাজনীতির দুই জগৎ জুড়েই জনপ্রিয় মুখ ছিলেন অভিনেতা ‘জয় বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Joy Banarjee)। দীর্ঘদিন ধরে সিওপিডি-তে ভুগছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত আর লড়াই চালিয়ে যেতে পারলেন না। গত ১৫ আগস্ট শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা সাধ্য মতো চেষ্টা করলেও ১৭ আগস্ট তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। অবশেষে ৬২ বছর বয়সে নিভে গেল তাঁর জীবনের আলো (Joy Banarjee Death)। অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল একেবারে সিনেমার মতো ওঠা-নামায় ভরা।

নব্বইয়ের দশকে চুমকি চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর জুটি পর্দায় ঝড় তুলেছিল। বিশেষত ‘হীরক জয়ন্তী’ তাঁকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে দেয়। তবে এই সাফল্যের মাঝেই ভাঙন ধরতে শুরু করে তাঁর ব্যক্তিজীবনে। চুমকির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে বিয়ের কথাও উঠেছিল, কিন্তু সেই সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এই ব্যর্থতা তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। ধীরে ধীরে অভিনয় থেকেও দূরে সরে যান জয়, যেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন সবার কাছ থেকে। এরপর জীবনে আসে নতুন অধ্যায়।

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালোবেসে তিনি প্রথমে সংসার শুরু করেন। তবে সেই সম্পর্কের পরিণতি হয় বিচ্ছেদ। আবার দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন অঙ্কিতা ব্যানার্জীকে। জীবনের একাধিক সম্পর্ক ভাঙন তাঁকে আরও ভেতরে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল। তবুও তিনি মানতে চাইতেন যে এই সবই ভাগ্যের লিখন। মৃ’ত্যুর কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে নিজের বিবাহিত জীবনকে পূর্ব জন্মের নিয়তি বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

তাঁর নিজের কথায়, “অনন্যার সঙ্গে আমার বিয়ে বা প্রেম কাজের সূত্রে নয়, বরং এই যে আমার দুটো বিয়ে পূর্ব জন্মের নির্ধারিত। আগের জন্যেই বোধহয় লেখা ছিল এদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। একটি বিউটি কনটেস্টে অনন্যা সঙ্গে আমার আলাপ, নিজের থেকে এসেই প্রথম আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। সেই মুহূর্তে দুটো অন্য মেয়ের সঙ্গে আমার কথাবাত্রা চলছে। রীতিমতো সেক্রেটারি রেখে তাদের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফিক্স করতে হতো।

সেই মুহূর্তে ওই দুটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করে দেই। আমার বর্তমান স্ত্রী অঙ্কিতার সঙ্গেও একটি যাত্রার সূত্রে আলাপ। ওর কাছে আমি নিজের থেকেই গেছিলাম, একজন জনপ্রিয় নায়ক হয়েও ওকে দেখামাত্রই ছটফট করতে শুরু করি। বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে বলবো, প্রেমের আঘাত সাংঘাতিক! হাজারীবাগে রাচি পাগলা গারদের কাছাকাছি জন্ম আমার। বহুবার সেই পাগলা গারদে গেছি, সেখানে দেখেছি অধিকাংশ ভর্তি হয়েছেন প্রেম এবং বিচ্ছেদের আঘাত মনে নিয়ে।”

আরও পড়ুনঃ “এক সময় মনে হয়েছিল সব শেষ…”– মা’রণ রোগ ক্যা’ন্সারকে জয় করে, অসংখ্য ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর পর্দায় ফিরছেন সব্যসাচী চক্রবর্তীর বোন পাপিয়া সেন! বহু বছর পর আবার টেলিভিশনে, দেখা যাবে কোন নতুন ধারাবাহিকে?

উল্লেখ্য, রাজনীতিতেও ভাগ্য পরীক্ষা করেছিলেন এই অভিনেতা। সক্রিয়ভাবে যোগ দিলেও বড় কোনও সাফল্য পাননি। শেষ জীবনে মায়ের সঙ্গেই ছিলেন, অনেকটাই নীরব, আলোচনার বাইরে। তবুও বিনোদন জগত কিংবা রাজনীতি—কোথাও তাঁর নাম মুছে যায়নি। বরং নানা উত্থান-পতনের মধ্যেও তাঁর জীবনকে মানুষ মনে রেখেছে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে। অসুস্থতার খবর পেয়ে প্রাক্তন স্ত্রী অনন্যা ছুটে গিয়েছিলেন তাঁকে দেখতে এবং শেষ সময়ে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। শেষমেশ দীর্ঘ রোগভোগের কাছে হার মানলেন জয়।