টেলিভিশনের পর্দা এক সময় ছিল যখন প্রবীণ অভিনেত্রীদের চেনা মুখ দেখা যেত । সন্ধ্যা নামলেই যাঁদের মুখ দেখার জন্য বসে থাকতেন দর্শক, আজ তাঁরাই যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন ছোট পর্দা থেকে। কন্টেন্টের মান, শ্যুটিংয়ের পরিবেশ, সময়ের চাপে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছোট পর্দার প্রতি উৎসাহ হারাচ্ছেন একের পর এক অভিজ্ঞ শিল্পী। কিছুদিন আগেই ছোট পর্দা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছিলেন অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল। এবার সেই একই পথে হাঁটলেন লিলি চক্রবর্তী।
শেষবার ‘নিমফুলের মধু’ ধারাবাহিকে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তারপর আর ধারাবাহিকে তাঁকে সেভাবে দেখা যায়নি। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “গল্পের শুরু ভালো থাকে। কিন্তু পরে এমনভাবে মোড় নেয় যে, সেটা আর বোঝা যায় না। বিরক্ত লাগে।” অভিনেত্রীর মতে, ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভীষণ একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে। গল্পের কোনও স্থায়িত্ব নেই, নেই চরিত্রের গভীরতাও। তাই নিজেই ছোট পর্দা থেকে সরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
তবে অভিনয় ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। বয়স যতই হোক, এখনও ভাল চরিত্র ও চিত্রনাট্যের খোঁজে থাকেন তিনি। সেটাই তাঁর কাজের প্রতি প্রেম ও দায়বদ্ধতার প্রমাণ। তাই ছোট পর্দা না হলেও, সিনেমায় ফিরছেন লিলি। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ‘আজও অর্ধাঙ্গিনী’-তে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। নিজের চরিত্র নিয়ে আশাবাদী অভিনেত্রী জানালেন, এই ধরনের পরিণত, বাস্তবধর্মী চরিত্রই তাঁকে টানে।
শুধু লিলি চক্রবর্তী নন, একই সুর শোনা গিয়েছে প্রবীণ অভিনেত্রী অনামিকা সাহার গলাতেও। তাঁর কথায়, “নতুন প্রজন্মের সঙ্গে মিশে কাজ করা কঠিন হয়ে উঠছে। কেউ এখন আর অভিনয়ের পড়াশোনা করে না।” তিনি আরও জানান, অনেক সময়েই সেটে সময় কাটাতে ভাল লাগে, কারণ বাড়িতে একা সময় কাটা কঠিন। তবুও পেশার প্রতি ভালোবাসা থাকলেও, আজকের ছোট পর্দার কাজের ধরন দেখে হতাশ তিনি। তাই তিনি এখন সিনেমার মত বেশি পরিণত এবং সংবেদনশীল মাধ্যমেই কাজ করতে চান।
আরও পড়ুনঃ “কুঁচকানো চামড়ার জন্য ধারাবাহিক থেকে বাদ পড়েছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়!”— বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলা ধারাবাহিক এবং বিনোদন জগতের অন্দরমহল নিয়ে বিস্ফো’রক অভিনেতা চন্দন সেন!
একের পর এক অভিজ্ঞ অভিনেত্রীর ছোট পর্দা থেকে সরে আসা বাংলা বিনোদন জগতের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। এই প্রজন্মের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও মান বজায় রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। রত্না ঘোষাল, অনামিকা সাহা, লিলি চক্রবর্তীর মত গুণী অভিনেত্রীরা যেদিন ছোট পর্দায় নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারার কথা বলেন, তা গোটা ইন্ডাস্ট্রিরই আত্মবিশ্লেষণের সময় এসে পড়েছে। এখন দেখার, ছোট পর্দা এই প্রবণতা বুঝে নিজেকে কতটা বদলাতে পারে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।