টলিউড ইন্ডাস্ট্রির বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ‘তনিমা সেন’ (Tanima Sen), যাঁকে দর্শক একসময় টেলিভিশন থেকে সিনেমা— সব মাধ্যমেই সমানভাবে দেখেছেন, আজ যেন এক অনিশ্চিয়তার জীবন কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে একাধিক চরিত্রে সবার মন জয় করা এই অভিনেত্রী বর্তমানে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না বললেই চলে। এর আগেও একাধিকবার জানিয়েছিলেন, তিনি কাজ ছেড়ে দেননি, বরং কাজই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে। স্টার জলসার সদ্য শেষ হওয়া ‘উড়ান’ ধারাবাহিক থেকে বিনা নোটিশে বাদ দেওয়া হয় তাঁকে।
এরপর প্রায় ২০০ দিনেরও বেশি সময় তিনি একেবারে বেকার অবস্থায় কাটিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁকে দেখা যাচ্ছে স্টার জলসার ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’তে, নেতিবাচক চরিত্রে। এছাড়াও অতিথি চরিত্রে কিছু ধারাবাহিকে মাত্র পাঁচ-সাত দিনের কাজ হাতে এসেছে বটে, তবে এই সামান্য সুযোগে জীবিকা চলবে না, তা তিনি নিজেই বুঝে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতেই তিনি অভিনয়ের বাইরে অন্য পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক থাকলেও জীবন তাঁকে নিয়ে এসেছিল অভিনয়ের মঞ্চে।
আবার সেই আঁকাআঁকি নিয়ে নতুন কিছু করতে চান তিনি। একটা সময় জানিয়েছেন, ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল খুলেছেন ‘শিল্প বাসনা’ নামে। সেখানে প্রখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পীদের সাক্ষাৎকার, প্রয়াত শিল্পীদের কাজের উপকরণও তুলে ধরবেন দর্শকের সামনে। তাঁর মতে, বাঙালি শিল্পীদের কাজকে নিয়ে যথেষ্ট প্রচার হয়নি সমাজ মাধ্যমে, তাই এই উদ্যোগে তিনি অন্যরকম কিছু করতে চান। তবে তাঁর এই নতুন যাত্রার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বড় আক্ষেপ। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থাকা সত্ত্বেও টলিউড তাঁকে নিয়মিত কাজ দিচ্ছে না।
তনিমা খোলাখুলি বলেছিলেন, বর্ষীয়ান শিল্পীদের জন্য প্রতিদিনের কাজ করা খুব সহজ নয়, তবে মাসে অন্তত ১২-১৩ দিনের কাজ থাকলে ভালভাবে চলা যেত। বাস্তব চিত্র কিন্তু একেবারেই উল্টো। কাজ না থাকায় অর্থকষ্ট বাড়ছে দিন দিন। পুজোর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে যখন চারপাশে কেনাকাটার হিড়িক, নতুন জামাকাপড় বা সাজসজ্জার উচ্ছ্বাস, তখন তনিমা অকপটে জানালেন— “এবার পুজোতে একটা সুতোও কেনা হয়নি, অনেকদিন কাজ ছিল না তো, হাতে টাকা-পয়সাও নেই।”
আরও পড়ুনঃ “সনাতনী আর্যভট্ট আর শূন্য ছিল বলেই আয়ের হিসেব করতে পারে!” “সনাতন মানুষকে উগ্রতা শেখায় না, সনাতন থাকাতেই এমন মন্তব্য করেও বেঁচে গেলে ভাই!”—অনির্বাণের ব্যাখ্যার জবাবে পাল্টা রুদ্রনীল ঘোষ!
এই স্বীকারোক্তি শুধু এক শিল্পীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, টলিপাড়ার বর্তমান বাস্তবতাকেও প্রকাশ করছে। গত এক বছরে বহু শিল্পী কাজ হারিয়েছেন, অনেকেই নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন কিংবা সামাজিক মাধ্যমে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছেন। তনিমার কথায় এই সমস্যাটা ব্যক্তিগত নয়, বরং সারা ইন্ডাস্ট্রির এক যৌথ সংকট। আদালত পর্যন্ত এই নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। তবু তাঁর মনোবল ভাঙেনি। বিশ্বাস রাখেন, একদিন হয়তো আবারও নিয়মিত পর্দায় ফিরবেন তিনি।