“গর্ভধারিণী মাকে চিনি না, বাবাকে ‘কাকা’ বলেই ডাকতাম”— মাত্র পাঁচ মাস বয়সেই যাঁকে ত্যাগ করেছিলেন জন্মদাতা, তুলে দিয়েছিলেন অন্যের হাতে! সেই বেদনা আজও বহন করছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়!

বাংলা চলচ্চিত্র জগতের বর্ষীয়ান এবং অন্যতম শ্রদ্ধেয় অভিনেতা ‘পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Paran Bandopadhyay)। বয়সের ভার যেন এখনও তাঁর গতিকে থামাতে পারেনি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেবের সঙ্গে তাঁর অনবদ্য রসায়ন দর্শকদের মন জয় করেছে পর্দায়। করোনার পর ‘টনিক’, তারপর ‘প্রধান’-এও তাঁর উপস্থিতি পর্দায় এনে দিয়েছে এক অন্য মাত্রা। অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালবাসা আর নিষ্ঠা এখনো যেন অবিচল। তবে পর্দার আলো-ঝলকানির আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে তাঁর জীবনের এক গভীর অপূর্ণতা— যা তিনি খুব কমই প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার জীবনী সেখানে যদিও উল্লেখ আছে তার প্রথম জীবন সম্পর্কে, এদিন এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা নিজের জীবনের সেই অজানা অধ্যায়ের কথা খোলাখুলি ভাগ করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ” পাঁচ মাস বয়স তখন, মা মারা যান। নিজের বাবা তখন এক পিসতুতো বোনের কাছে দিয়ে দেন আমায়। তবে থেকেই ওটা আমার পরিবার আর উনিই আমার মা।” গর্ভধারিণী মায়ের মুখ তিনি দেখেননি, কিন্তু যিনি নিজের স্নেহে ও ভালোবাসায় তাঁকে বড় করেছেন, সেই মাকে তিনি আজীবন নিজের জীবনের আসল মা হিসেবেই মানেন।

অভিনেতা জানান, ছোটবেলায় তিনি তাঁর বাবাকে ‘কাকা’ বলে চিনতেন। পরিবারের কেউ কেউ তাঁকে সত্যিটা জানাতে চাইলেও শৈশব-কৈশোরের বয়সে সেই কথা তাঁর কানে পৌঁছয়নি। অভিনেতা বলেন, “তরুণ বয়সের প্রারম্ভেই সত্যিটা আমার সামনে আসে, তারপরেও বাবাকে কাকা বলেই ডেকেছি। সেই অনুভূতিটা কখনও তৈরি হয়নি।” এই কথার মধ্যে দিয়ে যেন উঁকি দিল এক গভীর আবেগ, যেখানে রক্তের সম্পর্কের থেকেও বড় ভালোবাসা ও স্নেহের বন্ধন।

তিনি আরও ভাগ করলেন তাঁর নামের উৎস সম্পর্কেও এক মধুর স্মৃতি। অভিনেতা বললেন, “মায়ের মাকে আমি দাদা বলে ডাকতাম। তিনি আমায় ‘বুকের ধন, আমার পরাণ’ বলে আদর করতেন। সেই থেকেই আমার নাম পরাণ।” একই সঙ্গে স্মৃতিচারণায় ফিরে এল তাঁর শৈশবের গ্রামীণ দিনগুলিও। গ্রামের বাড়িতে থাকাকালীন বাবা নাকি প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেখা করতে আসতেন, কখনও মেলায় নিয়ে যেতেন, কখনও খালি গলায় গান ধরতেন। স্মৃতির পাতা ঘেঁটে তিনি বললেন, “অনেক অল্প বয়স তখন আমার।

আরও পড়ুনঃ “দীপকদা খুবই সুদর্শন, দারুণ লাগত সময় কাটাতে…আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল প্রেমের মতো!”— অকপট শতাব্দী রায়! স্বামীর চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে সহ-অভিনেত্রী রসায়ন থেকে ঘনিষ্ঠতা টের পেয়ে, কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন স্ত্রী রত্নাবলী? জানলে চমকে যাবেন!

বাবা একদিন আমায় আর বড় দাদাকে মেলায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যকে সাক্ষী রেখে তিনি একটা গান শুনিয়েছিলেন, অসম্ভব সুন্দর গলা ছিল ওনার। এরপর যখন বড় হয়ে কলকাতায় আসি। একদিন কলেজ থেকে ফিরে চিঠি পাই বাবা মারা গেছেন। তখন তেমন কিছু অনুভূতি হয়নি। কিন্তু খবরটা পেয়ে দাদা যখন সেই গানটা ধরল, আমার চোখের বাধ ভেঙে জল এসেছিল। সেদিনের পড়ন্ত বিকেলের স্মৃতিরা চোখের সামনে ভিড় করে এসেছিল।” পর্দায় যতই চরিত্র বদলাক, বাস্তব জীবনে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেন এক চিরন্তন চরিত্র— যিনি মুগ্ধ করে রাখছেন সবার মন।