ফুচকা-ঝালমুড়ি খেতে গেলে গুনতে হবে মাশুল, নতুন আইন আনছে সরকার!

স্ট্রিট ফুড বিক্রির ক্ষেত্রে এবার আরো কড়াকড়ি আনলো রাজ্য সরকার। ফুচকা,ঝালমুড়ি এমনকি ফল বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য দফতরের রেজিস্টার বাধ্যতামূলক করলো রাজ্য সরকার।স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে খবর,রাজ্যের সর্বত্র সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফুড সেফটি অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব থাকবে লাইসেন্স বিষয়টি।

২০১১ ফুড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড সেফটি অথরিটি অব ইন্ডিয়া অধীনে গোটা দেশে খাদ্য সুরক্ষা আইন কার্যকর হয়। কেন্দ্রীয় আইন রাজ্যে রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতর কার্যকর করে। এই আইন অনুযায়ী যে কোনও খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করলেই রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। বার্ষিক ১০০ টাকা করে দিতে হয় ছোট বিক্রেতাদের। আর বার্ষিক ব্যবসা ১২ লাখ টাকা বা তার বেশি হলেই ফুড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। দু’হাজার টাকা থেকে শুরু হয় ফুড লাইসেন্সের জন্য বার্ষিক খরচ। কোন দ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে তার উপরে নির্ভর করে কত টাকা হবে লাইসেন্স ফি।food license

দীর্ঘদিন ধরেই এই আইন নিয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি রাজ্য সরকার মূলত কর্মী সংখ্যার অভাবে।২০১৮ সালে ১৪০ জন ফুড অফিসার নিয়োগ করা হয়।যদিও অতিমারী পরিস্থিতির মধ্যে এই দিকে গুরুত্ব দিতে পারেনি রাজ্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই এবার উদ্যোগ নিল রাজ্য।

স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য সুরক্ষা শাখার অন্যতম প্রধান তথা ফুড সেফটি ইনস্পেক্টিং অফিসার বিশ্বজিৎ মান্না সংবাদমাধ্যমে জানান ‘‘বর্তমান আইনে বেবি ফুড থেকে ফুচকা— সবই খাদ্য সুরক্ষা শাখার অধীনে। আমরা এখন রাজ্যের সর্বত্র এই আইন সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের সচেতন করার কাজ শুরু করেছি। ছোট ব্যবসায়ী, এমনকি, রাস্তার পাশে বসা অস্থায়ী দোকানদার থেকে হকার খাদ্যসামগ্রীর ব্যবসা করলেই এফএসএসএআই রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। প্রতি বছর ১০০ টাকা দিয়ে পুনর্নবীকরণও বাধ্যতামূলক। আর বড় অঙ্কের ব্যবসা যাঁরা করেন তাঁদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স থাকাও বাধ্যতামূলক।’’ পাশাপাশি তার আরো দাবি প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হবে। তারপর কাগজপত্র যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এমনকি আরো জানা যাচ্ছে লাইসেন্স ছাড়া কেউ খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন অনুসারে নিয়ম ভঙ্গ করলে ছোট ব্যবসায়ীদের ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আর বছরে ব্যবসা ১২ লাখ টাকার বেশি হওয়া সত্ত্বেও যাঁরা ফুড লাইসেন্স করাবেন না তাঁদের ছ’মাসের কারাবাস অথবা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা দুটোই হতে পারে।

বড়ো দোকান বা স্থায়ী দোকানের লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশান থাকলেও ছোটো বা স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রে যে লাইসেন্স নেই একথা সকলের জানা। তাই এবার এই বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য।যে সমস্ত ব্যাবসায়ী ঘুরে ঘুরে খাবার বিক্রি করেন তাদের ক্ষেত্রেও লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করছে রাজ্য। জেলা আধিকারিক এক কর্তা জানান ‘‘খাবারের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই খাদ্য সুরক্ষা এবং তা নিয়ে সচেতনতা দরকার। প্রাথমিক পর্বে আমরা রাজ্যের সব খাদ্যসামগ্রী বিক্রেতার তথ্য একত্রিত করতে চাইছি। তার জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা দরকার। এর পরে দফায় দফায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

এই প্রসঙ্গে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য নিরাপত্তা আধিকারিক তৃষা হাজরা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য সুরক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে সমস্ত খাদ্য ব্যবসায়ীদের ফুড লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন করানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এফএসএসএআই আইন অনুযায়ী। ফুড লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া খাদ্য ব্যবসা করা আইনত দণ্ডনীয়। ছোটো-বড়, স্থায়ী-অস্থায়ী সমস্ত রকম ব্যবসায়ীকেই এই রেজিস্ট্রেশন বা ফুড লাইসেন্স করাতে হবে।’’