দিনে ১৪ ঘণ্টা শুটিংয়ের পরেও নাচ করতেই হবে অভিনেত্রী আয়েশা ভট্টাচার্যকে, Exclusive Interviewতে রোহিণী শোনালেন তার নাচ শেখার অবাক করা কাহিনী

কখনও তিনি খনা, আবার কখনও তিনি রোহিণী। একই অঙ্গে কত রূপ। হ্যাঁ, আমরা অভিনেত্রী আয়েশা ভট্টাচার্যর কথা বলছি। এই মুহূর্তে তিনি ব্যস্ত কাঞ্চি ধারাবাহিকের “রোহিণী”র চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে। এরই মাঝে দৌড়ে গেলাম তাঁর কাছে। কারণটা এবার কাজ নয়, কাজের বাইরেও যে আয়েশার একটা আলাদা জগৎ আছে সেটাকে আপনাদের জানাতে।

রোহিণী ওরফে আয়েশার সঙ্গে কথা বলে বরাবর মিষ্টি অভিজ্ঞতাই হয়েছে আমার। তো কথায় কথায় আগে জেনেছিলাম ওঁর নাচের প্রতি আসক্তির কথা। নাচকে ও কী পরিমাণ ভালোবাসে এবার সেটাই জানতে গেলাম ওঁর কাছে।

নাচ নিয়ে বরাবর ও প্র্যাকটিস করে। এখন তো শুটিংয়ের সময় ১২ ঘণ্টা থেকে ১৪ ঘণ্টা হয়ে গেছে। তবুও যেভাবে উনি ম্যানেজ করেন সেটা সত্যিই ভাবার মতো। ক্লাস ২ তে পড়ার সময় থেকেই ওঁর নাচের প্রতি ভালোবাসা। জানালেন তিনি যখন মায়ের পেটে সেই সময়েই নাকি তাঁর মা এক পার্টিতে যান এবং মন ভরে নাচ করেন। তারপর সকলেই আয়েশার মাকে বলেছিলেন তাঁর যে সন্তানই হোক না কেনো নাচ করতে করতেই জন্মাবে।

ছোট থেকেই নাকি আয়েশা হৃত্বিক রোশনের বড় ভক্ত। এই বলি নায়কের গান চললে আর আয়েশাকে টিভির সামনে থেকে সরানো যেত না। আর এখন ক্লাসিক্যাল থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য নাচের নানা ধরণ নিয়ে উনি চর্চা করছেন।

জিজ্ঞেস করলাম এই নাচের জন্যে কি আয়েশা আলাদা করে তালিম নিয়েছেন? উনি উত্তর দিলেন নাচের জন্যে প্রথম তিনি শিখেছেন ওডিসি। তবে আয়েশা নাকি বরাবর একটু ছটফটে স্বভাবের। তাই যে নাচই শিখতেন সেটা বেশিদিনের জন্যে নয়। ওড়িশির ক্ষেত্রেও একই হলো। এই সময়ে তাঁর মনে হলো “ঘুরে ঘুরে যে নাচ হয়” সেটা শিখবেন। এই ঘুরে ঘুরে নাচটা কী সেটাই ভাবছেন তো?

এই নাচ হলো কত্থক। হ্যাঁ, এরপর প্রশিক্ষক খুঁজে তাঁর কাছে দৌড়ালেন আয়েশাকে নিয়ে তাঁর মা। কিন্তু নায়িকার বয়স তখন এতটাই ছোট যে তিনি নিতে চাইলেন না। তবে আয়েশার মা নাছোড়বান্দা। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষক আয়েশার পরীক্ষা নিলেন। ওই বয়সে না শিখেই যেভাবে বোল দেখালেন আয়েশা তাতে তো মাথায় হাত শিক্ষকের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি জানালেন কিছু মাস আয়েশা তাঁর কাছেই শিখবেন ব্যক্তিগতভাবে। সেটা সম্পূর্ণ হলে শিক্ষক নিজেই ঠিক করে দেবেন কোন ব্যাচে আয়েশাকে দেওয়া যায়।

যাই হোক, এই কত্থকপ্রীতিও দীর্ঘস্থায়ী হলো না। আসলে সেই সময়েই বেরিয়েছিল হৃত্বিক রোশন, অভিষেক বচ্চন অভিনীত সুপারহিট “ধুম” সিনেমাটি। তার গানগুলিও ছিল সুপার ডুপার হিট। আর সেই “ধুম মাচালে” গানের প্রেমে পড়েন আয়েশা। ব্যাস, ঘুরে গেলো মাথা। এবার তিনি শিখবেন এই নাচ।

তবে কোনও শিক্ষকই তো তাঁকে আলাদা করে এই নাচ শেখাবেন না। তাই খোঁজ চললো ওয়েস্টার্ন নাচের শিক্ষকের। এই সময়েই ভাগ্যক্রমে বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার শ্যামক দাভারের ওয়ার্কশপ চলছিল। সেখানেই ভর্তি হলেন শেষে।

এ তো গেল আয়েশার নাচের প্রশিক্ষণ নেওয়ার গল্প। তবে শুরুতেই যেটা বলেছিলাম যে আয়েশার একটা আলাদা জগৎ আছে অভিনয়ের বাইরে সেটা নিয়েও বলবো। নায়িকা এখন রীতিমতো নাচ শেখান কিছু কচি-কচি বাচ্চাদের।

আয়েশা ভট্টাচার্য এখন অনলাইনে নাচ শেখাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলাম এখন তো করোনা অনেকটাই কম, তাই সামনে থেকেই তো শেখাতে পারেন। অভিনেত্রী জানালেন এখন তিনি উপযুক্ত স্থান খুঁজছেন নাচ শেখানোর স্কুল তৈরি করার।

তবে অনলাইনে নাচ শেখানোর আর শেখার বিষয়ে অনেকেরই মনে খুঁতখুত রয়েছে। নায়িকাও নিজে প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন যে অনলাইনে আদৌ তিনি সঠিকভাবে নাচ শেখাতে পারবেন কিনা। তবে তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তাঁর ছাত্রীরা। তারা ভরসা দিয়েছে যে “দিদি তুমি নাচ শেখাও অনলাইনে, তুমি পারবে”। আর এভাবেই এখন চলছে।

নায়িকা সোশ্যাল মিডিয়া যথেষ্ট সক্রিয় এবং মাঝে মাঝেই তাঁর নাচের বিভিন্ন ভিডিও তিনি শেয়ার করে থাকেন। অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গেই শনিবার এবং রবিবার না সেখানে এখন তিনি প্রতি সপ্তাহে। জিজ্ঞেস করেছিলাম ক্লান্তি আসে না? অভিনেত্রীর উত্তর ছিল যত ব্যথা করুক, যত হাত ভাঙুক, পা ভাঙুক যাই হোক না কেন নাচই তাঁর কাছে তার ওষুধ। নাচের প্রতি ভালোবাসা যেন কখনোই শেষ না হয় এটাই আমাদের প্রার্থনা।