বাংলার স্বর্ণযুগের সবচেয়ে বড় নক্ষত্র পরিচালক তিনি। তিনিই প্রথম দেশকে এনে দিয়েছিলেন অস্কারে জয়ের আনন্দ। পথের পাঁচালী থেকে অপুর সংসার, সোনার কেল্লা থেকে জয় বাবা ফেলুনাথ, গুপি গাইন বাঘা বাইন থেকে নায়ক, একের পর এক চিরস্মরণীয় সিনেমা বাংলাকে উপহার দিয়ে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সিনেমাকে। তবে পরিচালক হিসেবে বিশ্বব্যাপী তাঁর সুখ্যাতি থাকলেও তিনি কিন্তু ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি। আর বাঙালিরা যে ভোজনরসিক একথা জানান সকলেই। ঝাঁঝ, মশলা, মিষ্টি সবটাই যেখানে একসঙ্গে পাওয়া যায় সেখানে মানুষ খাদ্যরসিক না হয়ে যাবে কোথায়! এর বাইরে ছিলেন না বাংলার কিংবদন্তি সাহিত্যিক এবং পরিচালক সত্যজিৎ রায় (Satyajit Roy)।
জয় বাবা ফেলুনাথে ডাল, ভাত, মাছের ঝোল, জিলিপি, রাবড়ি, দই, মাংসের ঝোল, কৈলাস কেলেঙ্কারির সেই খিচুড়ি সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা, রুটি, তরকা, মাংস, নতুন গুড়ের সন্দেশ, মিহিদানা। এমনকি ফেলুদার গো’য়েন্দাগিরিতে মুরগির মাংস- যতই বলা হবে ততই যেন কম। জানা গেছে আপামর বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের প্রিয় পরিচালক এবং সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায় ছিলেন অত্যন্ত খাদ্যরসিক মানুষ। নানা বাঙালি খাওয়ার খেতে খুব ভালোবাসতেই তিনি। যার নিদর্শন বারবার পাওয়া যায় তার নির্মিত এবং রচিত সিনেমা এবং বইগুলোতে।
একটি পুরোনো সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে সত্যজিৎ রায়ের প্রিয় খাদ্য তালিকা সম্পর্কে। আর পাঁচজন বাঙালিদের মধ্যেই বাড়িতে লুচি, বেগুন ভাজা, আলুর দম, আর ডাল হলেই খুব খুশি হতেই তিনি। মাছের কোন পদ তাঁকে বিশেষ খেতে দেখা যেত না তবে অভিনেতা অনুপ ঘোষালের বাড়িতে গিয়ে নাকি কবজি ডুবিয়ে খেতেন তিনি। অভিনেতার বাড়িতে কাঁচালঙ্কা আর সর্ষে দিয়ে সর্ষে ইলিশ খেতে দারুন ভালোবাসতেন তিনি। অন্তত পক্ষে দুই পিস ইলিশ মাছ তিনি খেতেন।
বাঙালিদের মধ্যে বেশিরভাগ সকলেরই অত্যন্ত প্রিয় পাঁঠার মাংস। পরিচালক সত্যজিৎ রায়ও ছিলেন না তার ব্যতিক্রম নন। জানা গেছে তিনি হামেশাই বলতেন মুরগির মাংসের আবার কোন স্বাদ আছে নাকি! তাছাড়াও জানা গেছে ডালের মধ্যেও বিশেষ করে বিউলির ডাল আর অড়হর ডাল ছিল তার অতি প্রিয় খাওয়ার। তবে বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যতই খুঁতখুঁতে হননা কেন, কর্মক্ষেত্রে কিন্তু তিনি ছিলেন একেবারেই আলাদা।
আরো পড়ুন: পরাগ সম্পূর্ণ সুস্থ! অবশেষে শিমুলের কাছে ধ’রা পড়ে গেল সে! এবার কোন দিকে ঘুরবে তাদের সম্পর্ক? ভালোবাসা নাকি বি’চ্ছেদ ?
স্টুডিওতে দুটি স্যান্ডউইচ আর একটু দই হলেই হয়ে যেত তার খাওয়াদাওয়া। এছাড়াও শুটিংয়ের দরুণ ঘি আর দানা চিনি দিয়ে মেখে মুড়ি খেতে নাকি খুব পছন্দ করতেন তিনি। পিতার পছন্দের খাওয়ারের বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে পুত্র সন্দীপ রায় জানিয়েছেন “ছোটবেলায় আমরা মাঝেমধ্যেই পার্কস্ট্রিটের স্কাইরুমে কন্টিনেন্টাল খেতে যেতাম। বাড়িতে কখনও কখনও রয়েলের বিরিয়ানিও আসত। তবে বাবা কিন্তু কখনওই খুব একটা পাঁচতারার হোটেলে যেতেন না।”