স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ, মা আর ভাইকে অকালে হারিয়ে কেমন আছেন স্বর্ণ যুগের অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী?

Chumki chowdhury: নব্বইয়ের দশকদের প্রথমেই বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ঘটেছিল তাঁর আবির্ভাব। বিশেষত লোকেশ ঘোষের সঙ্গে তাঁর জুটি পর্দায় দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ধনি পরিবারের মুখোরা মেয়ে অথবা বেচারি দুখিনী বউমা চরিত্রে দারুণ অভিনয় করতেন তিনি। তবে একসময় চলচ্চিত্র জগৎ থেকে হারিয়ে যান তিনি। নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল তাঁর জীবন। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ, বাবার মৃত্যু, তারপরই মায়ের চলে যাওয়া এমনকি ছোট ভাইয়ের অকাল প্রয়াণও সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। বর্তমানে কেমন আছেন অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী (Chumki chowdhury)?

ছোটবেলা ছিলনা না আর্থিক সচ্ছলতা, মায়ের থেকেই নাচ শিখেছেন চুমকি চৌধুরী:

১৯৭০ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন বাংলার সিনেমার জনপ্রিয় পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী এবং তাঁর মায়ের নাম জয়শ্রী চৌধুরী। অভিনেত্রীর ছোটবোনের নাম রিনা এবং অভিনেত্রীর ভাইয়ের নাম ছিল সন্দীপ। মায়ের কাছ থেকেই গান এবং নাচের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। তবে পরবর্তী সময়ে বাণী দেবনাথের কাছ থেকেই তামিল নিয়েছিলেন তিনি।

ছোটবেলায় ছিল না পরিবারে ছিল না আর্থিক সবচ্ছলতা। বাবা অঞ্জন চৌধুরী তখনও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি অভিনয় জগতে। ১৯৮৪ সালে শত্রু ছবিটি হিট করার পর থেকেই আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটে অঞ্জন চৌধুরীর। বাড়তে থাকে নাম ডাক। জয়শ্রী শিক্ষা নিকেতন থেকে স্কুল জীবন সম্পন্ন করে নিউ আলিপুর কলেজ থেকে স্নাতক হন অভিনেত্রী। স্নাতক ডিগ্রি পাশ করার পরই মেয়েকে অভিনয় জগতে নিয়ে আসেন বাবা।

বাবার হাত ধরে সিনেমার জগতে এসেছিলেন চুমকি চৌধুরী

১৯৯০ সালে অঞ্জন চৌধুরীর পরিচালিত হীরক জয়ন্তী সিনেমার মাধ্যমে পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী। এরপর অভাগিনী ছবির মাধ্যমে দারুণ জনপ্রিয়তা পান তিনি। এরপর ইন্দ্রজিৎ, শ্রদ্ধাঞ্জলি, মায়া মমতা, সঙ্গীত, আব্বাজান, মেজো বউ, নাগ্ন নাগিনি নাচ রে, সেজ বউ প্রভৃতি অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

রীল থেকে রিয়েল সম্পর্ক, কেমন ছিল চুমকি চৌধুরী এবং লোকেশ ঘোষের বিবাহিত জীবন

অভিনয় জগতে এসেই তাঁর আলাপ হয় অভিনেতা লোকেশ ঘোষের সঙ্গে। একসঙ্গে কাজ করতে করতেই প্রেম। বাবা অঞ্জন চৌধুরী দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন লোকেশের। রীল জীবনের মতো সুখের হয়নি তাঁদের বাস্তব জীবনের সংসার। জানা গেছে মদ্য পান করে অভিনেত্রী গায়ে হাত তুলতেন লোকেশ। মেয়েকে এই পরিস্থিতিতে দেখে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন বাবা অঞ্জন চৌধুরী। বিচ্ছেদ ঘটে চুমকি চৌধুরী এবং লোকেশের। বিচ্ছেদের পর থেকেই লোকেশ যেমন সিনেমার পর্দা থেকে হারিয়ে যান তেমনই পর্দায় উপস্থিতি কমতে থাকে চুমকি চৌধুরীরও। বাবার ছবি ছাড়া অন্য পরিচালকদের ছবিতেও সেইভাবে কাজ করা হয়ে ওঠেনি চুমকির।

মা এবং ভাইকে হারিয়ে চুমকি চৌধুরী ডুবে গিয়েছিলেন মানসিক অবসাদে

বিয়ের পর সিনেমার জগৎ থেকে হারিয়ে যায় চুমকি। এরপর যাত্রা এবং স্টেজ শোও করেছেন অনেক। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে একপ্রকার একা হয়ে যায় চুমকি চৌধুরী। ২০০৭ সালে প্রয়াত হন বাবা অঞ্জন চৌধুরী। ২০২২ সালে অভিনেত্রী হারিয়েছেন মাকেও। গতবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে অকাল প্রয়াণ ঘটে অভিনেত্রীর ভাইয়ের। মা এবং ভাইয়ের চলে যাওয়ার খুব মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলেন চুমকি। তবে জীবন তো কারোর জন্য থেমে থাকে না তাই আবারও অভিনয় জগতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন চুমকি। বর্তমানে সান বাংলার দ্বিতীয় বসন্ত ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন চুমকি চৌধুরী। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে স্টার জলসার রোশনাই ধারাবাহিকেও উভিনয় করতে চলেছেন তিনি। আপনাদের অভিনেত্রীকে কেমন লাগে?