১৯৪৪ সালের ৫ জুলাই জামশেদপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই চলচ্চিত্র জগতে আগমন ঘটেছিল তার। সেই থেকেই অভিনয় তার অভিনয় জগতের পথ চলা আরও রয়েছে অব্যাহত। বাংলা সিনেমার পর্দা থেকে ধারাবাহিক, তার অভিনয় বরাবর মন জয় করেছে আপামর বাঙালি দর্শকদের। একসময় বাংলা সিনেমার দাপুটে খলনায়কদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অভিনেতা দীপঙ্কর দে (Deepankar De)।
বিজ্ঞাপন সংস্থায় কর্মরত দীপঙ্কর দে তখন অভিনয় করতেন অফিসে এবং ক্লাবের ছোটখাটো নাটকে। সেইটুকু অভিজ্ঞতা এবং অনেকটা সাহস সঞ্চয় করেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন সতিজিৎ রায়ের বাসভবনের দরজায়। সেখানে পৌঁছতেই সত্যজিৎ রায় কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েই তাকে চলে যেতে বসেছিলেন। কেন? তার কারণ সীমাবদ্ধ সিনেমার কাস্টিংয়ের জন্য তাকে বা তার বন্ধুদের পছন্দ করেননি সত্যজিৎ রায়। সকলেই পিছনে সরে গেলেও রিজেকশন মানতে পারেননি দীপঙ্কর দে। হাজার হোক অনেক কষ্টে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তাছাড়াও অনেকটা সাহস করে, আশা নিয়ে তিনি এসেছিলেন তাই এত সহজে হার মানতে চাননি তিনি।
কিভাবে শুরু হয়েছিল দীপঙ্কর দের অভিনয়ের যাত্রা?
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে পায়চারি করছিলেন পরিচালকের বাড়ির নিচে। তারপর কি মনে হতেই তিনি চলে গেলেন ওপরে। দরজা খুলে দিলেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। যদিও তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন সীমাবদ্ধ সিনেমার সমস্ত চরিত্রের কাস্টিং হয়ে গেলে ইতিমধ্যেই। তবুও পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে যায় দীপঙ্কর দে। দীপঙ্কর দের সঙ্গে কথা বলে একটি ছোট চরিত্র অফার করেন সত্যজিৎ রায়। নবাগতা দীপঙ্কর দে তখন যেন হাতে চাঁদ পেলেন। এরপরই সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ১৯৭১ সালে সীমাবদ্ধ ছবির হাত ধরেই অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন নবাগতা দীপঙ্কর দে। বরুণ চন্দ্রর সহকারীর ভূমিকায় কাজ করেছিলেন তিনি।
কোন কোন সিনেমায় এবং ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন দীপঙ্কর দে?
সীমাবদ্ধর পর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জন অরণ্য, বাঞ্চারামের বাগান, আকালের সন্ধানে, সুবর্ণ, পরমা, গোলক সহ একাধিক সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন নায়ক এবং সহ অভিনেতা হিসেবে। দীপঙ্কর দে অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে অমরকন্টক, শেষ বিচার, গণ শত্রু, শাখা প্রশাখা, আগন্তুক, উনিশে এপ্রিল, সেদিন চৈত্র মাস, শত্রু মিত্র, সিঁথির সিঁদুর, একাই একশো, পাপী, উৎসব, তিতলি, আবহমান সহ অসংখ্য ছবি। তাছাড়াও বয়সকালে সর্বজয়া, খুকুমণি হোম ডেলিভারি, ভোজ গোবিন্দ সহ একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি।
কিভাবে শুরু হয়েছিল দীপঙ্কর দে এবং দোলন রায়ের প্রেমালাপ?
কেরিয়ারের শেষেই খল নায়কের চরিত্রে সরে আসেন তিনি। উৎপল দত্তের প্রয়াণের পর খলনায়কের ভূমিকায় যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল তা অনেকাংশই তিনি পূরণ করেছিলেন তখন। পর পর বহু সিনেমায় দাপিয়ে খলনায়কের ভূমিকায় কাজ করছেন তিনি। সিনেমার পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন ধারাবাহিকে। সাদা কালো হোক বা রঙিন দীপঙ্কর বাবু সর্বত্রই অপ্রতিরুদ্ধ। আর তার সঙ্গে চলছে নাটক। বিদেশে নাটক করতে গিয়েই তার আলাপ হয় অভিনেত্রী দোলন রায়ের সঙ্গে। যদিও রবি ঘোষের নাট্য দলের সূত্রে আগে থেকেই পরিচয় ছিল তাদের। বার্তালাপ গড়িয়ে রূপ নেয় প্রেমের। তবে বয়সের বিরাট ব্যবধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ভালোবাসায়। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় অভিনেতার। নব্বইয়ের দশকে মেয়ের বিয়েও দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: মিঠিঝোরায় এবার বাক্স রহস্য! নব দম্পতি রাই- অনির্বাণের গিফ্টের বাক্সের ভিতর কী দেখে চমকে উঠল অনির্বাণ? শৌর্য্যর ষড়যন্ত্র?
কিভাবে বিয়ে হয়েছিল দীপঙ্কর দে এবং দোলন রায়ের?
অভিনেত্রীর মতে, মন্দিরে গিয়ে আগেই বিয়ে সেরে নিয়েছিলেন তারা। অভিনেতার বিচ্ছেদের পর আইনি মতে ফের বিয়ে করেন দুজনে। বয়সের বিরাট ব্যবধানের কারণে তাদের শুনতে হয়েছে নানান কটূক্তি। কিন্তু তাতেও একেবারেই কর্ণপাত করেননি তারা। সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এঁকে অপরের হাত ধরেছেন দুজনে। একসঙ্গে বেশ সুখেই আছেন দুজনে। এখনও একভাবে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন দীপঙ্কর দে। বর্তমানে স্টার জলসার বঁধুয়া ধারাবাহিকে তাকে দেখছে দর্শক। নিজের শেষ নিশ্বাস অব্দি অভিনয় চালিয়ে যাওয়া আসা রাখেন বর্ষীয়ান অভিনেতা দীপঙ্কর দে।