কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বদলে যাচ্ছে অভিনয়ের সংজ্ঞা! আর লাগবে না নায়ক-নায়িকা, ধারাবাহিক এবার হবে A-I নির্ভর

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রতিটি ক্ষেত্রে তার শক্তিশালী উপস্থিতি দেখাচ্ছে। প্রযুক্তির এই উন্নতি মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বিনোদন জগতেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে ফ্যাশন শো, বিজ্ঞাপন এবং চলচ্চিত্র শিল্পে AI-এর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এবার ধারাবাহিকেও এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।

এবার থেকে কি তবে আর ধারাবাহিকে নায়ক-নায়িকার প্রয়োজন হবে না? আসলে জনপ্রিয় চ্যানেল জি টিভিতে সম্প্রচারিত ‘হামারা পরিবার’ শোটি তার অভিনব উপস্থাপনার জন্য বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে অভিনয় ও চিত্রনাট্যকে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে।

এই বিশেষ ধারাবাহিকের শুটিং প্রক্রিয়াও প্রচলিত পদ্ধতির থেকে একেবারেই ভিন্ন। সাধারণত অভিনয় শিল্পীদের দীর্ঘক্ষণ ক্যামেরার সামনে থাকতে হয়, সংলাপ ও অভিব্যক্তি বারবার পরিবর্তন করতে হয়। তবে এই AI-ভিত্তিক শোতে এসব ঝামেলা অনেকটাই কমে গেছে। ‘জিন্দাবাদ স্টুডিও’র অন্যতম কর্ণধার শতরূপা দাস জানালেন, “এই শোয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত অভিনয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। অভিনেতাদের মুখের অভিব্যক্তি বা সংলাপ পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে রিহার্সাল করতে হয় না। এমনকি জটিল অ্যাকশন দৃশ্যও AI-এর সাহায্যে সহজেই তৈরি করা যায়।” শুধু তাই নয়, বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও ঐতিহাসিক চরিত্রদের ডিজিটাল মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করাও সম্ভব হচ্ছে।

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই প্রযুক্তি কি অভিনয়ের মৌলিকতা নষ্ট করছে? এ প্রসঙ্গে শতরূপা দাস বলেন, “AI অভিনয়ের দক্ষতা কেড়ে নিতে পারবে না। বরং, এটি অভিনেতাদের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিচ্ছে। যাঁদের স্বাভাবিক অভিনয়শৈলী রয়েছে, তাঁদের দক্ষতা এই প্রযুক্তি আরও উন্নতভাবে উপস্থাপন করতে পারবে। বলিউডে ইতিমধ্যেই এই শো জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তাই দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পেতে বেশি সময় লাগবে না।” অভিনয়ের প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন এলেও দর্শকের বিনোদন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

শুধু হিন্দি ধারাবাহিকেই সীমাবদ্ধ না থেকে এবার বাংলাতেও এই প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে শতরূপার। তিনি বলেন, “আমি একজন বাঙালি, তাই বাংলায় কাজ না করলে আমার কাজের পূর্ণতা আসবে না। ইতিমধ্যেই কলকাতায় আসার পরিকল্পনা করেছি এবং শীঘ্রই AI-ভিত্তিক বাংলা কনটেন্ট তৈরির কাজ শুরু করব।” বাংলা বিনোদন জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ হলে সেটি যে দর্শকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে, তা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুনঃ ‘সময়ের আগে আর ভাগ্যের চেয়ে অধিক কেউ কোনদিন কিচ্ছু পাবেনা! আমিও পাইনি’ অকপট টোটা

সারা বিশ্বেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, আর বিনোদন জগতও এর ব্যতিক্রম নয়। AI-ভিত্তিক অভিনয় কি আদৌ মানুষের আবেগ ও সংবেদনশীলতাকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে? নাকি এটি শুধুমাত্র প্রযুক্তির এক নতুন দিক হয়ে থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে পরিবর্তনের এই ঢেউ থেকে বাংলা বিনোদন জগতও যে পিছিয়ে থাকবে না, তা নিশ্চিত করলেন শতরূপা দাসের মতো প্রযুক্তি ও শিল্পপ্রেমীরা।