টলিউডের চেনা মুখ হোক বা সদ্য আলোচনায় আসা কেউ—২০২৫ সাল যেন বিচ্ছেদের বছর বললেই চলে! তবে তালিকায় নতুন সংযোজন যে এইভাবে আসবেন, তা কল্পনাও করেননি নেটিজেনরা। নৃত্যশিল্পী ‘পৃথা চক্রবর্তী’ (Preetha Chakraborty) সম্প্রতি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে এমন এক পোস্ট দিয়ে বসেন, যা দেখে রীতিমতো চমকে যায় নেট দুনিয়া। তিনি জানান, ১০ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টানতে চলেছেন তিনি এবং অভিনেতা স্বামী ‘সুদীপ মুখোপাধ্যায়’ (Sudip Mukherjee)।
অথচ, কয়েকদিন আগেও তাঁদের ‘চিরসখা’ সম্পর্কের কথা ফলাও করে তুলে ধরছিলেন সমাজমাধ্যমে! এহেন পোস্ট আসতেই শনিবার বিকেলে সুদীপ পত্নী নেটিজেনদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। নতুন প্রজন্মের ‘লিমিট ব্রেকার’ বোধহয় এখন পৃথারা! সোশ্যাল মিডিয়ার লাইমলাইটে থাকার জন্য আজকাল মানুষ কতদূর যেতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ এখন এই ‘পৃথা চক্রবর্তী’ বলছেন অনেকেই। “হিজ নিউ ওম্যান ওয়াজ নেভার নিউ, ইউ জাস্ট নেভার নিউ” — এই স্ট্যাটাস যেন আগুনে ঘি ঢালল কালকের পোস্টের উপর।
আর তাতেই রোষের মুখে পড়তে হল লক্ষ লক্ষ নেটিজেনের। মজা করতে গিয়ে এতটাই সেন্স হারালেন যে ‘লিগ্যালি ডিভোর্সড’ নামের প্র্যাঙ্ক করে বসলেন স্বামী সুদীপকে নিয়ে! নেটিজেরা বলছেন, “এই ‘ডিভোর্স প্র্যাঙ্ক’ সত্যিই নিন্দনীয়, কারণ ডিভোর্স কোনো ফান টপিক নয় — এটা একটা মানুষের জীবনের ভেঙে পড়ার দুর্ঘটনা”, “এটা একটা জঘন্য প্র্যাঙ্ক, এরকম পোস্ট করে কে ভাইরাল হতে চায়?” — মানুষজনের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়ার এমন মরিয়া চেষ্টার মাঝে কোথায় যেন মানবিকতার মৃত্যু ঘটছে!”
কেউ তো সরাসরি মন্তব্য করেছেন, “এগুলো খুব সেনসিটিভ জিনিস, এগুলো নিয়ে কেউ ফান করে না।” পৃথার এই ‘ফান পোস্ট’ দেখে কেউ কেউ তো সোজাসুজি ‘সাইকো’ বলতেও পিছপা হননি। আবার কেউ কেউ বলছেন, “এইসব করতে করতে একদিন সত্যি সত্যি হয়ে যাবে…।” কিছু মানুষরা লিখেছেন, “ব্যাড জোক… যাদের জীবনে সত্যিই সেপারেশন আসে, তারাই বোঝেন মানসিক অবস্থাটা কেমন হয়। জোক না বলে একে তো একেবারে সামাজিক অশ্লীলতাই বলা চলে।”
একদিকে যেমন উত্তপ্ত নেটদুনিয়া, অন্যদিকে পৃথার চরম নির্লজ্জ জাস্টিফিকেশন — “ইট’স জাস্ট এ ফান পোস্ট, টেক ইট ইজি গাইস”! সিরিয়াল, সিনেমা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া যেটাই হোক না কেন, সবকিছুরই একটা সীমা থাকা উচিত। প্রীতার মতো পাবলিক ফিগাররা যখন নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে এইরকম ‘জঘন্য কনটেন্ট’ বানান, তখন তাঁদের ফলো করা মানুষজনদের মানসিকতাও আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে সেই ধাঁচেই।
আসলে সুদীপ-পৃথার প্রেমের শুরু থেকেই তা ছিল ‘ফেসবুক ফেম’ নির্ভর। বয়সে ২৫ বছরের ফারাক থাকা সত্ত্বেও, ভালবাসাকে সামনে রেখে তাঁরা এক হলেন, সংসার করলেন, দুই ছেলেও আছে তাঁদের। কিন্তু এখন যেভাবে নাটকীয়ভাবে ‘বন্ধুত্ব’ দিয়ে সম্পর্কের সমাপ্তি টানার ঘোষণা এল, তাতে প্রশ্ন উঠছে—এটা বিচ্ছেদ না কি ব্র্যান্ডিং! বহুদিন ধরেই টেলিভিশনে সক্রিয় সুদীপ, তবে শোনা যাচ্ছে সংসারেই ঝামেলা চলছিল।
আরও পড়ুনঃ মধ্যরাতে পার্টি করে গাড়িতে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণাকে নিয়ে পরিচালক, ঠাকুরপুকুরে গাড়ির ধাক্কায় আহত ৮! তদন্তে উঠে এল আরিয়ানের নাম
সেই সমস্যার ‘সমাধান’ হিসাবে বিচ্ছেদের নাটক কি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ার হাতিয়ার? শেষ কথা একটাই— জনপ্রিয়তার পেছনে ছোটার নেশায় যদি আপনি আপনার চরিত্র, সম্পর্ক আর সামাজিক দায়িত্ব ভুলে যান, তাহলে ট্রোলের থেকেও বড় কিছু আপনার প্রাপ্য। পৃথা চক্রবর্তীর এই ফান-প্র্যাঙ্ক যেন ভবিষ্যতে সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য একটি ‘ডিজিটাল ওয়ার্নিং’ হয়ে থাকে। ‘ভিউস’ আর ‘রিয়্যাকশন’-এর নেশায় মানুষ নিজেকে কোথায় নামিয়ে ফেলছে— সেটাই আজকের আসল ট্র্যাজেডি!