২০২৪ সালের অগস্ট মাসে গোটা বাংলা সাক্ষী থেকেছে এক নারকীয় হত্যালীলার! হাসপাতালের কর্মকর্তা ও ছাত্র-ছাত্রীদের ষড়যন্ত্রে পৈশাচিক ধর্ষণ ও খুনে, আরজি কর হাসপাতালে (R G Kar Medical College) এক তরুণীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাস্তায় নেমে এসেছিলেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসা ছাত্র-ছাত্রী, নাগরিক সমাজ, এমনকি তারকারাও। “উই ওয়ান্ট জাস্টিস” (We Want Justice) ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল শহর। জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সেই দিন সমগ্র ভারতবর্ষ দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল।
আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল রাজ্য ছড়িয়ে দেশ জুড়ে। সেই সময় অনেক টলিউড সেলেবও সামাজিক সচেতনতার বার্তা নিয়ে শামিল হন প্রতিবাদে। কারও মুখে ছিল ধিক্কার, ছিল চোখের জল, কেউ আবার রাস্তায় বসে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে সামিল হয়েছিলেন। দর্শকের চোখে তাঁরা তখন যেন হয়ে উঠেছিলেন বাস্তব জীবনের নায়ক। এই আন্দোলনে জেরে টলিপাড়ায় বহু অভিনেতা অভিনেত্রীরা নাকি কাজ পর্যন্ত হারিয়েছে বলে শোনা যায়। তবে একবছর পর সেই আন্দোলন ঘিরে উঠে এল বিস্ফোরক অভিযোগ।
খোদ টলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক-অভিনেতা অরিন্দম শীল একটি সাক্ষাৎকারে ফাঁস করলেন, ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য কিছু তারকাকে নাকি পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল! কেউ নেন মোবাইল ফোন, কেউ চেয়েছিলেন সরাসরি টাকা! এই দাবিতে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে টলিপাড়ায়। যদিও তিনি কোনো নির্দিষ্ট নাম বলেননি তিনি, তবুও তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অরিন্দমের কথায়, আন্দোলনের নামে এই ‘অভিনয়’ অত্যন্ত লজ্জাজনক ও নৈতিকতার বিরোধী।
অভিনেতার বক্তব্যে পরিষ্কার ক্ষোভ ও হতাশা। তাঁর মতে, সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে নয়, বরং ব্যক্তিগত লাভের আশায় কেউ কেউ এই আন্দোলনের মুখ হয়েছিলেন। এমনকি তিনি এটাও বলেন, আজ তারাই নিজেদের বৃত্তের মধ্যে এই গোপন তথ্য ফাঁস করছেন। অর্থাৎ, যারা অর্থ বা উপহারের বিনিময়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, আজ তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহল থেকেই ফাঁস হচ্ছে সেই ঘটনা। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মানুষের চরিত্রের যে কতটা অবক্ষয় হতে পারে, তা এই ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।
এছাড়াও, অরিন্দম শীল এদিন নিজের নামে ওঠা কিছু হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে সোজাসাপটা উত্তর দিয়ে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! তাঁর মতে, ইন্ডাস্ট্রির একটা বড়ো সত্য হল—এখানে কেউ কারও বন্ধু নয়। সহানুভূতির মুখোশ পরে অনেকে চলেন, কিন্তু ভিতরে থাকে শুধুই স্বার্থ। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি নিজেকে আজও দূরে রাখতে চান ফাঁপা সম্পর্কের জালে জড়িয়ে পড়া থেকে।
আরও পড়ুনঃ একসময় রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন, চোখের সামনে মাকে মার খেতে দেখেছেন,—অন্ধকার পেরিয়ে আজ আলোয় ফুলকি’র ধানু! অভিনেত্রীর সংগ্রামের গল্প জানলে চোখে জল আসবে!
অরিন্দম শীলের এই মন্তব্য সামনে আসতেই সমাজ মাধ্যমে শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি আন্দোলনের মতন পবিত্রতা জিনিসও এখন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে? কেউ কেউ আবার সেলেবদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। যদিও অরিন্দম কোনও নাম প্রকাশ করেননি, তবুও ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরে এই ধরনের তথাকথিত পেইড অ্যাক্টিভিজমের ঘটনা সত্যিই যদি ঘটে থাকে, তাহলে তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।