“প্রত্যেককে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ট্যাক্সের টাকায় নয়, নেতাদের সম্পত্তি থেকে।”— এসএসসি দুর্নীতি ও চাকরি বাতিল নিয়ে বি’স্ফো’রক চন্দন সেন!

এক বছর আগে হাই কোর্টের রায়ে বাতিল হয়েছিল ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি, যার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। মুখ্যমন্ত্রী তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন, কোনও চাকরি খেতে দেবেন না। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টও হাই কোর্টের রায়কে মেনে নিয়েছে, ফলে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের গোটা প্যানেলই বাতিল হয়ে গেছে। চাকরি জীবনের সমস্ত বেতন ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এই নিয়ে অনেক শিক্ষকেরা আন্দোলনের পথে হাঁটছেন।

এবার রাজ্য সরকারের জন্য এটি একটি বড়সড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শাসক দলের অন্দরেই বিভাজন তৈরি হয়েছে। কেউ বলছেন, এতে সরকারের ভাবমূর্তি আরও কলঙ্কিত হল, আবার কেউ আশাবাদী—নতুন নিয়োগের পরীক্ষা হলে মানুষের ধারণা বদলাবে। তবে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই এই রায়কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ফলে সামনে নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দান আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

এবার এই পরিস্থিতি নিয়ে সরব হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ‘চন্দন সেন'(Chandan Sen)। ১৯৭৭ সালে থিয়েটার আর্টিস্ট হিসাবে অভিনয় শুরু করেন। এরপর চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন বহু ছবি ও ধারাবাহিকে। এদিন এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের অভিনেতা রাজ্যের এই পরিস্থতি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একমাত্র সমাধান বলছি, আর কোনও সমাধান নেই। যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে তাঁদেরকে যত লোক টাকা খেয়েছে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ হিসেব করে, প্রত্যেককে দুই কোটি করে টাকা দিতে হবে।

এই কথা আমি আগেও বলেছি, আজকেও আবার বলছি।” এরই সাথে অভিনেতা আরও বলেন, “এইটুকু টাকা দেওয়া ওদের পক্ষে কোনও ব্যাপার নয়, ভারতবর্ষের দ্বিতীয় ধনী রাজনৈতিক দল ওরা। ওদের কাছে এই টাকা হাতের ময়লা। কিন্তু সেই টাকা রাজকোষ দিয়ে দিলে হবে না! দিতে হবে সব নেতা মন্ত্রীদের সম্পত্তির থেকে। আমার, আপনার ট্যাক্সের টাকা দিয়ে দিলে হবে না।” অভিনেতা এর সাথেই আরও বলেন, “এছাড়া আর কোনও পথ দেখছিনা। এখন যে পথটা পড়ে আছে, সেটা অত্যন্ত কঠিন।

ধরুন আমাকে সাত বছর আগের একটা সিনেমার অভিনয় কেউ হুবহু নকল করতে বললো, আমি কি পারব? হয়ত খুব ভালো হবে, নাহয় একদম খারাপ, একই রকম করা কখনোই সম্ভব নয়। এবার যে বলা হচ্ছে আবার পরীক্ষার কথা, সেখানেও কিন্তু বিষয়টা একই।” চাকরিহারা শিক্ষকদের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “শরীর অনেক সময় অনেক কিছু মেনে নেয় কিন্তু মাথায় হাজার দুশ্চিন্তা থাকলে কিছুই ঠিক রাখা যায়না।”

আরও পড়ুনঃ বাবা-মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন, আমি ওদের সব স্বপ্ন পূরণ করব! জীবনে পরিশ্রমই শেষ কথা, তবেই আসবে সাফল্য! অকপট দিব্যজ্যোতি দত্ত

তিনি আরও যোগ করেছেন রোদে গরমে যেসব মানুষ আন্দোলন করছেন তাঁদের বেশিরভাগেরই সংসারের দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং সেই সব চিন্তা নিতে নিতেই মানুষগুলি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এরা হয়তো শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হয়েছিলেন কিন্তু জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই করতে হতো। লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে নির্বাচন, সর্বত্রই তাঁদের দিয়ে বিনা বেতনে খাটানো হতো। আর এইসব যে ভাতা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে এগুলো সরকারের দুর্নীতির টাকার অংশ।”

You cannot copy content of this page